২৮ মে ২০২২, শনিবার, ১০:৪১

দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া ছুটছেই

জীবন চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে

দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া ছুটছেই। কখনো তেল, কখনো পেঁয়াজ আবার কখনো সবজি। একের পর এক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েই যাচ্ছে। সম্প্রতি আটা ও ময়দার দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় সব ধরনের বেকারি পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। জুন মাসের শুরুতে সব ধরনের বেকারি পণ্যে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ১০ টাকার বিস্কুট, কেক বা রুটি ১৫ টাকায় বিক্রি করা হবে। এ ছাড়াও সকল প্রকার বিস্কুট, রুটি, কেকসহ বেকারী পণ্যের দাম বাড়ানো হবে। এছাড়া আগামী মাসের শুরুতে নতুন বাজেট প্রস্তাব সংসদে উত্থাপন করা হবে। এই বাজেটকে কেন্দ্র করেও বেশকিছু পণ্যের দাম বাড়ানো হবে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। সবমিলিয়ে অনেকগুলো পণ্যের দাম বাড়ায় মানুষের জীবন চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। অবিলম্বে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে ভোক্তারা।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাজারগুলোতে দেখা গেছে, বিপণনকারী কোম্পানিগুলো আটার দুই কেজির প্যাকেটের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে ১০৮ থেকে ১১৫ টাকা, যা আগের চেয়ে ১২ থেকে ১৭ টাকা বেশি। এ হিসাবে প্রতি কেজি আটার দাম বেড়েছে ৬ থেকে সাড়ে ৮ টাকা। বাজারে খোলা আটার কেজি ৫০ টাকার আশপাশে এবং বাজারভেদে খোলা ময়দা ৬০ থেকে ৬৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

টিসিবির হিসাবে, এক বছরে আটার দাম ৪০ শতাংশ বেড়েছে। আর খোলা ও প্যাকেটজাত ময়দার দাম বেড়েছে ৪৯ থেকে ৬৬ শতাংশ। অবশ্য টিসিবি যে দর উল্লেখ করেছে, তা বাজারের নতুন দামের চেয়ে কম। কোম্পানিগুলো আটার দাম বৃদ্ধি করেছে দেশে গমের দাম বেড়ে যাওয়ার পর। ভারত গত ১৪ মে নিজেদের বাজার সামাল দিতে গম রফতানি বন্ধ ঘোষণা করে। এরপরই বাংলাদেশে আরেক দফা দাম বেড়ে যায়। তবে ভারত বলেছে, প্রতিবেশীরা গম পাবে। বাংলাদেশের খাদ্য মন্ত্রণালয়ও বলছে, তারা ভারত থেকে গম আমদানি করতে পারবে।

গত সপ্তাহের মতো প্রতি লিটার সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। পাম অয়েলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ থেকে ২০০ টাকা। আর বোতলের পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯৮০ থেকে ৯৮৫ টাকা।

চলতি সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে রসুনের দাম। ৯০ টাকা কেজি দরের আমদানি করা রসুন গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ১৪০ টাকা কেজি দরে। এখন সেই রসুন ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজি দরে। টিসিবির তথ্য বলছে, এখন থেকে তিন সপ্তাহ আগে অর্থাৎ ১২ মে’ র ৫০ টাকা কেজি রসুন ১৩ মে বিক্রি হয় ৮০ টাকা কেজি দরে। সরকারি হিসাবেই ওই সপ্তাহে রসুনের কেজিতে দাম বাড়ে প্রায় ৩৯ শতাংশ, বা ৩০ টাকা। পরের সপ্তাহে দেশি রসুনের দাম বাড়ে আরও ১৬ শতাংশ। অর্থাৎ ৮০ টাকা কেজি রসুন গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ৯০ টাকা কেজি দরে। এখন সেই রসুন ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে ১২০ টাকা দিয়ে। গত সপ্তাহের ২৫০ টাকা কেজি দরের দেশি শুকনা মরিচের দাম বেড়ে হয়েছে ২৮০ টাকা।

অর্থাৎ কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা। পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে আবারও বাড়তে শুরু করেছে। গত সপ্তাহে যে পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, এখন সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। টিসিবির হিসাবে গত এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১১ শতাংশের মতো। এছাড়া ১৯০ টাকা কেজি হলুদ এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে।

বাজারে ফার্মের মুরগির লাল ডিমের দাম সাধারণত হালি ৩০ টাকার আশপাশে থাকে। এখন সেই ডিমের দাম প্রতি হালি ৪২ থেকে ৪৩ টাকা। টিসিবি বলছে, এক বছর আগের তুলনায় এখন ডিমের দর ৪০ শতাংশ বেশি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক সপ্তাহে ডিমের দাম নতুন করে ডজনে ১৫ টাকা বেড়েছে।

সবজির বাজারে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে গাজর। ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি গাজর বিক্রি করছেন ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে গাজরের কেজি ছিল ৮০ থেকে ১২০ টাকা। তবে বরবটি ও কাঁকরোলের দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বরবটির দাম কমে এখন ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁকরোলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা। বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে করলা। কাঁচা পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এছাড়া পটলের কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ঢেঁড়সের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ঝিঙে ও চিচিঙ্গার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে।

সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে মুরগির দাম কমেছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা এবং পাকিস্তানি কক বা সোনালী মুরগির দাম ৩০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬৫ টাকা। আর ঈদের আগে ছিল ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা। অর্থাৎ ঈদের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে ব্রয়লার মুরগির দাম কমছে। ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি কমেছে সোনালী মুরগির দাম। শুক্রবার সোনালী মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ থেকে ৩১০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকা।

রমযান মাসে গরুর গোশত প্রতি কেজি ৭০০ টাকা করে বিক্রি হয়। এরপর আর দাম কমেনি। এখনও গরুর গোশত প্রতি কেজি ৭০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আর খাসির গোশত বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি।

মাছের বাজারে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের দামে তেমন কোনও পরিবর্তন আসেনি। রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ থেকে ১৬০০ টাকা এবং ৫০০-৬০০ গ্রামের ইলিশের কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। তেলাপিয়া, পাঙাস মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। শিং মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৬০ টাকা, শোল মাছের কেজি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, কৈ মাছের কেজি ২০০ থেকে ২৩০ টাকা, পাবদা মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা।

https://dailysangram.com/post/490487