২৫ আগস্ট ২০২১, বুধবার, ২:৫৮

সিদ্ধান্তের অপেক্ষা

নিম্নমানের চালভর্তি জাহাজ বহির্নোঙরে

১১৭ টন গুদাম থেকে ফেরত আনা হবে

ভারত থেকে আমদানি করা অতি নিম্নমানের চাল দেশের যেসব গুদামে গেছে তা ফেরত আনা হবে। ওই চাল পৃথক রাখতে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে বিভিন্ন গুদামে নিম্নমানের চাল আলাদা রাখা হয়েছে। এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে নিম্নমানের আরও ১৯ হাজার ২শ টন চাল নিয়ে অপেক্ষায় আছে এমভি ড্রাগন নামের একটি জাহাজ। এসব চাল গ্রহণ করা বা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে রোববার পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে আমদানি করা খাদ্যশস্য জরুরি খালাস কার্যক্রম তদারকি ও পরিদর্শনের জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে ২০ জন খাদ্য পরিদর্শক, উপ-খাদ্য পরিদর্শক ও সহকারী উপ-খাদ্য পরিদর্শককে পাঠানো হয়েছে খাদ্য চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক চটগ্রাম কার্যালয়ে। আজ থেকে তাদের কাজ শুরু করার কথা।

জানতে চাইলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সংগ্রহ ও সরবরাহ) খাজা আব্দুল হান্নান যুগান্তরকে বলেন, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সরকারকে ভালো চাল দেবে এমন শর্তে চুক্তি করা হয়। তিনি পালটা প্রশ্ন রেখে বলেন, সরকার খারাপ চাল গ্রহণ করবে কেন? এ জন্য যে জাহাজে নিম্নমানের চাল আসছে সেটি বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব চাল সরকার গ্রহণ করবে না। শর্ত অনুযায়ী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সরকারকে ভালো চাল দিতে বাধ্য।

চট্টগ্রাম চলাচল ও সংরক্ষণ কার্যালয়ের উপনিয়ন্ত্রক সুনীল দত্ত জানান, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান টিটন শিপিং লাইন লিমিটেডের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানা নেই। তবে মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত দেবে তা তারা বাস্তবায়ন করবেন। দেশের বিভিন্ন খাদ্যগুদামে পাঠানো ‘অতি নিম্নমানের হিসাবে চিহ্নিত চাল’ ফেরত আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য বিভাগ।

আমদানি করা চালের ক্ষেত্রে ২ থেকে ৩ শতাংশ মরা, বিনষ্ট ও বিবর্ণ গ্রহণের বিধান আছে। কিন্তু ২২ জুলাই ভারত থেকে আসা ১৯ হাজার ২০০ টন সিদ্ধ চালের ক্ষেত্রে এগুলো আরও বেশি পাওয়া যায়। যা নিম্নমানের হিসাবে শনাক্ত হয়েছে। এ চাল আনা হয় ‘এমভি ড্রাগন’ নামের একটি জাহাজে। আর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ভারতের টিটন শিপিং লাইন লিমিটেড। তবে এ প্রতিষ্ঠানের মালিক লিটন চক্রবর্তী যুগান্তরকে বলেন, জিটুজির মাধ্যমে ‘এমভি ড্রাগন’ জাহাজে চাল আমদানি করা হয়। সরকারের চুক্তির বাইরে ২ থেকে ৪ শতাংশ বেশি নিম্নমানের চাল আনা হয়েছে। জাহাজ এখনও বহির্নোঙরে। মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত দিলে বিষয়টির সুরাহা হবে।

