২২ মার্চ ২০১৭, বুধবার, ৯:২৬

পদ্মা ও মহানন্দার পানি কমছে অস্বাভাবিকভাবে

দ্রুত নিচে নামছে বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বিশ্ব পানি দিবস আজ

পদ্মা ও মহানন্দা নদীতে পানি অস্বাভাবিকভাবে কমছে। নদী দুটির মাঝে অসংখ্য চর জেগে উঠেছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বরেন্দ্র অঞ্চলে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। প্রয়োজনীয় সেচ দিতে পারছে না কৃষক। এদিকে, নদীতে পানি কমায় বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নীচে নামছে। প্রতি বছর পানির স্তর ৫ থেকে ১০ ফুট করে নীচে চলে যাচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলাকায় প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে পদ্মা নদীর প্রায় ৪০ ভাগ ও মহানন্দার ৮০ ভাগ অংশে পানি থাকে না। জেগে ওঠা চরে চাষ হচ্ছে ধানসহ বিভিন্ন ফসল। লোকজন মহানন্দা নদী পায়ে হেঁটেই পার হচ্ছে। পদ্মা ও মহানন্দা নদীর এ অবস্থার কারণে মাছের উত্পাদন কমে গেছে। বেকার হয়ে পড়েছে শত শত জেলে। নদী সংলগ্ন এলাকায় খাবার পানির জন্য বসানো নলকূপগুলোতে পানি কম আসছে। মে থেকে জুলাই মাস এ অঞ্চলে খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। কারণ, তখন নলকূপে পানিই উঠে না।

বরেন্দ্র অঞ্চলে বসবাসকারী লোকজন জানান, নলকূপে পানি না উঠায় বাধ্য হয়ে পুকুর-নালার দূষিত পানি ব্যবহার করছে স্থানীয়রা। অনেকক্ষেত্রে সেচের জন্য বসানো গভীর নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করে লোকজন পান করে।

বরেন্দ্র অঞ্চলে শুধু বিশুদ্ধ পানি সংকটের কারণে স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যায় বলে শিক্ষকেরা জানান। একটি বেসরকারি সংস্থার গবেষণা রিপোর্টে দেখা যায়, বরেন্দ্র অঞ্চলে বসবাসকারীদের মধ্যে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উপজেলার ৮০টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পল্লীতে বসবাসকারী ৫০ হাজার মানুষের জন্য হস্তচালিত নলকূপ রয়েছে মাত্র ৩০টি।

এদিকে ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর নির্ভর করে বরেন্দ্র অঞ্চলে বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষ হচ্ছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনে বিরুপ প্রভাব পড়ায় বরেন্দ্র অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কমে গেছে। সেচের জন্য বসানো গভীর নলকূপেও পানি উঠছে কম। এজন্য কৃষকদের সেচ খরচ বেড়ে গেছে। কৃষকেরা জানান, বৃষ্টি নির্ভর আমন ধান চাষ হয়। অথচ গত কয়েক বছর ধরে সময়মত বৃষ্টি না হওয়ায় ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর নির্ভর করতে হচ্ছে আমন চাষে। এ প্রসঙ্গে জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও ইউডিপিএস নদী ও জীবন প্রকল্প-২ ফোকাল পারসন আমিনুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্ষা মৌসুমে পদ্মা ও মহানন্দা নদীতে পানির চাপ বাড়ায় নদীর দুই পাড় ভাঙছে। শুল্ক মৌসুমে নদীতে পানি কমে যাওয়ায় নদীর দুই পাড়ে বিশাল চর জেগে উঠছে। নদীর গভীরতা কমে গেছে। পদ্মা ও মহানন্দা নদীতে ডেজিং করে গভীরতা ফিরিয়ে এনে পানি সংরক্ষণ করতে হবে। আর বরেন্দ্র অঞ্চলে ব্যাপক বনায়ন ঘটানো গেলে বৃষ্টিপাত বাড়বে। তখন ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর উপরে উঠে আসবে। আমিনুল ইসলাম আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে পদ্মা ও মহানন্দা নদী ছাড়াও তিস্তা, আত্রাই ও করতোয়া নদীতে পানি হ্রাস পাওয়ায় উত্তরাঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির উত্স কমে যাচ্ছে।

 

 

http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/first-page/2017/03/22/183990.html