৩ মে ২০২০, রবিবার, ৬:০৭

আমদানি অর্থায়নে চ্যালেঞ্জ

করোনায় রফতানি আয় ও রেমিট্যান্সে বড় ধরনের ভাটা; কমে গেছে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রভাবে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় ব্যাপক ভিত্তিতে কমে গেছে। এতে কমে গেছে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ। এমনি পরিস্থিতিতে আগামীতে আমদানি অর্থায়নে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ দেখা দেবে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যাংকাররা। চলতি বছরে ভয়াবহ সঙ্কট উত্তরণের উপায় নিয়েও চিন্তিত হয়ে পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে বাকিতে আমদানি করার অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। সামনে আমদানির বকেয়া ও নিয়মিত দায় পরিশোধ করা কঠিন হতে পারে। রেমিট্যান্সপ্রবাহ না বাড়লে এবং বড় ধরনের বৈদেশিক ঋণ বা অনুদান পাওয়া না গেলে আমদানি দায় পরিশোধে বড় রকম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে দেশ। এতে দেশের সুনামও ক্ষুণœ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

চলমান পরিস্থিতিতে আমদানি অর্থায়নের চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা ও তা উত্তরণের উপায় নিয়ে একটি প্যানেল আলোচনার আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)। এর নেতৃত্ব দেন বিআইবিএমের অধ্যাপক ড. মো: আহসান হাবিব। এতে বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারি, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের প্রধানরা অংশগ্রহণ করেন। ভার্চুয়াল এ প্যানেল আলোচনায় বিভিন্ন ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের প্রধানরা চলমান অবস্থার বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, গত মার্চ মাস থেকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এতে আমাদের রফতানি ও রেমিট্যান্সে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ইউরোপে করোনাভাইরাসের বড় ধরনের ধাক্কায় রফতানি আদেশের বড় অংশ বাতিল হয়ে যায়। এতে গত দুই মাসে যে পরিমাণ রফতানি আয় হয়েছে, চলতি মে ও আগামী কয়েক মাসে তা অনেক কমে যেতে পারে। কারণ, ফেব্রুয়ারি মাসের রফতানি আয় মার্চ ও এপ্রিল মাসে এসেছে। কিন্তু গত এপ্রিল মাসে বলা চলে পোশাক কারখানাগুলো পুরোপুরিই বন্ধ ছিল। এর প্রভাব পড়বে আগামী কয়েক মাসে।

অপর দিকে, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছেন প্রায় ১ কোটির বেশি বাংলাদেশী শ্রমিক ও বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ। করোনার কারণে বাংলাদেশের মতো বেশির ভাগ দেশেরই অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক হয়ে গেছে। ফলে ব্যাপক ভিত্তিতে বিদেশ থেকে বাংলাদেশী শ্রমিক ফিরে আসার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই কয়েক লাখ শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন। ফলে গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্সপ্রবাহ প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে। আগামী কয়েক মাসে রেমিট্যান্স ব্যাপক ভিত্তিতে কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সব মিলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ অনেক কমে যাবে। এ দিকে, করোনাভাইরাসের কারণে ব্যাংকগুলোতে রেমিট্যান্সপ্রবাহ ও রফতানি আয় দেশে আসা প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ায় আমদানি দায় পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে ব্যাংকগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাকিতে আমদানি দায় পরিশোধের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। আগে যেখানে দেশে পণ্য আসার তিন মাসের মধ্যে ও বিশেষ বিবেচনায় আরো তিন মাস বাড়িয়ে ছয় মাসের মধ্যে আমদানি দায় পরিশোধ করার অনুমোদন দেয়া হতো। এখন চলমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন পণ্যের আমদানি দায় পরিশোধের সময়সীমা বাড়িয়ে এক বছরের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কোনো কোনো পণ্যের আমদানি দায় পরিশোধের সময়সীমা তিন থেকে ছয় মাস পার হয়ে গেছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে এসব আমদানি দায় পরিশোধ করতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত আমদানি দায় পরিশোধের চাপতো থাকবেই।

এমনি পরিস্থিতিতে সামগ্রিক আমদানি দায় পরিশোধে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে দেশ। কারণ রফতানি ও রেমিট্যান্সপ্রবাহ ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ কমে যাবে। সব মিলেই এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে পড়বে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এ সঙ্কটের সময় বড় আকারের বৈদেশিক অনুদান বা ঋণ পাওয়া গেলে সঙ্কট কিছুটা মোকাবেলা করা যাবে। অন্যথায় সঙ্কট ভয়াবহ রূপ নেবে।

ইতোমধ্যেই সরকারের বিভিন্ন কেনাকাটা যেমন বিপিসির তেল আমদানি, এলএনজি আমদানি, পদ্মা সেতুর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ আমদানির দায় মেটাতে ব্যাংকগুলো ব্যাপক সঙ্কটের মুখে পড়েছে। এ সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে গত দুই মাসে ৭৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার ব্যাংকগুলোকে সরবরাহ করেছে। কিন্তু বেসরকারি অন্যান্য পণ্য আমদানির দায় ব্যাংকগুলো বলা চলে পরিশোধ করতে পারছে না। অপর দিকে রিজার্ভ থেকে আয়ও কমে গেছে। এতে চাপে পড়ে যাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। সব মিলে সময়মতো আমদানি দায় পরিশোধ করার ক্ষেত্রে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে দেশ। সঙ্কট মোকাবেলার জন্য বৈদেশিক অনুদানের দিকেই বেশি নজর দিতে হবে। একই সাথে করোনাভাইরাসের পরবর্তী বিশ্বে বাংলাদেশী শ্রমিক বেশি হারে পাঠানোর উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব হবে না বলে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/499517/