৩ মে ২০২০, রবিবার, ৬:০৯

শিক্ষার্থীদের টিফিনের বিস্কুট গুদামে নষ্ট হচ্ছে

করোনায় বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; ‘স্কুল ফিডিং’ প্রকল্প স্থগিত

প্রাথমিক পর্যায়ের স্কুলশিক্ষার্থীদের দুপুরের টিফিনের জন্য কেনা বিস্কুট নষ্ট হচ্ছে গুদামে। স্কুল বন্ধ থাকায় মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাচ্ছে সেগুলো। ‘স্কুল ফিডিং’ নামে নতুন কর্মসূচীর আওতায় দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুপুরের টিফিন হিসেবে এই বিস্কুট কেনা হয়েছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে সব স্কুল বন্ধ থাকায় সরকারিভাবে কেনা এই বিস্কুট পচে নষ্ট হচ্ছে খুলনা ও রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন গুদামে। তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) পক্ষ থেকে এই বিস্কুট সংশ্লিষ্ট স্কুল শিক্ষকদের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। করোনায় স্কুল বন্ধ থাকলেও এখন বাড়িতে বসেই বিস্কুট পাবে শিক্ষার্থীরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রাথমিক পর্যায়ের স্কুলে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমিয়ে আনতে এবং স্কুলে উপস্থিতি বাড়াতে নানা পদক্ষেপ বা কর্মসূচি নিচ্ছে সরকার। এসব কর্মসূচির মধ্যে সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক সাড়া পড়েছে ‘স্কুল ফিডিং’ কর্মসূচি। এই কর্মসূচির আওতায় ২০২০ সালে অর্থাৎ সরকার ঘোষিত মুজিববর্ষে দেশের ১১৪টি উপজেলায় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের পুষ্টিমান নিশ্চিত করতে দুপুরে টিফিন হিসেবে ভালো মানের বিস্কুট দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কর্মসূচির আওতায় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিস্কুট প্রদানের মাধ্যমে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। এর পর আরো ১৬ উপজেলায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য জেলা উপজেলাতেও এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে।

এ দিকে ‘স্কুল ফিডিং’ প্রকল্পের এক কর্মকর্তা জানান, সরকারের নিজস্ব তহবিল এবং বিশ^ খাদ্য কর্মসূচির অর্থ সহায়তায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। চলতি বছরে দেশের মোট ১১৪টি উপজেলায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও ২০২৩ সালের মধ্যে দেশের সব ক’টি উপজেলা এই প্রকল্পের আওতায় চলে আসবে।

ডিপিই সূত্র জানায়, চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত দেশের মোট ১৬ উপজেলায় দুই হাজার ১৬৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চালু হয়েছে। আর মোট উপকারভোগী শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার লাখ ১০ হাজার ২৩৮ জনে। মোট ১১৪টি উপজেলায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও ৯৪ উপজেলার আর্থিক ব্যয় নির্বাহ করবে সরকার। বাকি ১০ উপজেলায় বিশ^ খাদ্য কর্মসূচির আওতায় খরচ বহন করা হবে। সম্প্রতি স্কুল ফিডিং প্রকল্পের পরিচালকের দফতরে লিখিত অভিযোগ আসে, অন্যান্য জেলার মতো খুলনা ও রাজবাড়ী জেলার কয়েকটি গুদামে স্কুল শিক্ষার্থীদের দুপুরের টিফিনের জন্য কেনা বিস্কুট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই বিস্কুট বিতরণ করা না হলে এগুলোর মেয়াদও চলে যাবে। এই অবস্থায় স্কুল বন্ধ থাকলেও শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি এই বিস্কুট পৌঁছে দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।

এ দিকে দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় ‘স্কুল ফিডিং’ প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক মুহাম্মাদ সোহেল হাসান স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, করোনার প্রাদুর্ভাবে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে। ফলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের অধীন দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় ‘স্কুল ফিডিং’ শীর্ষক প্রকল্পের ১০৪টি উপজেলায় বিস্কুট বিতরণ কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে। এতে প্রকল্প এলাকার শিশুরা বিদ্যালয়ে আসতে না পারায় কাক্সিক্ষত পুষ্টি থেকেও তারা বঞ্চিত হচ্ছে।

এ অবস্থায় খুলনা ও রাজবাড়ী জেলায় মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে এমন মজুদ বিস্কুট শিগগিরই বিভিন্ন বিদ্যালয় ও এনজিও সংরক্ষণাগার থেকে সংগ্রহ করে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় বাস্তবায়ন-সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে সন্নিহিত অঞ্চলের (ক্যাচমেন্ট এরিয়া) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী শিশুদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

নির্দেশনায় আরো বলা হয়, পর্যায়ক্রমে প্রকল্পভুক্ত সব উপজেলায় একই পদ্ধতিতে বিস্কুট বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সহিত সমন্বিত কর্মপরিকল্পনার আলোকে একটি বিতরণ নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়েছে, যা ইতোমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক যথারীতি অনুমোদিত হয়েছে। এ অবস্থায় প্রণীত নির্দেশিকা অনুসরণ করে প্রকল্পভুক্ত সব উপজেলায় স্থানীয় প্রশাসন ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারের প্রত্যক্ষ সমন্বয়ে (করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত গাইডলাইন প্রতিপালন সাপেক্ষে) জরুরি ভিত্তিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী প্রত্যেক শিক্ষার্থীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্থানীয় মজুদ সাপেক্ষে এককালীন মাথাপিছু ২৫ থেকে ৫০ প্যাকেট বিস্কুট বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/499505