১৭ অক্টোবর ২০২০, শনিবার, ২:০৮

তদারকি নেই বাজারে

ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া ক্রেতারা দিশেহারা

তদারকি নেই বাজারে। আর এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। এমনকি সরকারি নির্দেশনার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা তাদের ইচ্ছামতো পণ্যের দাম রাখছে। আর এতে দিশেহারা হয়ে উঠেছেন সাধারণ ক্রেতারা। ক্রেতাদের বক্তব্য, অসাধু ব্যবসায়ীরা যেখানে সরকারি নির্দেশই মানছে না; সেখানে ক্রেতাদের কী করার আছে। বাধ্য হয়ে তারা ব্যবসায়ীদের নির্ধারিত দামেই পণ্য কিনছেন।

আলুর দামে চরম অস্থিরতা শুরু হলে গত ১৪ অক্টোবর আলুর দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। তিন পর্যায়ে এই দাম নির্ধারণ করা হয়। কেজিপ্রতি খুচরা পর্যায়ে ৩০, পাইকারিতে ২৫ ও হিমাগার থেকে ২৩ টাকা। এ নিয়ে প্রতিটি জেলায় চিঠি প্রেরণ করা হয়। এ দিকে, সরকার আলুর দাম নির্ধারণ করে দিলেও গতকাল পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি বাজারগুলোতে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় আলুর দাম এখনো কেজি ৫০ টাকা রয়েছে। রাজধানীর সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজার ও সংলগ্ন দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায় তারা ৫০ টাকায় আলুর কেজি বিক্রি করছেন। হাতিরপুল বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায় তারাও আলু ৫০ টাকায় কেজি বিক্রি করছেন। কাওরানবাজারে অবশ্য ৫ টাকা কমে ৪৫ টাকায় কেজি বিক্রি হচ্ছে। মানিকনগর বাজার, শাহজাহানপুর বাজার, খিলগাঁও, গোপীবাগ, কমলাপুরসহ আশপাশের সব বাজারেই ৫০ টাকায় আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের দামও ওই একই রয়ে গেছে। বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আছে। কিন্তু দাম কমছে না। বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৯০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানের ওপর ২০ টাকা বেশি-কম হচ্ছে।

অন্যান্য নিত্যপণ্যের বাজারেও ওই একই অবস্থা। সবজির দাম বেশ চড়াই আছে। বাজারে পর্যাপ্ত সবজি থাকার পরও সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে অধিকাংশ সবজি। বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৮০ টাকার নিচে ভালো কোনো সবজি পাওয়া যায় না। শিমের কেজি ১২০ থেকে ১৬০ টাকা। ছোট আকারের ফুলকপি, বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকা। পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা। গাজর বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা কেজি। টমেটো ১২০ টাকায় আছে দু’মাস ধরে। করলা কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১২০ টাকায়। বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। পটোল, ঝিঙা, কাঁকরোল, চিচিঙ্গা, বেগুন ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকায়। শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। মাঝারি একটি কচু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।

ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, বাজারে আসলে কোনো তদারকি নেই। মুগদার বাসিন্দা বাদল জানান, বাজারে তদারকি থাকলে এভাবে সরকারি নির্দেশ কিভাবে উপেক্ষিত হয়। সরকার নির্দেশ দিয়েছে আলু ৩০ টাকায় বিক্রি করতে হবে। আর ব্যবসায়ীরা ৫০ টাকায়ই বিক্রি করছেন আলু। তাদের মধ্যে কোনোই প্রতিক্রিয়া নেই। সরকার যে আলু বিক্রির নির্দেশনা জারি করেছে তা-ই অনেক ব্যবসায়ী জানেন না।

কমলাপুরের বাসিন্দা আহসান জানান, বাজার যাদের তদারকি করার কথা তাদের কখনোই বাজারে দেখা যায় না। ফলে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দাম রাখেন। আবার সুযোগ পেলে মাপেও কম দেন। তিনি বলেন, নির্দেশ দিয়ে ঘরে বসে থাকলে হবে না। এতে মানুষের ভোগান্তি আরো বাড়ে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর কোনো কোনো এলাকায় বাজারে অভিযান চালালেও তা তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। এ ব্যাপারে মাঠপর্যায়ের কয়েক কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তারা জানান, এ বিষয়টি নিয়ে তারা কোনো কথা বলতে পারবেন না। নিষেধ রয়েছে।

অধিদফতরের মহাপরিচালকেরই কথা বলার এখতিয়ার রয়েছে। ক্রেতারা বলেন, ব্যাপকভাবে অভিযান চালানো না হলে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/535898