১৯ এপ্রিল ২০২০, রবিবার, ১২:০১

আক্রান্ত দুই হাজার ছাড়িয়ে, মৃত্যু ৮৪

ঢাকার পর গাজীপুরে রোগী বেশি

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যু হয়েছে মোট ৮৪ জনের। নতুন করে আরো মারা গেছেন ৯ জন। আর আক্রান্ত হয়েছেন ৩০৬ জন। আক্রান্তের সংখ্যার দিকে ঢাকার পরেই গতকাল শনিবার নারায়ণগঞ্জের পরিবর্তে বেড়ে গেছে গাজীপুরের অবস্থান। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা এ তথ্য জানান। এ দিকে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আরো সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে সিলেটে একজন, ঢাকার সাভারে একজন, টাঙ্গাইলে একজন, রাজশাহীতে একজন, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে একজন, কুমিল্লায় একটি শিশু এবং বরগুনায় একজন রয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরো ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ছয়জন। বাকি তিনজন ঢাকার বাইরের জেলাগুলোর বাসিন্দা। গতকাল পর্যন্ত কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ৮৪ জনের। অন্য দিকে গতকাল সকাল পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজার ১১৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ৩০৬ জনকে করোনা আক্রান্ত পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের মোট আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজার ১৪৪ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা। বুলেটিনে বিস্তারিত তুলে ধরেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা।

অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, যে ৯ জন মারা গেছেন তাদের মধ্যে ৬০ বছর ঊর্ধ্বে চারজন। ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে একজন, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সের মধ্যে দু’জন, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে একজন এবং একজনের বয়স জানানো যায়নি। তাদের মধ্যে ছয়জন ঢাকার, দু’জন নারায়ণগঞ্জের ও একজন সাভারের। গত ২৪ ঘণ্টায় যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে ২১ থেকে ৩০ বছরের বয়সীরা ২৭ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা ২২ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সীরা ১৯ শতাংশ। নতুন সংক্রমিতদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৬২ শতাংশ, অবশিষ্টরা নারী।

ডা: সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আটজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। পরপর দু’টি পরীক্ষায় তাদের দেহে ভাইরাস পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে সর্বমোট ৬৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন। অন্য দিকে দুই হাজার ১৪৪ জন শনাক্ত রোগীদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৫৬৪ জন। অবশিষ্টরা হোম আইসোলেশনে আছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১১ জন আছেন আইসিইউতে। অবশিষ্ট আক্রান্তের অবস্থা মোটামুটি স্থিতিশীল।

ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, জেলাভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি ৩২ শতাংশ আক্রান্ত ঢাকা শহরে। এরপর আছে গাজীপুর। ঢাকার পর নারায়ণগঞ্জে এর আগে বেশি করে শনাক্ত পাওয়া গিয়েছিল। এখন তা গাজীপুর থেকে পাওয়া যাচ্ছে। গাজীপুরের পরই নতুন সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জে।

নাসিমা সুলতানা জানান, সারা দেশে এখন পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২১ হাজার ১৯১টি। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে ৬৬ জনকে। মোট আইসোলেশনে আছেন ৫৯৯ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে মুক্ত হয়েছেন ৩২ জন। সব মিলিয়ে মুক্ত হয়েছেন ৫১২ জন।

শিবচরে নারী চিকিৎসক ও তার শিশুকন্যা আক্রান্ত : শিবচর (মাদারীপুর) সংবাদদাতা জানান, দেশের প্রথম লকডাউন হওয়া শিবচরে এক নারী চিকিৎসক ও তার শিশুকন্যা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে শিবচর উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৭। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক নারী চিকিৎসক ও তার সাত বছরের শিশুকন্যা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর আগে তার ডাক্তার স্বামী করোনা আক্রান্ত হন। তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে চিকিৎসক স্ত্রীর কাছে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডক্টর’স কোয়ার্টারে বেড়াতে এসেছিলেন। বর্তমানে তিনি ঢাকার বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

