২০ জানুয়ারি ২০২২, বৃহস্পতিবার, ১২:৩৮

এক দিনে সাড়ে ৯ হাজার শনাক্ত

করোনা আক্রান্তের হার ২৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে

এক দিনে সারা দেশে ৩৭ হাজার ৮০০ নমুনা পরীক্ষা করে সাড়ে ৯ হাজার করোনা শনাক্ত হয়েছে। গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, নমুনা পরীক্ষার সাপেক্ষে গতকাল করোনার শনাক্তের হার ছিল ২৫.১১ শতাংশ এবং দেশে এক সপ্তাহের মধ্যে শনাক্তের হার বেড়েছে ২২৮.৪৮ শতাংশ। এই সময়ের মধ্যে মৃত্যুও বেড়েছে ১৮৫ শতাংশ। গত ১০ থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত এক সপ্তাহ ধরে এ হিসাব করা হয়েছে।

গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে থেকে মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। গত বছরের ১৩ আগস্টের পর দেশে গতকালই এক দিনে সর্বোচ্চ করোনা শনাক্ত হয়েছে। গত ডেল্টা ভাইরাসের শীর্ষ সংক্রমণের সময় ২৮ জুলাই এক দিনে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে এবার করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সর্বোচ্চ সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে ওমিক্রন সংক্রমণ। কারণ ওমিক্রন মৃদু বৈশিষ্ট্যের একটি ভাইরাস হলেও এর সংক্রমণ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি।

নতুন করে করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু হলেও মানুষের বিশাল একটি অংশের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি পালনে বেশ অনীহা রয়েছে। রাজধানী ঢাকার প্রায় অর্ধেক মানুষই বাইরে চলাফেরা করছে মাস্ক ছাড়াই। আর ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা শহর ও মফস্বলে শহরের মানুষের মধ্যে মাস্ক পরা মানুষের সংখ্যা হাতে গোনা দেখা যায় বলে বিভিন্ন এলাকার নয়া দিগন্তের সংবাদদাতারা জানিয়েছেন। মাস্ক পরায় আরো কড়াকড়ি আরোপ করার জন্য সচেতন মানুষের একটি অংশ দাবি তুলেছেন।

করোনা শনাক্ত বাড়ার সাথে সাথে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে ধীরে ধীরে যদিও গণমাধ্যমে ওমিক্রন নিয়ে ব্যাপক আলোচনার কারণে মানুষের মধ্যে ওমিক্রন নিয়ে আগের মতো ভীতি নেই। মানুষ মনে করছে, সংক্রমিত হলেও বড়জোর সর্দি-কাশি হতে পারে। এরচেয়ে বেশি কিছু হবে না। এ দিকে ওমিক্রন শুরুর পর থেকেই রাজধানী ঢাকায় সর্বোচ্চসংখ্যক করোনা শনাক্ত হচ্ছে। গতকালের রিপোর্টে যে সাড়ে ৯ হাজার করোনা শনাক্তের রিপোর্ট দেয়া হয়েছে এর মধ্যে ছয় হাজার ৪৮৮ জনই রাজধানীতে শনাক্ত হয়েছে। রাজধানী ঢাকা ছাড়া করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে দেশের ১২টি জেলা এবং মধ্যম ঝুঁকিতে দেশের ৩২ জেলা রয়েছে বলে সরকারিভাবে বলা হয়েছে। উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ১২টি জেলা হলোÑ ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, বগুড়া, দিনাজপুর, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি লালমনিরহাট ও পঞ্চগড় জেলা।

করোনা সংক্রমণের মধ্যম ঝুঁকির জেলাগুলো হলো- সিলেট, ফেনী, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী, কক্সবাজার, মৌলভীবাজার, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, শরীয়তপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, রংপুর, জামালপুর, নওগাঁ, ঝিনাইদহ, নাটোর, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বাগেরহাট, মাগুরা, নড়াইল, পটুয়াখালী, কুড়িগ্রাম, জয়পুরহাট, শেরপুর, ঝালকাঠি ও ঠাকুরগাঁও।

গত ১০ থেকে ১৬ জানুয়ারি এই এক সপ্তাহের শনাক্ত ও ঝুঁকি বিবেচনায় দেশের ৬৪ জেলার তুলনামূলক একটি অবস্থান প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ সময়ের মধ্যে পরীক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে ২৭.২০ শতাংশ এবং করোনা শনাক্তের হার বেড়েছে ২২৮.৪৮ শতাংশ। অপর দিকে মৃত্যু বৃদ্ধি পেয়েছে ১৮৫ শতাংশ।

