১৯ মার্চ ২০১৭, রবিবার, ৮:৪৯

প্রধান শিক্ষক নেই ১৭ হাজার স্কুলে

দেশের ১৭ হাজারের বেশি সরকারি প্রাইমারি স্কুল চলছে প্রধান শিক্ষক ছাড়াই। ফলে এসব স্কুল যথাযথভাবে চলছে না। নিয়মিত পাঠদান হচ্ছে না। শিক্ষার মান উন্নয়নে কার্যত কোনো পদক্ষেপও নেই স্কুলগুলোতে। প্রধান শিক্ষক না থাকায় সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে তাকে প্রশাসনিক কাজেই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। এতে স্কুলগুলোতে নানামুখী সমস্যা তৈরি হয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের বেসরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলোতে একজন সহকারী শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতেন। এ কারণে তিনি প্রতিদিন ৫০ টাকা ভাতা পেতেন। ২০১৩ সালে এসব বেসরকারি স্কুল সরকারি হলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ বিলুপ্ত হয়। একই সঙ্গে ৫০ টাকা ভাতা বন্ধ করে দেয় মন্ত্রণালয়। এসব ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের মধ্যে যাদের যোগ্যতা ছিল তাদের প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু যে সব স্কুলের সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের যোগ্যতা নেই, সে সব স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকে। তবে একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করলেও কোনো ভাতা পান না। এছাড়া পুরনো সরকারি স্কুলগুলোতেও অসংখ্য পদ শূন্য রয়েছে। প্রতিনিয়তই শিক্ষকরা অবসরে যাচ্ছেন। ফলে প্রধান শিক্ষক বিহীন স্কুলের সংখ্যা আরো বাড়ছে।

সূত্র জানায়, আদালতে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ প্রধান শিক্ষকের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির নন-গেজেটেড পদমর্যাদায় উন্নীত করা হয়। নানা জটিলতার কারণে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমেও এ পদে নিয়োগ দেওয়া বন্ধ থাকে।

তথ্য অনুযায়ী, প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে নিয়োগের জন্য গত বছরের আগস্ট মাসে ৩৪তম বিসিএস থেকে ৮৯৮ জনকে সুপারিশ করা হয়। এই নিয়োগের পর শিক্ষক সংকট কিছুটা কমবে। মন্ত্রণালয় এ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে, পর্যায়ক্রমে নিয়োগ দিয়ে শূন্যপদ পূরণ করা হবে। প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ শতকরা ৩৫ ভাগ সরাসরি এবং ৬৫ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে দেওয়া হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

চলতি মাসেই নিয়োগ পাবেন পুল ও প্যানেলভুক্ত শিক্ষকরা: এদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্যানেল এবং পুলভুক্ত সব শিক্ষককে চলতি মার্চের মধ্যে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টিও চূড়ান্ত করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, ২০১১ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তির পর উত্তীর্ণ ৪৪ হাজার ৬০৯ জনের মধ্যে ১২ হাজার ৭০১ জনকে নিয়মিত সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বাকি উত্তীর্ণদের মধ্যে ১৫ হাজার ১৯ জনকে ভবিষ্যতে নিয়োগের জন্য ‘পুল শিক্ষক’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। গত ২১ ডিসেম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের শূন্য পদে ‘পুলভুক্ত শিক্ষক’দের নিয়োগের আদেশ জারি করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। এই প্রক্রিয়া মার্চের মধ্যেই সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এছাড়া রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০১০ সালের ২১ এপ্রিল বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরকার। পরীক্ষার মাধ্যমে ২০১২ সালের ৮ এপ্রিল ৪২ হাজার ৬১১ জনের মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। এদের মধ্যে

নিয়োগ দেওয়া হয় ৩২ হাজার ৯৬১ জনকে। আর নিয়োগের অপেক্ষায় ছিলেন প্রায় সাত হাজার উত্তীর্ণ প্রার্থী। এবার তারাই নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন। এই প্যানেলভুক্ত সব শিক্ষকের নিয়োগ ৩০ মার্চের মধ্যে শেষ করার সুপারিশ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা অবশিষ্ট শিক্ষকদের মার্চের মধ্যে নিয়োগপত্র দিতে চায় মন্ত্রণালয়। তবে এই সংখ্যা জানা যাবে মার্চের পর।

 

http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/last-page/2017/03/19/183316.html