শেরপুরে দুই চিকিৎসকসহ আরো ছয়জন শনাক্ত : মোট আক্রান্ত ১৫

শেরপুর সংবাদদাতা জানান, শেরপুরে দুই চিকিৎসক, এক পুলিশ কর্মকর্তা, হাসপাতালের দুই কর্মচারীসহ ছয়জন নতুন করো করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তারা হলেন নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সৌরভ সরকার, নুমান, ঝিনাইগাতী থানার (ওসি) আবুবকর সিদ্দিক, শেরপুর জেলা হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার জহুরুল আলম, সিভিল সার্জন অফিসের অফিস সহায়ক হিরু মিয়া ও ধলা ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের নারায়ণগঞ্জফেরত পোশাককর্মী ঝুমল আলী। এ নিয়ে জেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলেন ১৫ জন। তাদের মধ্যে দু’জন নারী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এ ঘটনায় শেরপুর জেলা হাসপাতাল ও নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জীবাণুমুক্ত না করা পর্যন্ত সাময়িক লকডাউন করা হয়েছে।

মুন্সীগঞ্জে আরো আক্রান্ত ৬, একজনের মৃত্যু : মুন্সীগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, মুন্সীগঞ্জে নতুন করে আরো ছয়জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে সদর উপজেলায় তিনজনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া টংগীবাড়ি উপজেলায় দু’জন ও সিরাজদিখানে একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা ৪৩ জনে পৌঁছাল। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার হাতিমারা থেকে হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই যে রোগীর মৃত্যু হয়েছে তার স্যাম্পল নিয়ে পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে পাঠালে গতকাল তার রিপোর্ট পজেটিভ আসে। এ ছাড়া মুক্তারপুরের দু’জন যাদের বয়স ২৪ ও ২৭ বছর। টংগীবাড়িতে যে দু’জন আক্রান্ত হয়েছেন তারা নারায়াণগঞ্জ থেকে লাশ এনে দাফন করা আবদুল হামিদের আত্মীয়। যাদের একজনের বয়স ২৪ অপর জনের বয়স ৪২। তাদের দু’জনের বাড়িই মান্দ্রা। সিরাজদিখান আকবরনগর এলাকার একজন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন যার বয়স ৭০ বছর।

আজ দুপুর ১২টা থেকে বরগুনা জেলা লকডাউন, আইসোলেশনে থাকা একজনের মৃত্যু : বরগুনা সংবাদদাতা জানান, বরগুনা জেলায় আবারো নতুন করে আরো চারজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এই চারজনের একজন মৃত্যুবরণও করেছেন। এ নিয়ে জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ জনে। আর মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। এ দিকে একের পর এক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় গতকাল শনিবার দুপুর ১২টা থেকে পুরো জেলা লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ। বরগুনার সিভিল সার্জন ডা: হুমায়ূন শাহিন খান জানান, এ জেলায় নতুন যে চারজন আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে বরগুনা সদর উপজেলায় দু’জন, বামনা উপজেলায় একজন ও বেতাগী উপজেলায় একজন রয়েছেন। এ ছাড়াও বরগুনা সদর উপজেলায় যে দু’জন আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে একজন বরগুনা পৌরসভার বাসিন্দা।

কুমিল্লায় উপসর্গ নিয়ে শিশুর মৃত্যু : কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার হোমনায় করোনার উপসর্গ নিয়ে নুসরাত (তাথৈ) নামে সাড়ে চার বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার মাথাভাঙা ইউনিয়নের বিজয়নগর থেকে শিশুটিকে সর্দি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে শুক্রবার ভোরে পরিবারের লোকজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। পর্যবেক্ষণ করে প্রাথমিকভাবে করোনা সন্দেহ হলে শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বিজয়নগরের ওই বাড়িসহ পাশর্^বর্তী আরো কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করেছে স্থানীয় প্রশাসন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আবদুছ ছালাম সিকদার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরো জানান, ওই শিশুটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মায়ারামপুর গ্রামের নূর মোহাম্মদ (সুমন মিয়ার) মেয়ে। তারা ঢাকায় থাকত, শিশুটির মা অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ২০-২৫ দিন আগে ঢাকা থেকে বাবার বাড়ি হোমনা উপজেলার মাথাভাঙা ইউনিয়নের বিজয়নগর গ্রামে আসে। কিছু দিন আগে শিশুটির নানাও কক্সবাজার থেকে বাড়ি এসেছেন। কয়েক দিন আগে থেকেই শিশুটি সর্দি ও জ্বরে ভুগছিল।

