২০ জানুয়ারি ২০২২, বৃহস্পতিবার, ১২:৪৭

শেষ প্রান্তে এসে সমীক্ষায় ৩০ কোটি টাকা খরচের প্রস্তাব

৬৪ জেলায় ছোট নদী খাল পুনঃখনন প্রকল্প

মেয়াদের শেষ প্রান্তে এসে সমীক্ষা কার্যক্রমে ২৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা খরচের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে ৬৪ জেলায় ছোট নদী খাল পুনঃখনন প্রকল্পে। এ ছাড়া বিভিন্ন সভার খরচ খাতে প্রাক্কলন প্রস্তাব করা হয়েছে এক কোটি ৬২ লাখ টাকা। আর প্রকল্প চলাকালেই একের পর এক বাড়ছে কাজের পরিধি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চাহিদার কারণেই নতুন করে কাজ যুক্ত করতে হচ্ছে। এ দিকে কাজের ক্ষেত্রে দ্বৈততা, বন্যা, করোনা ও জনগণের বাধার কারণে প্রকল্পের কাজ বাধাগ্রস্ত হয় বলে প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, প্রকল্পটির উদ্দেশ্য দেশের ৬৪ জেলার ছোট নদী, খাল ও জলাশয়গুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বছরব্যাপী সেচ সুবিধা প্রদান। দেড় লাখ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা। নদী, খাল ও জলাশয়গুলোর আনুমানিক ৬ লাখ হেক্টর এলাকায় পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা বাড়ানো। পুনঃখননের মাধ্যমে ছোট নদী, খাল ও জলাশয়গুলোকে পুনরুজ্জীবিত করা। এ জন্য নাব্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দুই হাজার কিলোমিটার নৌ চলাচল সহজ করার জন্য সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে দুই হাজার ২৭৯ কোটি ৫৪ লাখ ৬১ হাজার টাকা ব্যয়ে এক বছর দুই মাস মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর ৬৪ জেলায় ছোট নদী খাল পুনঃখনন প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার কথা ছিল। পরে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত উন্নীত করা হয়। আর ব্যয় কমিয়ে দুই হাজার ২৭১ কোটি ১৩ লাখ ৬৭ হাজার টাকায় আনা হয়। ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি ৭২ শতাংশ।

প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পর্কে জানা গেছে, মূল প্রকল্পে পুনঃখননের কাজ ছিল ৪৪৮টির। এর মধ্যে ৮৮টি ছোট নদী, ৩৫২টি খাল ও ৮টি জলাশয়। প্রথম সংশোধনীতে এ খননের কাজ বেড়ে দাঁড়ায় ৫১১টিতে। এখন সব মিলে ২২০টি বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬৬৮টি। যার মধ্যে ছোট নদী ১০৯টি, খাল ৫৩৩টি ও জলাশয় ১৫টি। এই পুনঃখনন কাজে খরচ ধরা হয়েছে দুই হাজার ২১৭ কোটি ৯৮ লাখ ৭১ হাজার টাকা। অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা উচ্ছেদ কাজে খরচ বাড়িয়ে ৪২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা থেকে দাঁড়ায় ৬৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া সম্ভাব্য সমীক্ষা এবং সার্ভে করা হবে।

খরচের হিসাবে দেখা যায়, এই পুনঃখনন কাজে খরচ প্রথমে ধরা হয় দুই হাজার ২২২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এখন কাজ বাড়লেও খরচ দুই হাজার ২১৭ কোটি ৯৮ লাখ ৭১ হাজার টাকা। সম্ভাব্য সমীক্ষায় খরচ প্রায় ২০ কোটি টাকা; যা তিন বছর পর এসে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। আর সার্ভে করতে খরচ ছিল ১৫ কোটি টাকা; যা ৭৫ লাখ টাকা কমিয়ে এখন ১৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।

এ দিকে পর্যালোচনা থেকে জানা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১৩টি প্যাকেজ অর্ধ ও অসমাপ্ত রেখেই বাদ দেয়া হয়। কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা দিয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, মিঠাপুকুর উপজেলার কাঠঘড়ি নদী খনন কাজটি নিয়ে বিএমডিএর সাথে দ্বৈততা ছিল। বাকি ১২টি কাজ স্থানীয় জনগণের বাধার মুখে বাদ দিতে হয়েছে।

এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক তারিক আবদুল্লাহ আল ফায়াজের সাথে গতকাল রাতে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, লম্বা সময় ধরে করোনা, ২০২০ সালের বন্যা এবং ১২ প্যাকেজে স্থানীয় জনগণের বাধা ও মামলার কারণে কাজটি পিছিয়ে গেছে। তা না হলে বর্ধিত সময়েই প্রকল্পটি সমাপ্ত হয়ে যেত। তিনি বলেন, দ্বিতীয় সংশোধন এখনো অনুমোদন করেনি পরিকল্পনা কমিশন। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। এখানে মাঠপর্যায় থেকে জনপ্রতিনিধিরা যে প্রস্তাবনা পাঠান সেগুলোকে আমরা কম্পাইল করে ডিপিপিতে যুক্ত করে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে পাঠাই। তারা সেটিকে যাচাই করে কতটা করা হবে, সেটি সুপারিশ করেন। সমীক্ষা কার্যক্রম প্রকল্প চলাকালে নেয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি পরবর্তী ধাপের জন্য। তিনি বলেন, গত নভেম্বর পর্যন্ত ১১.৫২ কোটি ঘনমিটার মাটি কাটা হয়েছে।

আইএমইডি বলছে, প্রকল্পের কাজ কেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমাপ্ত হচ্ছে না সেসব বিষয় আরো সুনির্দিষ্টভাবে সংশোধিত ডিপিপিতে উল্লেখ করা দরকার। প্রকল্পের লগফ্রেম, ইনপুট ও উদ্দেশ্যের বস্তুনিষ্ঠ যাচাই নির্দেশকগুলো যথাযথ হওয়া প্রয়োজন। সম্ভাব্য সমীক্ষা ১০ কোটি টাকা বৃদ্ধি যৌক্তিক নয়। পাশাপাশি ২০২৩ সালের জুনের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। আর কোনো সময় বাড়ানো হবে না।

 

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/637826