ফাইল ছবি
৪ মে ২০২০, সোমবার, ২:২৯

দেশব্যাপী করোনা সংক্রমণ: সর্বোচ্চ শনাক্ত ও সুস্থের রেকর্ড

গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ ৮৮৬ শনাক্ত ৬৬৫ মৃত্যু ২ * দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকরা হাততালি দিয়ে সুস্থদের বিদায় জানান

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের ৫৭তম দিনে রোববার স্বস্তি ও উদ্বেগের খবর একসঙ্গে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গত ২৪ ঘণ্টায় একসঙ্গে ৮৮৬ জন করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হয়ে বাসায় ফিরেছেন। এদিন চিকিৎসকরা হাততালি দিয়ে তাদের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে বিদায় জানান।

২৪ ঘণ্টায় মাত্র ২ জন মারা গেছেন। স্বস্তিদায়ক এ দুটি তথ্যের পাশাপাশি দেয়া হয় উদ্বেগের খবর। তা হল গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৬৬৫ জনের দেহে করোনার সংক্রমণ নিশ্চিত হয়েছে। ৮ মার্চের পর একদিনে এটি সর্বোচ্চ সংখ্যা। সব মিলে নতুন শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৪৫৫। মারা গেছেন মোট ১৭৭ জন।

শনিবার পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার সংখ্যা ছিল ১৭৭ জন। কিন্তু রোববার আরও ৮৮৬ জন সুস্থ হওয়ায় এই সংখ্যা লাফ দিয়ে ১০৬৩ জনে দাঁড়িয়েছে। ৮ মার্চের পর এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত ও সুস্থ হওয়ার রেকর্ড সৃষ্টি হল। পাশাপাশি একদিনে মৃত্যু হারও কমেছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাসবিষয়ক নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। এতে যথারীতি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।

তিনি জানান, ২৪ ঘণ্টায় ৮৮৬ জনসহ এযাবৎ চিকিৎসায় সুস্থ হলেন ১ হাজার ৬৩ জন। নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৬৬৫ জন। গত একদিনে ৫ হাজার ৩৬৮ জনকে পরীক্ষা করে এই রোগী পাওয়া গেছে। সেই হিসাবে পরীক্ষায় একদিনে শনাক্তের হার প্রায় ১২ শতাংশ।

অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস যে দু’জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, তাদের মধ্যে একজন শিশু ও কিশোর বয়সের মাঝামাঝি। অর্থাৎ তার বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। আরেকজন ষাটোর্ধ্ব। একজন রোগী নারায়ণগঞ্জের, আরেকজন রংপুরের। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৭৭ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৫ জনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে মোট এক হাজার ৬৩৭ জনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় ৬০ জন আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত মোট ছাড়া পেয়েছেন এক হাজার ৮২ জন।

তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ হাজার ৮৭৪ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়া পেয়েছেন দুই হাজার ১৪৯ জন। এখন পর্যন্ত ছাড়া পেয়েছেন এক লাখ ৯২ হাজার ৫৯২ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৬৭ হাজার ৭৩৯ জন।

প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে এই চিকিৎসক করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকার এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানান। পাশাপাশি বলেন, যদি আমরা তা না করি, তাহলে এই শনাক্তের হার আরও বাড়বে। পাশাপাশি আমি এবং আমার পরিবারের কেউ-ই নিরাপদ থাকব না।

একদিনে রেকর্ড ৮৮৬ জন সুস্থ : দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন সুস্থ হওয়ার হার এতদিন খুবই কম ছিল। রোববার প্রথমবারের মতো এই ভাইরাসজয়ী মানুষের বড় একটা সংখ্যা জানাতে পারলেন চিকিৎসকরা।

এদিন দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ৮৮৬ জনের সুস্থ হওয়ার কথা জানানো হয় ব্রিফিংয়ে।

এ সময় স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, ‘আমাদের নতুন যে ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কমিটি আছে, তাদের তৈরি গাইডলাইনে কীভাবে রোগীদের সুস্থ বলতে পারব বা তারা হাসপাতাল ত্যাগ করতে পারবেন- তা বলা আছে। সেই ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন এমন রোগীর সংখ্যা এক হাজার ৬৩ জন। তার মধ্যে ঢাকা মহানগরীর হাসপাতালগুলো থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৬২৪ জন এবং বিভাগীয় হাসপাতালগুলো থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৪৩৯ জন।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীর মধ্যে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল থেকে ২৯৮ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে ২১৩, ইনফেকশাস ডিজিজ হাসপাতাল থেকে আটজন, ঢাকা মহানগর হাসপাতাল থেকে ৩৮ জন, রিজেন্ট হাসপাতাল থেকে ১৫ জন, সাজেদা ফাউন্ডেশন হাসপাতাল থেকে ২২ জন, রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতাল থেকে ২৬ জন এবং মিরপুর লালকুঠি হাসপাতাল থেকে চারজন সুস্থ হয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, মহানগরীর হাসপাতালগুলো বাদে ঢাকা বিভাগের অন্যান্য হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ২৭২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের হাসপাতালগুলো থেকে ৭২ জন, রাজশাহী থেকে দু’জন, খুলনা থেকে ছয়জন, বরিশাল থেকে ২৯ জন, সিলেট থেকে দু’জন, ময়মনসিংহ থেকে ৩১ জন এবং রংপুর বিভাগের হাসপাতালগুলো থেকে ২৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/303915/