১৮ জুন ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৬:০২

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর

নিয়ম না মেনে কেনা হচ্ছে ১৫০ কোটি টাকার বই

ক্রয় প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানিয়ে সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির চিঠি

দেয়া হয়নি কোনো দরপত্র অথবা বিজ্ঞপ্তি। কিন্তু কেনা হচ্ছে প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকার বই। কিনছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। দেশের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু কর্নারের জন্যই কেনা হচ্ছে এসব বই।

কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানের বাইরে আর যেসব বই কেনা হচ্ছে তা সৃজনশীল প্রকাশনার সঙ্গে জড়িত কয়েকটি মাত্র প্রতিষ্ঠানের। এমনটা জানতে পেরে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব বরাবর চিঠি দিয়েছে। যার অনুলিপি দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব বরাবর।

চিঠিতে তারা নির্বাচিত প্রতিটি বই ৬৫ হাজার কপির ক্রয় প্রক্রিয়া বাতিলের আবেদন জানিয়েছে। এ ছাড়া সৃজনশীল প্রকাশকদের কাছে উপযুক্ত বইয়ের তালিকা ও নমুনা কপি আহ্বানের মাধ্যমে বাছাই কমিটি কর্তৃক বই নির্বাচন করে দ্রুত ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলেছে।

জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ ও নির্বাহী পরিচালক মো. মনিরুল হক স্বাক্ষরিত এই চিঠিটি গত ১০ জানুয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব মো. আকরাম আল হোসেন বরাবর পাঠানো হয়। আর চিঠির অনুলিপি দেয়া হয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর মহাপরিচালক ও প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তার একান্ত সচিব বরাবর।

চিঠির একটি জায়গায় উল্লেখ আছে, ‘বিশেষ সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি যে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) কর্তৃক কিছু শিরোনামের বই ৬৫ হাজার কপি করে ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়া অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। মহাপরিচালকের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়; কিন্তু বই নির্বাচন প্রক্রিয়া সর্বজনীন নয়। এত বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর কাছে যে বই পৌঁছে দেয়া হবে, তা মানসম্পন্ন হওয়া যেমন বাঞ্ছনীয় তেমনি অধিক সংখ্যক প্রকাশক ও লেখকের প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দেয়া অপরিহার্য। বই ক্রয়ের আগে সব সৃজনশীল প্রকাশকের বই জমা দেয়ার সুযোগ দিতে হবে। কমিটির মাধ্যমে বই নির্বাচন করা অপরিহার্য। দেশের প্রতিষ্ঠিত লেখক, প্রকাশক, সরকারি কর্মকর্তা সমন্বয়ে গঠিত একটি বই নির্বাচন কমিটি এই কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারে। সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যেমন গণগ্রন্থাগার অধিদফতর, জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্র এই প্রক্রিয়াতেই বই ক্রয় করে থাকে। এমনকি আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও এই প্রক্রিয়াতেই বই নির্বাচন করে ক্রয় করেছে।’

চিঠিতে এরপরই এই ক্রয় প্রক্রিয়া বাতিলের আবেদন জানানো হয়।

এই বিষয়ে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, এই ক্রয়ের বিষয়ে আমরা অন্ধকারেই ছিলাম। এখনও কী হচ্ছে জানি না। কারণ, চিঠির কোনো জবাব এখনও পাইনি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে এ বিষয়ে যোগাযোগ করেও কারও সাড়া পাচ্ছি না। আমাদের বক্তব্য চিঠিতেই স্পষ্ট করেছি। উত্তর না পেলে ফলোআপ চিঠি দেয়া হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রকাশক জানান, এই ক্রয়ের আওতায় আনা হয়েছে ৩০টির মতো বই। যার প্রত্যেকটির ৬৫ হাজার কপি ক্রয় করা হবে। সে অনুযায়ী প্রায় ১৩০-১৫০ কোটি টাকার বই ক্রয় করা হবে। তথ্যানুসন্ধানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে এখানে মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারি দু-তিনটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া হাতে গোনা কয়েকটি সৃজনশীল প্রকাশনার বই ক্রয় করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে এই ধারার প্রকাশনার সঙ্গে জড়িত একটি বিরাট অংশ বঞ্চিত হচ্ছে। বিজ্ঞপ্তি দিয়ে, সবার জমা দেয়া বই বিচার-বিশ্লেষণ করে, বাছাই কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন করলে এমনটা হতো না। আর তাই ক্রয়ের জন্য নির্ধারিত সৃজনশীল প্রকাশনার কারও কারও বইয়ের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, গত বছরের ডিসেম্বরে এই প্রক্রিয়াটি শুরু হয়। মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট একটি কমিটির মাধ্যমেই বই সিলেকশন করা হয়। সেই সিলেকশন অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরকে বই ক্রয় করতে বলা হয়। এ ক্ষেত্রে বই ক্রয় সংক্রান্ত কোনো বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কর্নারের জন্য বইগুলো কেনা হচ্ছে এবং সেটা প্রক্রিয়া অনুযায়ী। মন্ত্রণালয় এ সম্পর্কিত বিষয়ে কমিটির মাধ্যমেই বই সিলেক্ট করে। এরপর আমরা সিঙ্গেল সোর্সে সব নিয়ম মেনেই বই ক্রয় করছি।’

প্রকাশকদের চিঠি ও আবেদনের বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘এই চিঠির বিষয়ে অবগত নই। তারা কী বলেছেন জানি না, তবে বই কেনার প্রক্রিয়া এটাই শেষ নয়, সেটা বলতে পারি।’

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/316969/