৩ এপ্রিল ২০১৭, সোমবার, ১১:২৭

বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

প্রধান শিক্ষককে সভাপতির মারধর

বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার একটি বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী নিয়োগকে কেন্দ্র করে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষককে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল রোববার সকালে উপজেলার নগরকান্দি সপ্তপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
নৈশপ্রহরী নিয়োগ নিয়ে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কাজী আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে অনাস্থা দেওয়ায় এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ প্রধান শিক্ষক মোল্লা সিদ্দিকুর রহমানের। তবে কাজী আমজাদ হোসেনের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির পাঁচ সদস্য ওই নিয়োগ দিতে দুই লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। তিনি এর প্রতিবাদ করায় প্রধান শিক্ষক তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
এদিকে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তাঁকে মারধর করার খবরে বিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
নগরকান্দি সপ্তপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোল্লা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘প্রায় দুই মাস আগে ব্যবস্থাপনা কমিটি স্কুলে একজন নৈশপ্রহরী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পত্রিকায় একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এরপর থেকে কমিটির সভাপতি তাঁর পছন্দের একজনকে নিয়োগ দিতে ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসহ আমাকে চাপ দিতে শুরু করেন। সভাপতির ওই অযৌক্তিক দাবি কমিটির অন্য সদস্যরা মেনে না নিয়ে তাঁরা সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা দেন। কমিটির সদস্যরা সভাপতির বিরুদ্ধে আনা অনাস্থার চিঠিটিও আমার কাছে পৌঁছে দেন।’
প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করেন, ‘আমি কেন অনাস্থার চিঠি গ্রহণ করলাম—এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে গতকাল সকাল সোয়া ১০টার দিকে স্কুলে আসেন সভাপতি। হঠাৎ তিনি আমার কক্ষে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে আমাকে মারধর (চড়–থাপ্পড় ও কিল–ঘুষি) শুরু করেন। এ সময় আমার কক্ষে থাকা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হেলাল উদ্দিন, কবির গাজী, রেহানা আক্তার এবং সহকারী শিক্ষক বিশ্বাস মোজাহিদুর রহমান ও হিসাবরক্ষক বিদ্যুৎ কুমার খান মারধর ঠেকাতে গেলে তাঁরাও সভাপতির হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। পরে তিনি স্কুল ছেড়ে চলে যান।’
প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, এই স্কুলের সভাপতি বয়সে তরুণ। তিনি মোল্লাহাট উপজেলার খলিলুর রহমান ডিগ্রি কলেজের পাস কোর্সের ছাত্র। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁকে ব্যবস্থাপনা কমিটিতে বসানো হয়েছে।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হরবিলাস কুমার বলেন, ‘প্রধান শিক্ষককে মারধরের খবর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে আমরা ক্লাস বর্জন করে তাদের নিয়ে বিক্ষোভ করি। ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কাজী আমজাদ হোসেনের বিচারের দাবিতে মিছিল নিয়ে আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়েও যাই। সেখানে গেলে তিনি আমাদের বিচারের আশ্বাস দিলে আমরা ফিরে আসি।’
মোল্লাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম হাসান বলেন, ‘একটি নিয়োগকে কেন্দ্র করে ওই ঘটনা ঘটেছে বলে আমি শুনেছি। এ ঘটনায় নগরকান্দি সপ্তপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কাজী আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
তবে শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে কাজী আমজাদ হোসেন পাল্টা অভিযোগ করেন, ‘আমি মোল্লাহাট খলিলুর রহমান ডিগ্রি কলেজের পাস কোর্সের ছাত্র। প্রায় এক বছর আগে স্থানীয় লোকজন ধরে আমাকে কমিটির সভাপতি করেন। সম্প্রতি স্কুলে একজন নৈশপ্রহরী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নৈশপ্রহরী নিয়োগে যেন কোনো অনিয়ম না হয় এ জন্য যোগ্যতার মাপকাঠিতে নিয়োগ দেওয়ার জন্য আমি অনুরোধ করি। কিন্তু স্থানীয় নরসিংহপুর গ্রামের লাচ্চু কাজী নামের এক ব্যক্তিকে ওই পদে চাকরি দিতে প্রধান শিক্ষক মোল্লা সিদ্দিকুর রহমান কমিটির অন্য সদস্যদের যোগসাজশে দুই লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন। আমি এর প্রতিবাদ করায় কমিটির পাঁচজন সদস্য আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা দিয়েছেন। অনাস্থার কার্যবিবরণী দেখতে সকালে স্কুলে গেলে প্রধান শিক্ষক আমাকে তা দেখতে দেননি। উল্টে তাঁরা আমাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। আমি প্রশাসনের কাছে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।’
প্রধান শিক্ষক মোল্লা সিদ্দিকুর রহমান ঘুষের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এতে আমার কোনো হাত নেই।’
মোল্লাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ মো. খায়রুল আনাম বলেন, মারধরের ঘটনায় নগরকান্দি সপ্তপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাদী হয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কাজী আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করেছেন। ঘটনার পর তিনি আত্মগোপনে যাওয়ায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

 

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1131556/