ইলিশ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলেরা : নয়া দিগন্ত
১ মে ২০২০, শুক্রবার, ৪:৪৭

আজ থেকে ইলিশ ধরতে নামছেন চাঁদপুরের জেলেরা

২ মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ

পদ্মা-মেঘনায় দু’মাস ইলিশ মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ থেকে জেলেরা তাদের নৌকা ও জাল নিয়ে মাছ শিকারে নামছে। চাঁদপুর নৌ-সীমানায় পদ্মা-মেঘনায় মার্চ-এপ্রিল দু’মাস ইলিশ মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে ৩০ এপ্রিল মধ্যরাতে। দুই মাস অলস সময় কাটানোর পর আজ শুক্রবার থেকে নদীতে পুরোদমে মাছ ধরতে নামছে চাঁদপুরের ৫১ হাজার জেলে। চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার চর আলেকজেন্ডার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার নদী উপকূলীয় এলাকায় হচ্ছে মাছধরার উৎসব। এখন নদীর পুরো বুকজুড়ে শুধু জেলে আর নৌকা। এ কারণে স্বস্তি ফিরে এসেছে জেলে পরিবারগুলোতে।

চাঁদপুরে ৫১ হাজার ১৯০ জন জেলে আছে। এসব জেলের জন্য সরকার নিষেধাজ্ঞার সময় ২০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়েছে। এ দিকে জেলেরা নিষেধাজ্ঞা মৌসুমে ২০ কেজি করে চালে তাদের সংসার চালানোর যাবে না বলেও দাবি করেছিল। অনেক জেলে দাবি করেছে তারা পুরো ২০ কেজি চাল পায়নি। পেয়েছে ১৫ থেকে ১৭ কেজি করে। আবার অনেকেই একেবারেই চাল পায়নি। করোনাভাইরাসের কারণে অনেক জেলে ঘর থেকে না বের হওয়ার কারণে কোনো খাদ্যসামগ্রী পায়নি বলে অভিযোগ করেছে অনেক জেলে পরিবার।

চাঁদপুরের মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান জানান, জাটকা রক্ষার কর্মসূচি সফল হওয়ায় এ বছর ইলিশের উৎপাদন বাড়বে। কেননা বর্তমানে ইলিশের অভয়াশ্রমের পরিধি বেড়েছে। জাটকা সংরক্ষণের জন্য সরকার দুই মাস চাঁদপুরসহ দেশের আরো কয়েক স্থানে অভয়াশ্রম কেন্দ্র ঘোষণা করে। এ সময় নদীতে যেকোনো ধরনের মাছ আহরণ, পরিবহন, মওজুদ, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়ে ছিল। ড.আনিছুর রহমান আরো বলেন, এবার পানির গুণাগুণ ও খাদ্যের উপাদান অনেকটাই ভালো রয়েছে। করোনার কারণে জাটকা রক্ষা কর্মসূচিতে কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছিল। তবুও উৎপাদন ব্যাহত হবে না। দেশে গেলো অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদন ছিল পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার টন। যেখানে ২০০২-০৩ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল এক লাখ ৯৯ হাজার টন। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা বেড়ে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টানে হওয়ার কথা রয়েছে। আগামী ৫ বছরে ইলিশের উৎপাদন বাড়বেই।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল্লাহ বাকী বলেন, এবার ইলিশ উৎপাদন ব্যহত হওয়ার কথা নয়। কেননা জেলেদের পুনর্বাসনে সরকার কর্তৃক কর্মসূচি ভালোভাবেই চলছে। কিছু অসাধু জেলে কর্তৃক কোনো কোনো স্থানে জাটকা কিছুটা নিধন হলেও দেশের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যহত হবে না। জাতীয় মাছ ইলিশ রক্ষায় সরকার প্রতি বছর জাটকা ইলিশ রক্ষায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাস এবং অক্টোবর মাসে মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিন নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসছে। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে মেঘনা নদীর মতলব উত্তরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চরআলেকজেন্ডার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এবং পদ্মার ২০ কিলোমিটার এলাকায় সকল প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। যার ৬০ কিলোমিটার পড়েছে চাঁদপুর এলাকায়। আর এ কারণে চাঁদপুর সদর,হাইমচর, মতলব দক্ষিণ ও উত্তর উপজেলার ৫১ হাজার ১৯০ জন জেলে কর্মহীন হয়ে পড়ে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য অধিদফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার টন ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে। গত দেড় দশকে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে আড়াই গুণের বেশি।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/499189