২৪ আগস্ট ২০২১, মঙ্গলবার, ১২:৫৯

ব্যাংকের ৮০ ভাগ শাখা তদারকির আওতায়

প্রণোদনায় নয়ছয় : মাঠে অর্ধশত পরিদর্শক দল

প্রণোদনার ঋণে নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে কিছু গ্রাহকের বিরুদ্ধে। সঠিকভাবে এই টাকা ব্যবহার না করে কেউ কেউ পুরনো ঋণ পরিশোধ করেছেন; কেউ বা জমি, ফ্ল্যাট কিনেছেন, অন্যখাতে ব্যয় করেছেন এমনকি কোনো কোনো গ্রাহকের বিরুদ্ধে পণ্য আমদানির নামে অর্থ পাচারেরও অভিযোগ উঠেছে। প্রকৃতপক্ষে কী পরিমাণ ঋণে অনিয়ম হয়েছে তা তদারকি করতে মাঠে নেমেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিতরণকৃত ঋণের ৮০ শতাংশ বিতরণ করা হয়েছে এমন শাখাগুলো তদারকির আওতায় আনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ নীতিনির্ধারকের নির্দেশিত পথ নকশা অনুযায়ী প্রায় অর্ধশত পরিদর্শক দল বিতরণকৃত ঋণের তথ্য যাচাই-বাছাই শুরু করেছে। ১০ কার্যদিবসের মধ্যেই তদারকি কার্যক্রম শেষে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের ।
জানা গেছে, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের চলতি মূলধনের জোগান দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য চালু রাখতে গত বছর প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। এর আওতায় ব্যাংকগুলো বিভিন্ন খাতে প্রায় এক লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করে। এর মধ্যে বড় গ্রাহকরাই বেশির ভাগ ঋণ নিয়েছেন। সরকার এ জন্য ব্যবসায়ীদের সুদহারের ওপর ভর্তুকিও দিচ্ছে। যেমন বৃহৎ ও সেবা খাতে সাড়ে চার শতাংশ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে ৫ শতাংশ সুদ ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে এক বছর পার হয়ে দ্বিতীয় বছরের জন্য নতুনভাবে লক্ষ্যমাত্রাও বেঁধে দেয়া হয়েছে। কিন্তু গত বছর বিতরণ করা ঋণ কিছু ক্ষেত্রে সঠিক খাতে ব্যবহার না করার অভিযোগ উঠেছে কোনো কোনো গ্রাহকের বিরুদ্ধে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদারকি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে বৃহৎ শাখা এবং বৃহৎ ঋণগ্রহীতাকে পরিদর্শনের আওতায় আনতে অগ্রাধিকার প্রদান করতে বলা হয়েছে।
পরিদর্শকদের জন্য পথ নকশার আওতায় ঋণগ্রহণকারী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান করোনায় প্রকৃতই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না, হয়ে থাকলে কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা নিরূপণের লক্ষ্যে ব্যাংকসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণী, স্টক রিপোর্ট ইত্যাদি যাচাই করা হয়েছে কি না এ সব বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করতে বলা হয়েছে। প্যাকেজের আওতায় ঋণগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানটির অন্যান্য ব্যাংক হতে প্রণোদনা প্যাকেজে ঋণ গ্রহণের বিষয়টি ব্যাংক বিবেচনায় নিয়ে ঋণের অনুমোদন করা হয়েছে কি না তা দেখতে বলা হয়েছে। প্রদত্ত ঋণে বিধিবহির্ভূত ব্যবহার যেমন বিদ্যমান কোনো ঋণ হিসাব সমন্বয়, পুনঃতফসিলের ডাউনপেমেন্ট পরিশোধ, নতুন ব্যবসা সম্প্রসারণ, অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করা হয়েছে কি না তা যাচাই করতে হবে। অর্থাৎ এই প্যাকেজের আওতায় প্রদত্ত ঋণসমূহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যথাযথ ব্যবহার করেছে কি না তা নিশ্চিত হতে হবে।
আবার এক প্রতিষ্ঠানের নামে গৃহীত ঋণের অর্থ দিয়ে একই প্রতিষ্ঠানের অন্য কোনো ঋণ বা অন্য প্রতিষ্ঠানের ঋণ সমন্বয় করা হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া ঋণ গ্রহণের ফলে প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে কি না, প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান জনবলে কোনো পরিবর্তন সাধিত হয়েছে কি না, গৃহীত ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ প্রতিষ্ঠানের অন্য কোনো খাতে ব্যবহার করা হয়েছে কি না তা দেখতে বলা হয়েছে। অপর দিকে শাখাসমূহ ঘোষিত হারের চেয়ে কম বা বেশি সুদ প্রদান করেছে কি না তা যাচাই করতে হবে। শাখা পরিদর্শনকালে প্রাপ্ত অনিয়ম সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের অবহিতকরণপূর্বক তাদের মতামত বা মন্তব্য গ্রহণ এবং খসড়া প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে তা নথিতে সংরক্ষণ করতে হবে। ব্যাংক শাখা প্রদত্ত ঋণ গুটিকয়েক ঋণগ্রহীতার কাছে কেন্দ্রীভূত কি না তা পরিদর্শনকালে খতিয়ে দেখতে হবে। একই সাথে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান ঋণ পুনঃতফসিলীকরণে অনিয়ম আছে কি না তা পরীক্ষা করতে হবে। এভাবে ১৯টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাতটি পরিদর্শন বিভাগ রয়েছে। প্রতিটি বিভাগ থেকে গড়ে সাতটি থেকে আটটি টিম গঠন করা হয়েছে। এভাবে প্রায় অর্ধশত পরিদর্শক টিম এখন মাঠে রয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/603586/