২০ জানুয়ারি ২০২২, বৃহস্পতিবার, ৩:০৫

লুটছে টাকা-পয়সা, কাড়ছে প্রাণ

রাজধানীতে বেড়েছে অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য

রাজধানীতে সম্প্রতি আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন পেশাজীবীর কেউ না কেউ তাদের খপ্পরে পড়ে খোয়াচ্ছেন টাকা-পয়সা ও জিনিসপত্র। এমনকি মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটছে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরাও রেহাই পাচ্ছেন না। গত রবিবার অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে এক এএসআই হাসপাতালে মারা গেছেন বলে জানানো হয়েছে।

অজ্ঞান পার্টিচক্রের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তৎপরতা তেমন দৃশ্যমান নেই বলে জানান ভুক্তভোগীরা। তবে পুলিশের দাবি, ভুক্তভোগীদের অনেকেই থানায় অভিযোগ করেন না। অভিযোগ না করায় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ারও তেমন সুযোগ থাকে না। প্রকৃত ভুক্তভোগীর পরিসংখ্যানও উঠে আসে না।

গত রবিবার (১৬ জানুয়ারি) অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়া মীর আ. হান্নান নামে পুলিশের এক এএসআইকে কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর এলাকা থেকে উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (মিটফোর্ড) ভর্তি করা হয়। রাত ৯টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি মো. আবু সালাম মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, হান্নান বিমানবন্দর এলাকায় বাংলাদেশ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) কর্মরত ছিলেন। দুপুরে বিমানবন্দর এলাকা থেকে বাসে করে তিনি কল্যাণপুর আসছিলেন। তবে বাসের মধ্যে অচেতন হওয়ায় তিনি সেখানে নামতে পারেননি। বাসটি শেষ স্টপেজ কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর এসে থামলে স্টাফরা সেখানে তাঁকে বাস থেকে নামিয়ে দেয়। খবর পেয়ে স্বজনরা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।

ওসি জানান, বাসের মধ্যে ওই পুলিশ কর্মকর্তা অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনটি পাওয়া গেলেও টাকা-পয়সা খোয়া গেছে। বাসটি এখনো শনাক্ত করা যায়নি। তবে বাসটি প্রজাপতি বা পরিস্থান পরিবহনের বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

এর আগে, ২ জানুয়ারি রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে এক দম্পতিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে রেলওয়ে থানা পুলিশ। তাঁদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুই দিন পর মারা যান মোকসেদ আলী মণ্ডল (৭০)।

গত ৬ জানুয়ারি দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর বনানী, মতিঝিল ও পোস্তগোলা ব্রিজ এলাকায় তিনজন অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন। তাঁদের ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এর আগের দিন রাতে মতিঝিলে কক্সবাজারগামী একটি বাস থেকে ওমানপ্রবাসী এক ব্যক্তিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তাঁকে অচেতন করে টাকা-পয়সা ও মোবাইল ফোন হাতিয়ে নিয়ে যায়। একই দিন শাহবাগে বারডেম হাসপাতালের সামনে থেকে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়া এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করে রমনা থানা পুলিশ। গত ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীর আজিমপুর থেকে দুই ব্যবসায়ীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তাঁদের কাছে থাকা এক লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে যায়।

২৭ ডিসেম্বর ঢামেক হাসপাতালে এক রোগীর স্বজনকে অজ্ঞান করে টাকা-পয়সা লুটে নেওয়া হয়। ২০ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জে যাওয়ার পথে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে ঢামেক হাসপাতালে লতিফ ব্যাপারী (৬০) নামে একজনের মৃত্যু হয়।

গত মঙ্গলবারও রাজধানীতে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন এক প্রবাসীসহ দুজন। গুলিস্তান থেকে মিজানুর রহমান (৫২) এবং পল্টন থেকে রহমত উল্লাহকে (৪৫) উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়।