গোপালগঞ্জে আরো চারজন শনাক্ত, মোট আক্রান্ত ২১

গোপালগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, গোপালগঞ্জে নতুন করে আরো চারজনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে গোপালগঞ্জে মোট ২১ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হলো। সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, শনাক্ত চারজনের বাড়ি কাশিয়ানী উপজেলার কাশিয়ানী সদর, মহেশপুর ও সাজাইল ইউনিয়নে। তারা ঢাকা থেকে করোনার উপসর্গ নিয়ে কাশিয়ানীতে আসেন। গোপালগঞ্জের পাঁচ উপজেলার মধ্যে কাশিয়ানীতে এই প্রথম করোনা শনাক্ত হলো।

নাগরপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলের নাগরপুরে করোনাভাইরাসের থাবায় ২১ বছরের আরো এক যুবক আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি উপজেলার সহবতপুর ইউনিয়নের নন্দপাড়া গ্রামের যুবক। টাঙ্গাইল জেলা ভূঞাপুর উপজেলায় একজন করোনা শনাক্ত হলে তার সংস্পর্শে আসা এমন তথ্যের ভিত্তিতে ওই যুবকের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠালে করোনাভাইরাস পজেটিভ রিপোর্ট পাওয়া যায়। এ নিয়ে উপজেলায় মোট করোনায় আক্রান্ত হলেন তিনজন। যার সবাই যুবক।

নেত্রকোনায় ২২ জন শনাক্ত : নেত্রকোনা সংবাদদাতা জানান, নেত্রকোনা জেলায় গতকাল শনিবার পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ২২ ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। ৩৩০ জনের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পর ২২ ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়। আক্রান্তদের মধ্যে বারহাট্টা উপজেলায় ১০ জন, নেত্রকোনা সদরে চারজন, খালিয়াজুরিতে তিনজন, কেন্দুয়ায় একজন, মোহনগঞ্জে দু’জন ও কলমাকান্দা উপজেলায় দু’জন। আক্রান্তদের মধ্যে বারহাট্টা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওয়ার্ডবয়, কলমাকান্দায় ঝাড়–দার ও খালিয়াজুরিতে এক নার্স রয়েছেন।

আগৈলঝাড়ায় চিকিৎসক দম্পতি করোনায় আক্রান্ত : আগৈলঝাড়া (বরিশাল) সংবাদদাতা জানান, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনায় আক্রান্ত নারী চিকিৎসকের পর এবার তার স্বামীও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বরিশাল জেলা প্রশাসন ও বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা: বাকির হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: বখতিয়ার আল মামুন জানান, আক্রান্ত স্বামী-স্ত্রী দু’জনই আগৈলঝাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক। আক্রান্ত নারী চিকিৎসক বাকাল ইউনিয়নের পয়সারহাট উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন। তাদের মধ্যে প্রথমে নারী চিকিৎসক গত সোমবার আক্রান্তের খবর নিশ্চিত হওয়ার পরে তার স্বামী চিকিৎসককেও হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে রেখে পর দিন বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়। রিটেস্টের জন্য ওই নারী চিকিৎসকের সাথে তার স্বামীর নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল। শুক্রবার প্রাপ্ত ঢাকার রি-টেস্ট রিপোর্টেও ওই নারী চিকিৎসক ও তার স্বামীর করোনা পজেটিভ আসে। তারা দু’জনই বর্তমানে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

শরীয়তপুর সংবাদদাতা জানান, শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যায় নতুন করে এক নারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে এ জেলায় ছয়জন করোনায় আক্রান্ত হলেন। এ ঘটনায় ডামুড্যার ওই নারীর পরিবারসহ আশপাশের ৩০টি পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টিন করে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের করোনা কন্ট্রোল রুমের সমন্বয়ক ডা: আবদুর রশিদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রাজশাহীতে আইসোলেশনে থাকা কলেজছাত্রের মৃত্যু : রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী সংক্রামক ব্যাধি (আইডি) হাসপাতালে আইসোলেশনে থাকা এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি ওই কলেজছাত্রকে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে স্থাপিত করোনা ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তিনি মারা যান। মৃত কলেজছাত্রের নাম মুনীর গাজী (১৯)। তিনি নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার মাধনগর গ্রামের আলম গাজীর ছেলে। মুনীর মাধনগর ডিগ্রি কলেজের ছাত্র ছিলেন। মৃত কলেজছাত্রের বাবা আলম গাজী সাংবাদিকদের জানান, তার ছেলে কয়েক দিন আগে হামে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এরপর তাকে গ্রামের চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন দেন। কিন্তু তার পর তার শরীর কুঁকড়ে গিয়ে আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তাকে নাটোর জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রামেক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাকে রাজশাহী আনা হয়। রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে করোনা রোগীদের আইসোলেশন কেন্দ্র আইডি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে তার মৃত্যু হয়।

