১ নভেম্বর ২০২১, সোমবার, ১০:৩৮

রাজধানীর বায়ুদূষণের ভয়াবহতা নিয়ে হুঁশিয়ারি

ফের বাড়তে শুরু করেছে রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ। এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্সর তথ্য মতে, গত ২৪ অক্টোবর থেকে গতকাল পর্যন্ত ঢাকার বায়ু একদিনের জন্যও সহনীয় অবস্থায় আসেনি। এর মধ্যে ২৪ ও ২৬ অক্টোবর বাতাসে দূষণের মাত্রা ছিল ১৬৬ মাইক্রোগ্রাম। তাতে ইনডেক্সে বিশ্বে ঢাকার অবস্থান ছিল তৃতীয়। পরদিন তা আরো বেড়ে হয় ১৭৮ মাইক্রোগ্রাম। এরপর শুক্রবার পর্যন্ত দূষণ কিছুটা কমে এলেও শনিবার তা বেড়ে ১৮২ মাইক্রোগ্রামে অবস্থান করলেও গতকাল সন্ধ্যায় তা কিছুটা কমে ১৬০ মাইক্রোগ্রামে দূষণে বিশ্বে ঢাকা সপ্তম স্থানে অবস্থান করে।

বায়ুদূষণের এমন আচরণে আগাম ভয়াবহ বার্তা দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লকডাউনের পর ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা যে হারে বাড়ছে তাতে আগামী দুই মাসের মধ্যে রাজধানীতে জরুরি অবস্থা ঘোষণার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তাদের মতে, মানের সূচকে দূষণ যদি ৩০০ পয়েন্ট ৩ ঘণ্টা অতিক্রম করে তাহলে মাত্রার দিক থেকে তা জরুরি অবস্থার মধ্যে পড়ে। ফলে এমন পরিস্থিতির আগেই তা নিয়ন্ত্রণে তাগিদ দিয়েছেন তারা।

সম্প্রতি শিকাগো ইউনিভার্সিটির এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের প্রকাশিত এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্সর তথ্যে জানা গেছে, বায়ুদূষণে ঢাকায় মানুষের গড় আয়ু সাত বছরের বেশি এবং সারা দেশে পাঁচ বছরের বেশি কমছে।

স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার এ বিষয়ে নয়া দিগন্তকে বলেন, লকডাউনে ঢাকায় নির্মাণ কাজ হয়নি, বন্ধ ছিল গাড়ি চলাচল। কিন্তু লকডাউন শেষে রাজধানীতে মানুষের ভিড় বাড়ছে। গাড়ির ধোঁয়া, নির্মাণকাজ, খোঁড়াখুঁড়ি, রাস্তা মেরামত, মেট্রোরেলের কাজসহ নানান কারণে বাতাসে দূষণ বাড়ছে। শীত মৌসুমে দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে আশঙ্কা করে তিনি বলেন, বায়ুমান সূচক যদি তিন দিন ৩০০ পয়েন্টের ওপরে যায় এবং তা যদি ৩ ঘণ্টার মতো থাকে, তাহলে বাতাসের দূষণগত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। তিনি বলেন, সামনে শীত মৌসুম। এ সময়ে বৃষ্টি না থাকায় বাতাসে দূষণ আরো বাড়বে। তাই এখনি দূষণ নিয়ন্ত্রণে জরুরি পদক্ষেপ না নিলে রাজধানীতে স্বাস্থ্যগত জরুরি পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

একিউআই সূচক অনুসারে, বায়ুদূষণের মাত্রা ০ থেকে ৫০ পিএম ২.৫ হলে সেটি ভালো, ৫১ থেকে ১০০ হলে তা সহনীয়, ১০১ থেকে ১৫০ বিশেষ শ্রেণীর জন্য অস্বাস্থ্যকর, ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর, ২০১ থেকে ৩০০ খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০০-এর বেশি হলে তা মানবস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক বলে বিবেচিত হয়।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (মনিটরিং ও এনফোর্সমেন্ট) ইয়াসমিন আক্তার নয়া দিগন্তকে বলেন, মানব সৃষ্ট সমস্যার কারণেই মূলত আমাদের পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। তিনি বলেন, নির্মাণকাজ, ইটভাটা পরিচালনাÑ এসবে অনিয়মের কারণেই বাতাসে দূষণ বাড়ছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণে মোবাইল কোর্ট কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এরপরও তা নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়েছে।

এর আগে গত জুলাই মাসে ১৬ বছরের মধ্যে বিশ্বের অন্যতম নির্মল বায়ুর শহরে পরিণত হয় ঢাকা। যদিও এয়ার ভিজুয়ালের তথ্যানুযায়ী কয়েক বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় প্রথম বা দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ঢাকা। কিন্তু ঈদে বিপুলসংখ্যক মানুষের ঢাকা ত্যাগ, নির্মাণকাজ বন্ধ ও গাড়ি চলাচল সীমিত থাকার কারণে বায়ুর মানের এমন উন্নতি হয়।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/619484