উল্লেখ্য, গত ১০ জানুয়ারি দেশে করোনা শনাক্ত হয় দুই হাজার ১৩১ জন, ১১ জানুয়ারি দুই হাজার ৪৫৮ জন, ১২ জানুয়ারি ২ হাজার ৯১৬ জন, ১৩ জানুয়ারি তির হাজার ৩৫৯ জন, ১৪ জানুয়ারি চার হাজার ৩৭৮ জন, ১৫ জানুয়ারি তিন হাজার ৪৪৭ জন এবং ১৬ জানুয়ারি পাঁচ হাজার ২২২ জন করোনা শনাক্ত হয়। এ ছাড়া ১৭ জানুয়ারি ছয় হাজার ৬৭৬ জন, ১৮ জানুয়ারি আট হাজার ৪০৭ জন এবং ১৯ জানুয়ারি সাড়ে ৯ হাজার করোনা শনাক্ত হয়েছে।

আক্রান্তের আইসোলেশনে ১০ দিন : এদিকে কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি ৫৩তম সভায় কিছু পরামর্শ দিয়েছেন সরকার ও জনগণের উদ্দেশ্যে। গতকাল জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা: মো: সহিদুল্লা স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, কারো কোভিড-১৯ রোগীর লক্ষণ প্রকাশ পেলে তাকে প্রকাশের দিন থেকে পরবর্তী ১০ দিন আইসোলেশনে থাকতে হবে। এছাড়া কোভিড-১৯ নিশ্চিত রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন এমন ব্যক্তি যাদের কোনো উপসর্গ নেই তাদের কোয়ারেন্টিনের প্রয়োজন হবে না। তবে তাদেরকে টাইট মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া বিমানবন্দরসহ সব পোর্ট অব এন্ট্রিতে (প্রবেশপথে) সরকারি স্বাস্থ্য নির্দেশনা যথাযথভাবে পালনের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে নজরদারি বৃদ্ধির জন্য কমিটি সুপারিশ করা হয়েছে। সব সরকারি হাসপাতালে সার্বক্ষণিক কোভিড-১৯ ও নন- কোভিডসহ সব রোগীর জরুরি চিকিৎসা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়। কারিগরি পরামর্শক কমিটি, মন্ত্রিপরিষদ কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অংশীদের যেমন- পরিবহন মালিক সমিতি, দোকান মালিক সমিতি, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দসহ সবাইকে সম্পৃক্ত করে পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। জাতীয় পরামর্শক কমিটি জনগণকে মাস্ক পরিধান নিশ্চিতকরণে সরকারের পক্ষ থেকে সাধারণ জনগণকে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণের প্রস্তাব করেছে।
রেড জোনে রাজশাহী ও বগুড়া

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী ও বগুড়া জেলাকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ (রেড জোন) হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গতকাল বুধবার নিজস্ব ওয়েবসাইটে স্বাস্থ্য অধিদফতর এ তথ্য প্রকাশ করে। এ দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ও করোনা উপসর্গে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আরো দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল বুধবার সকাল ৮টার মধ্যে করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। করোনায় মারা যাওয়া রোগী রাজশাহীর বাসিন্দা। আর উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া রোগীর বাড়ি নওগাঁ। অধিদফতর সূত্র জানায়, রাজশাহী জেলায় ১০ থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত করোনা শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৭৮ ও বগুড়ায় ১১ দশমিক ৮৪। এ ছাড়া নওগাঁ, নাটোর, জয়পুরহাট ও সিরাজগঞ্জ জেলাকে মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সাতক্ষীরায় দুই দিনে উপসর্গে তিনজনের মৃত্যু

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, সাতক্ষীরায় গত দুই দিনে করোনা উপসর্গ নিয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ (সামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে জেলায় গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মোট ৮৮ জন এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন মোট ৭৭২ জন। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টসহ করোনার নানা উপসর্গ নিয়ে সম্প্রতি তারা সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ (সামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ জানুয়ারি তাদের মৃত্যু হয়। এ দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরায় নতুন করে দুইজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ সময় মোট ২৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ২৪ শতাংশ।
চট্টগ্রামে এক দিনে শনাক্ত ৯৮৯ জন

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন আরো ৯৮৯ জন। এ ছাড়া আক্রান্তদের ৮২৯ জন নগর এবং ১৬০ জন উপজেলার বাসিন্দা। এ সময় মারা গেছেন একজন। শনাক্তের হার ছুঁয়েছে ৩০.৯৮ শতাংশ। গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/637803