জানা যায়, ৩ হাজার ২৮৯ টন চাল খালাসের পর তা দেশের বিভিন্ন গুদামে চলে যায়। পরে ধরা পড়লে খালাস কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে জাহাজটি বন্দরের বহির্নোঙরে ফেরত পাঠায় খাদ্য বিভাগ। খালাস করা চালের ঢাকা তেজগাঁও সিএসডিতে ৬৬৫ টন রয়েছে। সেখানে নিম্নমানের পাওয়া গেছে ৫৮ টন। জানতে চাইলে ঢাকা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তপন কুমার দাস বলেন, ট্রাকে চাল আসার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যেগুলো খারাপ পাওয়া গেছে তা আলাদা করে রাখা হয়েছে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এসব চাল ফেরত নিয়ে ভালোটা দেবে। এ কারণে নিম্নমানের চাল পৃথক করে রাখা হয়েছে।

এদিকে নারায়ণগঞ্জের গুদামে গেছে ৬০০ টন চাল। জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হুমায়ুন কবির বলেন, খারাপ চালের বস্তা পৃথক করে রাখা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ভালো চাল গুদামে প্রবেশ করানো হয়েছে। এছাড়া ময়মনসিংহ সিএসডিতে গেছে ৪০০ টন চাল ও চাঁদপুরে ৪০০ টন। ময়মনসিংহ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জহিরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, চটগ্রামে একাধিক জাহাজে ভারত থেকে চাল আসছে। তবে ময়মনসিংহে কোনো খারাপ চাল আসেনি।

আরও যেসব গুদামে নিম্ন চাল গেছে সেগুলো হলো- ফেনী (৭ ট্রাক), বরগুনায় (৮ ট্রাক), চকবাজার (১ ট্রাক), চৌমুহনী (৭ ট্রাক), দেবীদ্বার (২ ট্রাক), ধর্মপুর (৪ ট্রাক), লক্ষ্মীপুরের জয়দেবপুর (৭ ট্রাক), রামগঞ্জ (৭ ট্রাক)। এছাড়া সোনাইছড়ি, সোনাপুর, ফরিদগঞ্জ, হাজীগঞ্জ, কচুয়া, খাদিনগর, শায়েস্তাগঞ্জ, সিলেট, নায়েরগাঁও, মিরসরাই, কলতাবাজার, সিংহজানী, মিরকাদিম নরসিংদী ও বি-বেতকা লোকাল স্টোরেজ ডিপোতে বা এলএসডিতে গেছে চাল। যেসব এলএসডি বা সিএসডিতে এ ধরনের চাল পাঠানো হয়েছে সেসব অফিসে একটি করে কমিটি করা হয় নিম্নমানের চাল শনাক্ত করতে। প্রাথমিক হিসাবে বিভিন্ন এলএসডি ও সিএসডিতে পাঠানো চালের মধ্যে ১১৭ টন অতি নিম্নমানের শনাক্ত করা হয়েছে।

এদিকে খাদ্য বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, নমুনা সংগ্রহে গাফিলতির কারণেই নিম্নমানের চাল খালাস ও তা এলএসডিতে পাঠানোর মতো ঘটনা ঘটেছে। ২২ জুলাই ভারত থেকে ১৯ হাজার ২০০ টন সিদ্ধ চাল নিয়ে ‘এমভি ড্রাগন’ জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। ১ আগস্ট খাদ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি (একজন সিনিয়র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) ও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমদানি করা চালের নমুনা সংগ্রহ করেন। তা ল্যাবে পরীক্ষা করে চালের গুণগত মান ভালো ও খাওয়ার উপযোগী বলে প্রতিবেদন দেওয়ার পর খালাস প্রক্রিয়া শুরু হয়। ৩ আগস্ট জাহাজ থেকে চাল খালাস শুরু হয়। পরে জাহাজটির ভেতরের বিভিন্ন স্তরে অতি নিম্নমানের চাল থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়।

এর আগে ২৬ এপ্রিল ভারত থেকে আমদানি করা চালের মধ্যে মরা, নষ্ট ও বিবর্ণ দানার পরিমাণ বেশি হওয়ায় বগুড়ার সান্তাহার জংশন স্টেশনে ছয়টি ওয়াগন থেকে চাল খালাস বন্ধ করে দেয় খাদ্য বিভাগ। পরে ওই চাল ফেরত পাঠানো হয়।

https://www.jugantor.com/todays-paper/city/457388