১৪ নভেম্বর ২০২১, রবিবার, ১২:০৩

সাতক্ষীরা সীমান্তের ওপারে ভারতে ১১ মাদক কারখানা

সাতক্ষীরা সীমান্তের ওপারে ভারতে পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলায় দুটি ইয়াবার কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। কারখানাটি সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে। এর মালিক ডিম্পল নামে এক ব্যক্তি। অপর একটি সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরে। কারখানাটির মালিক স্থানীয় আবদুল সামাদের ছেলে মো. আল আমিন ইসলাম (৩৫)। আরেকটি কারখানা একই সীমান্তের ৪০০ মিটারের মধ্যে। এই কারখানার মালিক স্থানীয় হজরত আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম (৩৫)। বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মতে ভারতে যে তিনটি ইয়াবা কারখানার সন্ধান মিলেছে তার দুটি পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার ও একটি উত্তর ২৪ পরগনা জেলায়। মিয়ানমার থেকে ইয়াবার কাঁচামাল ‘এমফিটামিন’ এনে এসব কারখানায় ইয়াবা তৈরি হয়। সংস্থাটি বলছে, এ তিন কারখানায় উৎপাদিত ইয়াবা বড়ি দুই বছর ধরে বাংলাদেশে আসছে। বাংলাদেশে পাচারের জন্যই কারখানাগুলোতে ইয়াবা তৈরি করা হয়। সাতক্ষীরা টু যশোর সীমান্ত মাদক পাচারের প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। ভারতের মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোকে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব তথ্য জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। গত ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ভারতের নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর মহাপরিচালক পর্যায়ে সপ্তম দ্বিপক্ষীয় ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনে এ অনুরোধ জানানো হয়। বৈঠকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জানায়, শুধু এ তিন কারখানা নয়, ভারতের কয়েকটি রাজ্য হয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা আসছে। এ কাজে ভারতীয় সমুদ্র পথকেও ব্যবহার করছে মাদক পাচারকারীরা।

বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন, বৈঠকে তিনটির সুনির্দিষ্ট তথ্য তুলে ধরা হলেও ইয়াবা কারখানার সংখ্যা আরও বেশি। গোয়েন্দা তথ্য হলো, পশ্চিমবঙ্গের বাইরে আসাম ও মেঘালয়ে ইয়াবার কারখানা রয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতের সীমান্তে ইয়াবার ১১টি কারখানার বিষয়ে তাঁরা গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছেন। তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

সূত্র বলছে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচারের ক্ষেত্রে ভারতকে রুট হিসেবে ব্যবহার করছেন মাদক ব্যবসায়ীরা। প্রথমে মিয়ানমার থেকে মিজোরাম সীমান্ত হয়ে ভারতে নেওয়া হয় ইয়াবা। পরে তা পশ্চিমবঙ্গ ত্রিপুরা, মেঘালয় ও আসাম হয়ে বাংলাদেশে ঢোকে। এ কাজ চলছে তিন বছর ধরে। মাদকবিষয়ক গবেষক ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম ইমদাদুল হক এর উদ্বৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, আশির দশকের শুরু থেকে ভারতীয় সীমান্তে কারখানায় ফেন্সিডিল উৎপাদন করে বাংলাদেশে পাঠানো শুরু করেন মাদক কারবারিরা। ফলে দেশ ফেন্সিডিলে সয়লাব হয়ে গিয়েছিল। এখনো এটা চলছে। তিনি বলেন, এখন ইয়াবাও যদি ভারতে তৈরি হয়, সেটা হবে বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগজনক বিষয়।

সাতক্ষীরাসহ দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের উপজেলা শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সর্বত্র এখন মাদকের ছড়াছড়ি। গাঁজা,ফেন্সিডিল,ইয়াবাসহ নতুন নতুন বিভিন্ন মাদকের ছড়াছড়িতে যুব সমাজসহ এক শ্রেণীর ইয়াবা আসক্ত মানুষ ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে। তবে মাদক বিক্রয়কারী বড় বড় রাঘব বোয়াল সিন্ডিকেট ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। ধরা পড়ছে চুনোপুঁটির সঙ্গে দু’একজন সেবনকারী। দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে ১১টি জেলার উপজেলা শহর ইউনিয়নের ও পৌর সভা ও প্রত্যেকটি বাজারে চলছে মাদক এর জমজমাট ব্যাবসা।

অভিযোগ রয়েছে মাদক ব্যবসায়ীদের পিছনে বড় ধরণের ছায়া থাকায় সর্বদাই তারা পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। তেমনি সেবনকারীরাও অবাধে কিনতে পারছে তাদের নেশাদ্রব্য।

বিজিবির পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান বলেছেন, ভারতীয় সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবার কারখানা স্থাপনের বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া গেছে। তবে মাদক ঠেকাতে বিজিবি কার্যক্রম জোরদার করেছে।

মাদকবিষয়ক গবেষক ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম ইমদাদুল হক এর উদ্বৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, আশির দশকের শুরু থেকে ভারতীয় সীমান্তে কারখানায় ফেন্সিডিল উৎপাদন করে বাংলাদেশে পাঠানো শুরু করেন মাদক কারবারিরা। ফলে দেশ ফেন্সিডিলে সয়লাব হয়ে গিয়েছিল। এখনো এটা চলছে। তিনি বলেন, এখন ইয়াবাও যদি ভারতে তৈরি হয়, সেটা হবে বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগজনক বিষয়।

https://dailysangram.info/post/471113