২৩ জানুয়ারি ২০২২, রবিবার, ৬:৪২

অনিয়মের কারণেই সড়কে দুর্ঘটনা

শুক্রবার সকালে রাজধানীর মাতুয়াইলে বাসের চাপায় সিএনজি অটোরিকশার তিন যাত্রীর মৃত্যুর কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেল- অনিয়মে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। আট লেনের এই মহাসড়কে অটোরিকশাটি যে স্থান দিয়ে ইউটার্ন নিচ্ছিল, সেখানে নিয়মানুযায়ী 'রাইট টার্ন লেন' ছিল না। সোজা রাস্তা হওয়ায় বিপরীত থেকে আসা বাস ট্রাফিক নিয়মে অগ্রাধিকার পাবে। কিন্তু বাস ও অটোরিকশার সংঘর্ষ এড়াতে কোনো ব্যবস্থা, গতিরোধক, সতর্কতা কিছুই ছিল না।

মাঘের শীতের সকাল ৭টায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। সে সময়ে হালকা কুয়াশাও ছিল। কিন্তু সিএনজি অটোরিকশা 'ফগলাইট' ব্যবহার করেনি। যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ সরকার দুর্ঘটনার কয়েক মিনিট পর ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তিনি জানান, মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে ঢাকামুখী তৃতীয় লেনে অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয় বাস। বাসটি কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ফিরছিল। অটোরিকশা মাতুয়াইল মা ও শিশু হাসপাতালের সামনে মহাসড়কের উত্তর পাশ থেকে ইউটার্ন নিয়ে ঢাকামুখী লেনে এসেছিল।

এই বর্ণনা জানানোর পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ সমকালকে বলেন, আট লেনের মহাসড়কে এমন অনিরাপদ ইউটার্ন থাকারই কথা নয়। ইউটার্ন নিতে যে 'রাইট টার্ন লেন' প্রয়োজন, তা ছিল না। অটোরিকশাটি বড় করে ইউটার্ন নিচ্ছিল। তার মানে হয়তো দ্রুতগতিতে টার্ন নিয়েছে। গতির কারণে দূরবর্তী লেনে চলে গেছে। বিপরীত দিক থেকে আসা বাসের গতি রোধের ব্যবস্থাই ছিল না। কোনো গাড়ি যদি ৮০ কিলোমিটার গতিতে চলে, তাহলে ব্রেক করার পরও দুই সেকেন্ডে ১৫০ থেকে ২০০ ফুট দূর পর্যন্ত যাবে। এ কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে বিস্তারিত তদন্তের পরই আসল কারণ উদ্ঘাটন সম্ভব হবে।

শুধু যাত্রাবাড়ীর এই দুর্ঘটনা নয়, অধিকাংশ দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর কারণ সড়কে অনিয়ম। ট্রাফিক নিয়ম ভেঙে জেল-জরিমানা বাড়িয়ে করা কড়া আইন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলন কিছুই কাজে আসছে না। করোনা সংক্রমণ রোধে ২০২১ সালে ৮৫ দিন যাত্রীবাহী যান চলাচলে নানা বাধানিষেধ থাকলেও পুলিশের তথ্যানুযায়ী, গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ হাজার ৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৮ সালে দুই হাজার ৬৩৫ জনের মৃত্যু হয়। তিন বছরের ব্যবধানে সড়কে মৃত্যু প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে! তবে সরকারি সংস্থাগুলোর হিসাবে ২০২১ সালে সড়কে মৃত্যু ছয় হাজারের বেশি।

দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান সমকালকে বলেন, অপরিকল্পিত ও অনিয়মতান্ত্রিক পরিবহন ব্যবস্থার ফলাফল হলো দুর্ঘটনা। সাধারণ বিজ্ঞান হলো, সারারাত গাড়ি চালানোর পর ভোর হলেও আলোর তারতম্যের কারণে মস্তিস্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এর কোনো রকম ব্যতিক্রম হওয়ার কারণ নেই। সেন্টমার্টিন পরিবহনের যে বাস অটোরিকশাকে চাপা দিয়েছে, তার চালক সারারাত বাস চালিয়েছিলেন। সূর্যোদয়ের ২০-২৫ মিনিটের মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন। অধিকাংশ দূরপাল্লার গাড়িতে দেখা যায়, সকাল ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে।

সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ পর্যন্ত নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ছিল ৩৬ লাখ ৯৬ হাজার ৩৬। ২০২১ সালের শেষ দিনে তা বেড়ে হয়েছে ৫০ লাখ ১৩ হাজার ৯০৮।

অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেছেন, যানবাহন যত বাড়বে, দুর্ঘটনা তত বাড়বে। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো, মোটরসাইকেলের মতো বিপজ্জনক বাহন বাড়ছে। জাপান শুধু মোটরসাইকেলের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দুর্ঘটনা ৫০ শতাংশ কমাতে সক্ষম হয়েছে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, তাদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, শীতের সকালে নছিমন, করিমন, ভটভটি, ইজিবাইকের মতো যানবাহনে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে।

https://www.samakal.com/todays-print-edition/tp-last-page/article/2201142663/