২১ এপ্রিল ২০২০, মঙ্গলবার, ৬:১৮

নতুন ৪৯২-সহ শনাক্ত ২৯৪৮: করোনায় মৃত্যু একশ’ ছাড়াল

গত ২৪ ঘণ্টায় ১০-সহ প্রাণ গেল ১০১ জনের * ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের পাশাপাশি বহুগুণ আক্রান্ত বাড়ছে গাজীপুর ও কিশোরগঞ্জে

দেশে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ১০১। নতুন ৪৯২ জনের দেহে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ২৯৪৮ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮৫ জন। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সুস্থ হওয়ার চেয়ে মৃত্যুহার বেশি। প্রতিদিন গড়ে মারা গেছেন ৩ জন, সুস্থ হয়েছেন ২ জন।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির ওপর সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুঃসংবাদ জানিয়ে বলা হয়, আগের দিনের তুলনায় আক্রান্ত শনাক্ত এবং মৃত্যুর হার বেশি। ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্ত ৪৯২ জন এবং আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় ১৮০ জন বেশি। আর মৃত্যু বেশি ৩ জন। অপরদিকে এদিনের মৃত্যুর সংখ্যা গত তিন দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে গত শুক্রবার ২৪ ঘণ্টার হিসাবে সর্বোচ্চসংখ্যক ১৫ জনের মৃত্যুর খবর আসে। পরে শনি ও রোববার যথাক্রমে ৯ ও ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এতে জনমনে কিছুটা স্বস্তি নামছিল। কিন্তু সোমবার মৃতের সংখ্যা জনগণের মধ্যে ফের আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

বর্তমানে দেশে করোনার সামাজিক সংক্রমণ বেড়েছে। ইতোমধ্যে গত শুক্রবার সারা দেশ ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি তিনটি নির্দেশনা জারি করেছে। এগুলো হল : একেবারেই অপরিহার্য প্রয়োজন ছাড়া এক এলাকার মানুষ আরেক এলাকায় যেতে পারবে না। সন্ধ্যা ৬টার পর কেউ ঘর থেকে বের হতে পারবে না। এমনকি অপ্রয়োজনে দিনের বেলায়ও বের হতে পারবে না। এই তিনটি কাজই আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। কিন্তু এসব নির্দেশনা কার্যকর হচ্ছে না। জনগণও বুঝতে চাচ্ছে না এর ভয়াবহতা। যে কারণে পাওয়া যাচ্ছে না প্রত্যাশিত ফল। খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও বিষয়টি রোববারের নিয়মিত আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, যেভাবে আমরা আশা করছি লকডাউন সেভাবে কাজ করছে না। এর পরিণতি হিসেবে করোনাভাইরাসে একের পর এক আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন জেলা। কোনোদিন একটি জেলা করোনা রোগীবিহীন দেখা যাচ্ছে। কিন্তু পরদিনই সেখানে পরীক্ষায় শনাক্ত হচ্ছে এ রোগী। এই প্রক্রিয়ায় এখন পর্যন্ত ৬৪ জেলার মধ্যে ৫৫টিতেই (সম্ভাব্য) এই মরণঘাতী ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। নতুন নতুন এলাকায় এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। যে কারণে একের পর এক লকডাউন করা হচ্ছে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা।

সোমবারের ব্রিফিং : স্বাস্থ্য অধিদফতরের ব্রিফিংয়ে ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এর অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। তার সঙ্গে ছিলেন অধিদফতরের কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদুল্লাহ। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকদের কাছে নিম্নমানের মাস্কসহ অন্যান্য চিকিৎসাসামগ্রী পাঠানোর ব্যাপারে গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে কঠোর সমালোচনা হচ্ছে তার জবাব দেন এই পরিচালক। পাশাপাশি এ সংক্রান্ত যে কোনো অভিযোগ সরাসরি অধিদফতরে জানানোর জন্য তিনি চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, একটি কমিটির মাধ্যমে মানসম্পন্ন পণ্য নির্বাচন ও সংগ্রহ শেষে সরবরাহ করা হয়।

ডা. নাসিমা সুলতানা তার প্রতিবেদনে জানান, রোববারের তুলনায় সোমবার শনাক্ত অনেক বেশি। মৃত্যু একশ’ ছাড়িয়ে গেছে। করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজার ৭৭৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। আর এখন পর্যন্ত মোট পরীক্ষা করা হয়েছে ২৬ হাজার ৬০৪টি। রোববার থেকে সোমবার নমুনা সংগ্রহ হয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি এবং পরীক্ষা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।