কীর্তনখোলায় ভাসমান আইসোলেশন ইউনিট হিসেবে প্রস্তুত সুরভী-৮ লঞ্চ : বরিশাল ব্যুরো জানায়, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত (কোভিড-১৯) রোগীদের চিকিৎসায় বরিশাল-ঢাকা রুটের যাত্রীবাহী লঞ্চ সুরভী-৮-কে ভাসমান আইসোলেশন ইউনিট হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সহযোগিতায় ও বরিশাল জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় এ ভাসমান আইসোলেশন ইউনিট প্রস্তুত করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে বরিশাল নদী বন্দরের টার্মিনালে ‘ভাসমান আইসোলেশন ইউনিট’ হিসেবে লঞ্চটিকে ঘোষণা করেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক আজমল হুদা মিঠু সরকার জানান, লঞ্চটিতে ৪২টি সিঙ্গেল, ৩৪টি ডাবল, চারটি ফ্যামিলি, দু’টি সেমি ভিআইপি ও চারটি ভিআইপি কেবিন আছে। সিভিল সার্জনের চাহিদা পেলেই লঞ্চটি হস্তান্তর করা হবে।

কটিয়াদীতে কৃষকের মৃত্যু : কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলায় শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে ৫০ বছরের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে কটিয়াদী উপজেলার সহশ্রাম ধূলদিয়া ইউনিয়নের নখলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মৃত ব্যক্তি ওই ইউনিয়নের নখলা গ্রামের বাসিন্দা। গত শুক্রবার সকালে ধূলদিয়া ইউনিয়নের নখলা-পারদিয়াকুল বড়হাওর এলাকায় নিজের জমিতে ধান কাটতে যান। পরে শরীরে জ্বর অনুভব করলে জমি থেকে বাড়িতে চলে আসেন। সন্ধ্যায় গ্রাম্য ডাক্তারের কাছ থেকে ওষুধ খেলে সুস্থ হন তিনি। পরে গতকাল সকালে আবারো জমিতে ধান কাটতে গেলে বেলা ১১টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকতারুন্নেছা জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল করোনা আইসোলেশন কেন্দ্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দু’জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শনিবার হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তারা দু’জনই সুস্থ আছেন। এ ছাড়া নতুন করে হাসপাতালে আরো দু’জন শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছে। শনিবার বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আরএমও শফিক আমিন কাজল জানান, বগুড়ার আইসোলেশন কেন্দ্রে নতুন করে দু’জন ভর্তি হয়েছেন। তাদের একজন বগুড়া সদরের নারী ও অপরজন শিবগঞ্জের পুরুষ রোগী। তাদের শ্বাসকষ্ট রয়েছে। নমুনা সংগ্রহ করে টেস্ট করা হবে। আগে পাঠানো কোনো টেস্টের ফলাফল পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া আদমদীঘির পুলিশ কনস্টেবল এখনো বেশ ভালো আছেন।

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, সাতক্ষীরায় বিদেশফেরত মোট তিন হাজার ৫৩৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে তিন হাজার ২২৫ জনকে। এ ছাড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশনে রয়েছেন তিনজন এবং যুব উন্নয়ন অধিদফতরের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন আরো ২১ জন। এ দিকে সাতক্ষীরা জেলা থেকে মোট ১৯৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে গতকাল শনিবার পর্যন্ত ২৮ জনের রিপোর্ট সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পৌঁছেছে। ২৮টি রিপোর্টই নেগেটিভ এসেছে। বাকিদের রিপোর্ট এখনো পাওয়া যায়নি।

রাজবাড়ীতে ৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন : বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী) সংবাদদাতা জানান, রাজবাড়ী জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে থাকা ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। তারা নিজেদের বাড়ি ফিরে গেছেন। গতকাল শনিবার দুপুরে সুস্থ হওয়া ওই পাঁচজনকে ছাড়পত্র প্রদান করে স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে তাদের আরো দুই সপ্তাহ হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে পাংশা উপজেলার একজন করোনা আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন আছেন।

