২৪ আগস্ট ২০২০, সোমবার, ১১:১২

চট্টগ্রামে নতুন জটিলতায় করোনাজয়ীরা

করোনামুক্ত হয়েও জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টের মতো সব উপসর্গ লেগেই আছে। কিন্তু নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ। কাশির সঙ্গে হচ্ছে রক্তবমিও। ফুসফুস ও কিডনি জটিলতাও বাড়ছে। সেই সঙ্গে ক্লান্তি, অবসাদ ও মানসিক সমস্যা।

নতুন এমন বিভিন্ন আলামত নিয়ে চরম জটিলতায় ভুগছেন চট্টগ্রামের করোনাজয়ীদের অনেকে। যাদের মধ্যে স্বয়ং করোনাজয়ী ডাক্তারও রয়েছেন। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডের প্রধান সমন্বয়ক ও সিনিয়র মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রব সোমবার তথ্যটি জানান।

তিনি বলেন, করোনাজয়ীদের কাছ থেকে ক্লান্তি বা অবসাদ, শ্বাসকষ্ট ও মানসিক সমস্যায় ভোগার কথাই বেশি জানা গেছে। বিশেষ করে যাদের হাই ফ্লো অক্সিজেন দেয়া হয়েছে তারা ফুসফুস ও কিডনির জটিলতায়ও ভুগছেন।

তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে করোনাজয়ী এক মহিলা এসেছেন যার কাশির সঙ্গে রক্ত যাচ্ছে। অনেকে জানিয়েছেন তারা আগের মতো দম পাচ্ছেন না। আগে ৪-৫ তলা অনায়াসে উঠতে পারতেন, এখন এক তলা উপরে উঠতেই হাঁপিয়ে যাচ্ছেন। এমন অনেক রোগীই আসছেন। যারা করোনামুক্ত হলেও পুরোপুরি সুস্থ বলা যায় না।

তিনি বলেন, যেহেতু রোগটা নতুন, সেহেতু এর পরবর্তী ধাপগুলো কেমন হবে সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো ধারণা নেই আমাদের। তবে এটি নিশ্চিত করোনা উত্তর নানা জটিলতায় ভুগছেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রোগী। এই সংখ্যাটা এখন পর্যন্ত ৩০ শতাংশের মতো। তাদের ফলোআপে থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।

তিনি জানান, করোনাজয়ীদের ফলোআপ চিকিৎসার জন্য জেনারেল হাসপাতালের ১০২ নম্বর কক্ষে আউটডোর খোলা হয়েছে। সেখানে নিয়মিতভাবে রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে। করোনামুক্ত হয়েও যারা সুস্থ নন, তারা সেখানে যোগাযোগ করবেন।

নগরীর পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার মোবারক হোসেন বলেন, করোনামুক্ত হওয়ার কয়েকদিন পর থেকে আমার আবারও জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। কাশির সঙ্গে রক্ত যায়। তাছাড়া কিডনিতে ব্যথা অনুভব করি। তাতে ভয় পেয়ে যায়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে তিনি পুনরায় করোনার নমুনা পরীক্ষার পরামর্শ দেন। নমুনা পরীক্ষায় ফলাফল নেগেটিভ আসে। এরপর ওষুধ দিয়ে তিনি বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দেন তাতে আমার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। শরীর দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে।

করোনা-উত্তর নানা জটিলতা নিয়ে অনেক করোনাজয়ী চিকিৎসার জন্য আসার কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মীর্জা নুরুল করিমও।

তিনি বলেন, করোনামুক্ত হলেও অনেকেই আগের মতো সুস্থ নন। এরা জ্বর-কাশিতে ভুগছেন, শ্বাসকষ্টেও ভুগছেন কেউ কেউ। কাশির সঙ্গে রক্তবমিও হচ্ছে অনেকের। এ রকম নতুন নতুন আলামত নিয়ে অনেকেই আসছেন। তাদের সমস্যা অনুযায়ী বিভিন্ন ওষুধ ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, করোনাজয়ী অন্য রোগীদের কথা কী বলবো, আমি নিজেও আগের মতো স্ট্যামিনা পাচ্ছি না কাজ করার। বেশ কয়েকবার জ্বর-কাশি হলো। কিডনিতেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। এজন্য আমাকে চারটা হাই পাওয়ার এন্টিবায়োটিক ইনজেকশনও দিতে হয়েছে।

তিনি জানান, ২৭শে এপ্রিল করোনা আক্রান্ত হন তিনি। খুব বেশি উপসর্গ না থাকায় বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন। ১৪ দিনের মাথায় করোনা নেগেটিভ ফলাফল আসে। এর কিছুদিন পরেই বেশকিছু শারীরিক সমস্যায় ভুগতে শুরু করেন তিনি। তিনি বলেন, করোনামুক্ত হওয়ার এক মাস পর আবারো জ্বর-কাশিতে ভুগতে শুরু করি। করোনা পজিটিভ যখন ছিলাম, ওই সময়ের চেয়ে দ্বিতীয় দফায় আরো বেশি শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। এই সময়ে কিডনিতেও বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। পাশাপাশি ক্লান্তি আর অবসাদগ্রস্ততাও বেড়ে যায় অনেকাংশে। এ সময় আবারও নমুনা পরীক্ষা করায়। যার ফলাফল নেগেটিভই আসে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এসব জটিলতায় ভুগছি আমি। এটিকে করোনা-উত্তর জটিলতা বলে ধারণা করলেও আবারও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কি না সেটি যাচাই করতে নমুনা পরীক্ষা করাবো।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. জামাল মোস্তফা বলেন, করোনা আক্রান্ত যারা সুস্থ হচ্ছেন তাদের বিশ্রামে থাকার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। করোনামুক্ত হয়ে কেউ যদি একদিনেই আগের মতো কাজ শুরু করতে চায়, তাহলে তার জন্য সেটা কঠিন হবে। কারণ বেশির ভাগের মধ্যেই ক্লান্তি আর অবসাদগ্রস্ততা দেখা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে রেস্টে থেকে ধাপে ধাপে নিয়মিত জীবনে ফেরার চেষ্টা করতে হবে। যাদের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের কিছু ব্যায়াম করার পরামর্শ দিচ্ছি আমরা।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=240142&cat=1