১৪ নভেম্বর ২০২১, রবিবার, ১২:০৫

বিশ্ববাজারের প্রভাবে আমদানি ব্যয় বেড়েছে

রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ছে

করোনা-পরবর্তী চাহিদার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। দেশের ভেতরেও পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। ফলে বেড়েছে আমদানি। একদিকে আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি ও অন্যদিকে পণ্যের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে আমদানি ব্যয়েও। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে আমদানি ব্যয়ের বড় অংশই মেটানো হচ্ছে। ফলে রিজার্ভের ওপর হঠাৎ করে চাপ বেড়ে গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম এবং বিদেশে লোকজনের যাতায়াতের কারণে যেভাবে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ বেড়েছে, সেভাবে আয় বাড়েনি। ফলে দেশের বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বেড়ে গিয়ে ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে। এতে হু-হু করে বাড়ছে ডলারের দাম। গত জুলাই থেকে এর দাম বৃদ্ধি অব্যাহত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ডলারের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। এক সপ্তাহ আগে ছিল ৮৫ টাকা ৬৫ পয়সা। এক সপ্তাহের ব্যবদানে বেড়েছে ১৫ পয়সা। গত বছরের ১০ নভেম্বর প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। গত এক বছরের ব্যবধানে ডলারের দাম বেড়েছে ১ টাকা। শতকরা হিসাবে বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ১৮ শতাংশ। সূত্র জানায়, দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় অংশই রপ্তানি ও রেমিট্যান্স থেকে। ২ শতাংশ আসে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান থেকে। করোনার কারণে ঋণপ্রবাহ বাড়ায় এটি এখন ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস রপ্তানি আয় বাড়লেও কমছে রেমিট্যান্স। ঋণপ্রবাহও এখন কমেছে। এদিকে আমদানি ব্যয়সহ বিদেশে যাওয়ার খরচ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের অক্টোবরে রপ্তানি আয় বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণে। এ হার আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ৬০ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি। গত বছরের একই সময়ে কমেছিল ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জুলাই অক্টোবরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ২২ দশমিক ৬২ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছিল ১ শতাংশের কম। গত সেপ্টেম্বরে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৫০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বরে বেড়েছিল ৭৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৪৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে কমেছিল সাড়ে ১১ শতাংশ।

গত অক্টোবরে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ২২ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছিল ২৮ শতাংশ। গত জুলাই অক্টোবরে রেমিট্যান্স কমেছে শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছিল ৪৩ শতাংশ। পরিমাণগত দিক থেকে রপ্তানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় বেশি। এছাড়া বিদেশে ভ্রমণ, চিকিৎসা ও শিক্ষার জন্য যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় এ খাতেও ডলারের খরচ বেড়েছে।

সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে গত জানুয়ারি থেকে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তি। করোনার সময়ে জ্বালানি তেলের দাম কমে সর্বনিু ব্যারেলপ্রতি ২০ ডলারে নেমে এসেছিল। এখন তা বেড়ে ৯০ ডলারে ওঠে। গত কয়েকদিনে তা কমে ৮৬ ডলারে নেমেছে। তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম ৫ ডলার থেকে বেড়ে ৩২ ডলারে উঠেছে। বৃদ্ধির হার ৫০০ শতাংশ। শিল্পের যন্ত্রপাতির দাম বেড়েছে ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ। শিল্পের কাঁচামালের দাম বেড়েছে ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশ। খাদ্য উপকরণের দামও বেড়েছে। সব মিলে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে।

গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪৫০৬ ডলার। এটি বেড়ে ৪৭০০ ডলারে উঠেছিল। এ রিজার্ভ দিয়ে গড়ে ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। আগে নয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ ছিল। আমদানি ব্যয় যেভাবে বাড়ছে তাতে আলোচ্য রিজার্ভ দিয়ে আগামী ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো কঠিন হবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/486896/