১ নভেম্বর ২০২১, সোমবার, ১০:৩৯

হাইড্রোলজিক্যাল সমীক্ষা ছাড়াই পাবর্ত্যাঞ্চলে ব্রিজ

৮৮.৪২ শতাংশ গ্রামীণ সড়কে উন্নয়নের ছোঁয়া নেই; স্ট্যাম্প ও সিল খাতেই ১ কোটি ৯ লাখ টাকা; আউট সোর্সিংয়ে ১৩ জনের বেতন ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা

সমীক্ষা বাধ্যতামূলক থাকলেও উন্নয়ন প্রকল্পে সেটাকে আমলে নিচ্ছে না বিভিন্ন মন্ত্রণালয়গুলো। ৫০ কোটি টাকার বেশি খরচের কোনো বিনিয়োগ প্রকল্পে সমীক্ষা বাধ্যতামূলক। আবার ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে বেশি কোনো ব্রিজ বা সেতু করা হলে সেটার জন্য হাইড্রোলজিক্যাল ও মারফোলজিক্যাল সমীক্ষা করা আবশ্যকীয়তা রয়েছে। কিন্তু এক হাজার কোটি টাকা খরচে পার্বত্য চট্টগ্রাম পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে এ দুই ধরনের সমীক্ষার ব্যত্যয় করা হয়েছে। প্রকল্প আউট সোর্সিংয়ের ১৩ জনের বেতন সাড়ে ৩ কোটি টাকার বেশি এবং স্ট্যাম্প ও সিল খাতে এক কোটি টাকার বেশি খরচ করার প্রস্তাবে আপত্তি করেছে পরিকল্পনা কমিশনের পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, তিন পার্বত্য জেলায় উপজেলা পর্যায়ে মোট সড়ক এক হাজার ৪০৩ কিলোমিটার, ইউনিয়ন সড়ক এক হাজার ৩১০ কিলোমিটার এবং গ্রামীণ সড়ক আট হাজার ২৭৮ কিলোমিটার। এই তিন জেলায় মোট ১৬ লাখ মানুষের বসবাস। তাদের প্রায় ৪৪.৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। ৫৬.৬০ শতাংশ বাঙালি, প্রধানত মুসলমান ও হিন্দু। এসব এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থা এখনো উন্নত হয়নি। ২০২১-২৫ সময়কালে বাস্তবায়িতব্য অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বাংলাদেশ রুরাল একসেস ইনডেক্স (আরএআই) ৯০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। দেশের কত শতাংশ মানুষ তার গৃহের দুই কিলোমিটারের মধ্যে পাকা সড়ক পায়, সেটাকে আরএআই দিয়ে বোঝানো হয়। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের ৮৩ শতাংশ আরএআই রয়েছে। বাকি ১৭ শতাংশ জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই পার্বত্য অঞ্চলে বসবাস করে। এই অঞ্চলে সড়ক নিম্নমানের মাধ্যমে আরএআই বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় কাজগুলো হলো, ১২২.১৩ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক নির্মাণ (বিসি), ১৪১.৪২ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক (বিসি), ৯৮.২১ কিলোমিটার গ্রামপর্যায়ে সড়ক উন্নয়ন (বিসি), ২৩.৩০ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক উন্নয়ন (এইচবিবি), ৬.৮০ কিলোমিটার গ্রাম সড়ক উন্নয়ন (এইচবিসি), ৫ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক উন্নয়ন (আরসিসি), সড়ক প্রতিরক্ষার কাজ ২৫৩.৯৭ কিলোমিটার. ২.৪৩০ কিলোমিটার উপজেলা সড়কে ব্রিজ নির্মাণ, ৬৮৭ মিটার ইউনিয়ন সড়কে ব্রিজ নির্মাণ, ৫৬৯ মিটার গ্রামীণ সড়কে ব্রিজ নির্মাণ, ৪৫১.২৯ মিটার উপজেলা কালভার্ট নির্মাণ, ৪২৪.২৬ মিটার ইউনিয়ন সড়কে কালভার্ট নির্মাণ এবং ৩১৫.০৩ মিটার গ্রামীণ সড়কে কালভার্ট নির্মাণ।

প্রকল্পে খাতভিত্তিক ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, আউট সোর্সিং থেকে ১৩ জন জনবল নিয়োগ দেয়া হবে তাদের জন্য খরচ হবে তিন কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রতি জনে প্রতি মাসে বেতন হচ্ছে ৫৭ হাজার টাকার বেশি। পরামর্শক খাতে দেড় কোটি টাকার বেশি ব্যয়কে অত্যাধিক মনে করছে কমিশন। পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট খাতে ৮০ লাখ টাকা আবার গ্যাস ও জ্বালানি খাতে ৪০ লাখ টাকা। প্রতি মাসে জ্বালানি খাতেই যাবে দুই লাখ ২২ হাজার টাকার বেশি। আবার স্ট্যাম্প ও সিল খাতেই ব্যয় হবে এক কোটি ৯ লাখ টাকা। প্রতি মাসে দুই লাখ ২৭ হাজার টাকা গড় খরচ এই খাতে। প্রশিক্ষণ খাতে ১০ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু কমিশন এই করোনা পরিস্থিতিতে এই খাতটি বাদ দেয়ার জন্য বলছে। দুই ধরনের পরামর্শক খাতেই যাবে সাড়ে আট কোটি টাকা। গড়ে প্রতি মাসে এই খাতে যাবে প্রায় পৌনে ১৮ লাখ টাকা।

পরিকল্পনা কমিশনের পল্লী প্রতিষ্ঠান অনুবিভাগ বলছে, সাতটি ব্রিজ ১০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যরে। ১০৫ মিটার থেকে ৪০০ মিটার পর্যন্ত। এগুলোর জন্য হাইড্রোলজিক্যাল ও মরফোলজিক্যাল সমীক্ষা করা আবশ্যক। কিন্তু এ ধরনের সমীক্ষা না করেই প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সাথে ১০০ মিটারের কাছাকাছি দৈর্ঘ্যরে অন্তত তিনটি ব্রিজ রয়েছে। যেগুলো সঠিকভাবে পর্যালোচনা করলে ১০০ মিটারের ঊর্ধ্বে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব এই প্রকল্প থেকে বাদ দেয়া দরকার।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/619506/