ফরিদপুরে আরো দু’জন শনাক্ত

ফরিদপুর সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুর জেলায় আরো দু’জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। জেলার নগরকান্দা উপজেলার ডাঙ্গি ইউনিয়নে এক মধ্য বয়সী নারী ও বোয়ালমারীর গুনবহা ইউনিয়নের চন্দনী গ্রামে নারায়ণগঞ্জফেরত এক জাহাজ শ্রমিকের পরীক্ষার পর করোনা পজিটিভি এসেছে বলে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা: ছিদ্দীকুর রহমান জানান। এ পর্যন্ত ফরিদপুরে ১২৪ জনের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের মধ্যে ৮৩ জনের রিপোর্ট পেয়েছি। চারজন করোনা পজেটিভ এসেছে। নগরকান্দার শহীদনগর উপজেলায় করোনা উপসর্গ নিয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।

তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) সংবাদদাতা জানান, পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের নাদিরাগছ গ্রামে ঢাকাফেরত এক নারীর শরীরে করোনা পজেটিভ হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত ১৫ এপ্রিল ওই মহিলার স্বামী এলাকায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, তেঁতুলিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৪০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজে পাঠিয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত ২৩ জনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ওই মহিলার রিপোর্ট পজেটিভ আসে।

নোয়াখালী সংবাদদাতা জানান, নোয়াখালীতে আরো দুইজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রশাসন দু’টি বাড়ি লকডাউন করেছে। চট্টগ্রামে মারা যাওয়া নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চর হাজারী ইউনিয়নের মানসিক প্রতিবন্ধী মমতাজ বেগমের (৩১) শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তার বাবা ও ভাইয়ের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামে পাঠান। মৃত মমতাজ বেগম চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রামে যান। সেখানে গত ১৩ এপ্রিল দুপুরে হঠাৎ করোনার কোনো উপসর্গ ছাড়াই তার মৃত্যু হয়। তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। পরে চট্টগ্রাম থেকে লাশ বাড়িতে নিয়ে আসে এবং পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার শরীরে করোনা শনাক্ত হওয়ায় প্রশাসন বাড়িটি লকডাউন করে। এ দিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা এক যুবকের শরীরের করোনা পজেটিভ এসেছে। আক্রান্ত ওই যুবক নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার বাটাইয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। নোয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা: মোমিনুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নরসিংদী সংবাদদাতা জানান, নরসিংদীতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শনিবার বিকেল পর্যন্ত জেলায় নতুন করে আরো ১২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। নতুন আক্রান্ত ১২ জনসহ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০৪ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে দুইজন ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন। নরসিংদী জেলায় এ পর্যন্ত ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রকল্প কর্মকর্তা, সাংবাদিক, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিশুসহ ১০৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

কুমুদিনী হাসপাতালে গৃহবধূর মৃত্যু : মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কুমুদিনী হাসপাতালে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে করোনা আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান বলে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ও সহকারী অধ্যাপক ডা: এ বি এম আলী হাসান জানিয়েছেন। গৃহবধূর নাম কনা বেগম (৩০)। তিনি টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার জথুকী গ্রামের মোশারফ হোসেনের স্ত্রী। মোশারফ হোসেন জানান, গত ১৫ এপ্রিল প্রসবজনিত ব্যথা ও রক্তক্ষরণ নিয়ে তার স্ত্রী ভর্তি হন। গতকাল ১৭ এপ্রিল তার অপারেশন হয়। অপারেশনের পর থেকেই তার শরীরের জ্বর, তাপমাত্রা বেড়ে খিঁচুনি ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। সাথে সাথে তাকে করোনা আইসোলেশন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। গতকাল আইসোলেশন ওয়ার্ডে তিনি মারা যান।

রাজশাহীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে তিনজন আইসোলেশনে : রাজশাহী ব্যুরো জানায়, জ্বর-সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে আটজন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে করোনা উপসর্গ থাকায় তিনজনকে আইসোলেশনে ও পাঁচজনকে পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ডে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। করোনা নির্ণয় ও চিকিৎসক টিমের আহ্বায়ক ডা: আজিজুল হক আজাদ গতকাল শনিবার সকালে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রাজশাহী সংক্রামক ব্যাধি (আইডি) হাসপাতালে স্থাপিত আইসোলেশনে যে তিনজনকে ভর্তি করা হয়েছে তাদের মধ্যে দুইজনের বাড়ি রাজশাহী নগরীর কলাবাগান ও শালবাগান এলাকায়। অপরজনের বাড়ি নওগাঁর মহাদেবপুরে। তাদের কিছুটা করোনার উপসর্গ রয়েছে। তাই তিনজনের নমুনা সংগ্রহ করা হবে। তবে হাসপাতালের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে যে পাঁচজন পর্যবেক্ষণে রয়েছেন তাদের করোনা উপসর্গ এখনো নেই।

