৫ মে ২০২০, মঙ্গলবার, ২:০৪

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি

নাটোরে চার বছর ধরে চাল বিক্রিতে অনিয়ম

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় নাটোরের হালসা ইউনিয়ন পরিষদের ৯টি ওয়ার্ডে চাল বিক্রিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। চার বছর ধরে চলছে এ অনিয়ম। এতদিন অনেক উপকারভোগী জানতেনই না তাদের নামে কার্ড হয়েছিল। সম্প্রতি উপকারভোগীদের কার্ড যাচাই-বাছাই করতে গেলে অনিয়মের বিষয়টি টের পান স্থানীয়রা। এরপর থেকেই ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তৎপরতা চালাচ্ছেন অভিযুক্ত এক ডিলার। আর মামলা হওয়ার পর গা-ঢাকা দিয়েছে একজন ডিলার। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

জানা যায়, ২০১৬ সালে হালসা ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন পাঁচটি ওয়ার্ডে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির ডিলার হিসাবে মনোনীত হয় ২নং ওয়ার্ড মেম্বার ওহাব আলীর স্ত্রী জুলেখা বেগম। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৭৫৪ জন উপকারভোগীদের মাঝে বছরে পাঁচবার জনপ্রতি ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি চাল দেয়ার কথা। অপর চারটি ওয়ার্ডে একই কর্মসূচির আওতায় ৭৫৩ জন উপকারভোগীর মাঝে চাল বিতরণের দায়িত্ব পান ডিলার ইয়াকুব আলী। কিন্তু দীর্ঘ চার বছরেও অনেক উপকারভোগীই জানতেন না তাদের নামে কার্ড হয়েছে। কার্ড নিজেদের কাছেই রেখে চাল তুলে আÍসাৎ করেন ডিলাররা। এতদিন বিষয়টি কেউ টের পায়নি। সম্প্রতি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উপকারভোগীদের কার্ড যাচাই-বাছাইয়ের জন্য কমিটি গঠন করে দিলে অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ে।

৩ নং ওয়ার্ডের আওরাইল গ্রামের বাসিন্দা রেনু বেগম বলেন, তার নামে কার্ড হয়েছিল তা তিনি জানতেনই না। কিছুদিন আগে জানতে পারেন। তারপর ডিলার জুলেখা বেগম ও তার স্বামী বিষয়টি কাউকে না বলতে অনুরোধ করেন। ২নং ওয়ার্ড সুলতানপুরের সফুরুদ্দিন জানান, কয়েকদিন আগে তার কাছ থেকে ৩০০ টাকা নিয়ে ৩০ কেজি চাল দিয়েছে ডিলার জুলেখা। কিন্তু জোর করে একসঙ্গে কার্ডে ১৫ থেকে ২০টা টিপসই নিয়েছে। আওরাইল এলাকার ভুক্তভোগী সামছুন্নাহার ও জহুরা বেগম বলেন, কার্ড যাচাই-বাছাই কার্যক্রম চালু হওয়ার পর ডিলার জুলেখা বেগম ও তার স্বামী ওহাব মেম্বার চাল না পাবার ব্যাপারটি কাউকে না বলতে অনুরোধ করেছেন।

বিপ্রহালসা গ্রামের সুফিয়া বেগম জানান, আমার নামে কার্ড হয়েছে সেটা আমি জানতাম না। পরে এক বস্তা চাল দিয়ে ঘটনাটি কাউকে না জানাতে বলে ডিলার ইয়াকুব আলী। আমি প্রতারণার অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করি। তবে সকল অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা। ডিলার জুলেখা বেগম জানান, তার ডিলারশিপ বাতিল করার জন্য প্রতিপক্ষরা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আর মামলার পর থেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অপর ডিলার ইয়াকুব আলী। তার আগে ইয়াকুব আলী বলেন, তার বিরুদ্ধে চাল আÍসাতের বিষয়টি মিথ্যা।

ইউনিয়ন পরিষদের ৯টি ওয়ার্ডের লোকজনই অনিয়মের স্বীকার হলেও তা জানা নেই হালসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলামের। তবে তিনি অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ বলেন, এ কর্মসূচির আওতায় কতজন উপকারভোগী বঞ্চিত হয়েছেন তা তদন্ত করে বের করে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/news/304281