তিনি বলেন, নতুন যে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে তার মধ্যে আরও ৪৯২ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ফলে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৯৪৮। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ১০ জন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১০১ জনে। এ ছাড়া সুস্থ হয়ে উঠেছেন আরও ১০ জন। ফলে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা ৮৫ জন।

এই চিকিৎসক জানান, নতুন করে মৃত ১০ জনের মধ্যে পুরুষ আটজন এবং নারী দু’জন। বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১০ জনের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব চারজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব চারজন এবং চল্লিশোর্ধ্ব দু’জন। তাদের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় মারা গেছেন পাঁচজন, নারায়ণগঞ্জে চারজন এবং নরসিংদীতে একজন।

তিনি বলেন, গাজীপুরে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। নতুন শনাক্ত ৪৯২ জনের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক ১৯ দশমিক ৫ শতাংশই গাজীপুরের। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং নরসিংদীর রোগী ৬ শতাংশ। ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জে আগের মতোই অনেক বেশি আছে।

বুলেটিনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ৫৭ জনকে। বর্তমানে মোট আইসোলেশনে আছেন ৭১৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৪০ জন। এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৫৭৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে ৩০ হাজার ৮০৯ জনকে। এ পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে এক লাখ ৪৯ হাজার ৬২৬ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে ২৭০ জনকে। এ পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৮৮ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে ৩১ হাজার ৭৯ জনকে এবং এ পর্যন্ত নেয়া হয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার ৯৪০ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন এক হাজার ৫৪৫ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড়পত্র পেয়েছেন ৭৫ হাজার ৮১২ জন। বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ৭৫ হাজার ৭৪৭ জন এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন চার হাজার ৬৫৫ জন। সব মিলিয়ে বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে আছেন ৮০ হাজার ৪০২ জন।

বুলেটিন উপস্থাপনকালে করোনার বিস্তার রোধে সবাইকে বাড়িতে থাকার এবং স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়।

অভিযোগ সরাসরি সিএমএসডিকে জানান : অনলাইন প্রেস ব্রিফিংয়ে সিএমএসডি পরিচালক (ভাণ্ডার ও সরবরাহ) বলেন, দু-এক সপ্তাহের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ডেডিকেটেডসহ দেশের সব হাসপাতালে এন-৯৫-এর সমমানের মাস্ক সরবরাহ করা সম্ভব হবে। বর্তমানে সরবরাহ সীমিত থাকায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরামর্শ অনুযায়ী নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ও পিসিআর এবং কিছু হাসপাতালের ওয়ার্ডে এন-৯৫ সরবরাহ করা হচ্ছে। এখন দেশে প্রতিদিন এক লাখ উন্নতমানের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) উৎপাদন ও সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সিএমএসডি তার কারিগরি কমিটি দ্বারা পরীক্ষাকৃত ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী সমূহ (পিপিই) ও অন্যান্য উপকরণ নিয়মিতভাবে দেশজুড়ে বিতরণ করে যাচ্ছে। বিতরণকৃত পিপিইগুলোর মধ্যে প্রায় ৭০ ভাগই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের নীতিমালা মেনে দেশীয় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রস্তুতকৃত। বাকি ৩০ ভাগ আমদানি নীতিমালা অনুসরণ করে চীন থেকে আমদানিকৃত।

অভিযোগ সরাসরি সিএমএসডিকে জানান : অনলাইন প্রেস ব্রিফিংয়ে সিএমএসডি পরিচালক (ভাণ্ডার ও সরবরাহ) বলেন, দু-এক সপ্তাহের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ডেডিকেটেডসহ দেশের সব হাসপাতালে এন-৯৫-এর সমমানের মাস্ক সরবরাহ করা সম্ভব হবে। বর্তমানে সরবরাহ সীমিত থাকায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরামর্শ অনুযায়ী নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ও পিসিআর এবং কিছু হাসপাতালের ওয়ার্ডে এন-৯৫ সরবরাহ করা হচ্ছে।

এখন দেশে প্রতিদিন এক লাখ উন্নতমানের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) উৎপাদন ও সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সিএমএসডি তার কারিগরি কমিটি দ্বারা পরীক্ষাকৃত ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী সমূহ (পিপিই) ও অন্যান্য উপকরণ নিয়মিতভাবে দেশজুড়ে বিতরণ করে যাচ্ছে। বিতরণকৃত পিপিইগুলোর মধ্যে প্রায় ৭০ ভাগই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের নীতিমালা মেনে দেশীয় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রস্তুতকৃত। বাকি ৩০ ভাগ আমদানি নীতিমালা অনুসরণ করে চীন থেকে আমদানিকৃত।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/300072/