চিকিৎসকের করোনা : মিঠাপুকুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স লকডাউন

রংপুর অফিস জানায়, শনিবার ১৪তম দফায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাবে ৯১ জনের পরীক্ষা করে তিনজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে রংপুরের মিঠাপুকুর, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট এবং ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে একজন করে রয়েছেন। মিঠাপুকুরের ব্যক্তি সরকারি চিকিৎসক। এ নিয়ে এই বিভাগের আট জেলায় এক হাজার ১৯৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৪৬ জনের করোনা শনাক্ত হলো। রংপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাক্তার এ কে এম নূর-উন-নবী লাইজু জানিয়েছেন, শনিবার শনাক্ত হওয়া তিনজনের মধ্যে রংপুরের মিঠাপুকুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসক রয়েছেন। এ ছাড়া দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট এবং ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে একজন করে শনাক্ত হয়েছে। রংপুর সিভিল সার্জন হিরোম্ব কুমার রায় জানিয়েছেন আবদুল হামিদ নামের ওই চিকিৎসক পজেটিভ হওয়ায় মিঠাপুকুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।

সিলেটের হাসপাতালে একজনের মৃত্যু : সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে করোনার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কানাইঘাটের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। শনিবার সকাল ৯টায় তিনি মারা যান। মৃত ওই ব্যক্তির বাড়ি কানাইঘাট পৌরসভার বায়ুমপুর গ্রামে। তার বয়স ৩৫ বছর। তিনি গত শুক্রবার রাতে কানাইঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শামসুদ্দিন হাসপাতালে এসে ভর্তি হন। মৃত ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ ছিল। কানাইঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তার নমুনাও সংগ্রহ করেছিল। সেই পরীক্ষার ফলাফল জানা যাবে আজ রোববার।

সাভারে প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু : সাভার (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, সাভারের প্রথম কোনো ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত শুক্রবার দিবাগত রাতে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি ঢাকার মিরপুরসংলগ্ন সাভার উপজেলার কাউন্দিয়া ইউনিয়নের বাজার এলাকায় গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর থেকে মেয়ের বাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন। কাউন্দিয়া ইউনিয়নের মানুষের একমাত্র চলাচলের জন্য খেয়া নৌকা ছাড়া কোনো ব্যবস্থা নেই। তাদের রাজধানীসহ যায়াতের জন্য কোনো ব্রিজেরও ব্যবস্থা নেই। করোনায় মৃত ব্যক্তির গ্রামটি লকডাউন করে দেয়া হয়েছে। সাভার উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেøক্সের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হুদা মিঠু বলেন, সাভারের কাউন্দিয়া এলাকার ওই বৃদ্ধ দীর্ঘ দিন ধরে অ্যাজমায় ভুগছিলেন। সম্প্রতি তিনি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন। পরে তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি হলে সেখানেই তিনি মারা যান।

কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আক্রান্ত : গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং ওই উপজেলা হাসপাতালের ১৭ জন কর্মচারী ও তাদের স্বজন গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় ১১ জন চিকিৎসক এবং ৩৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী ও তাদের স্বজনসহ মোট ১৪৯ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসমত আরা জানান, কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেøক্সের ১৩ জন স্বাস্থ্যকর্মীসহ ১৮ জনের দেহে গত বুধবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পজেটিভ হয়।

পরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিশ্চিত হতে এ হাসপাতালে কর্মরতদেরসহ তাদের স্বজনদের নমুনা পাঠানো হয় ঢাকার আইইডিসিআরে। শুক্রবার পরীক্ষার ফলাফলে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা আবদুস সালাম সরকার ও তার হাসপাতালের স্টাফ, নার্স ও তাদের স্বজনসহ ১৭ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। আক্রান্তরা সবাই আইসোলেশনে রয়েছেন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/496615