১৮ এপ্রিল ২০২০, শনিবার, ৫:৩৪

গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ অবরোধ, পুলিশের গুলি ও টিয়ার শেল

গাজীপুরে বেতনভাতা পরিশোধের দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। গতকাল শুক্রবার তারা একটি কারখানাসহ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর ও বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করেছেন। এ সময় শ্রমিকদের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১৩ রাউন্ড টিয়ার শেল ও ৯ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছুড়েছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর মো: আসাদুজ্জামানসহ শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গাজীপুরের শ্রীপুরের মুলাইদ এলাকার হাসিন তায়েবা পোশাক কারখানাটি বন্ধ রয়েছে। কয়েক দিন ধরেই এ পোশাক কারখানার শ্রমিকরা তাদের মার্চ মাসের বেতনভাতাসহ বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছিল। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে কারখানা কর্তৃপক্ষ অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে শ্রমিকদের বেতনভাতা পরিশোধের উদ্যোগ নেয়। শ্রমিকদের বেতনের টাকা দুই দিন আগে ব্যাংকে জমা দেয়া হয়। এ দিকে ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার পর কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের শ্রমিকদের বেতনভাতাদি অনলাইন ব্যাংকিংয়ের (রকেট) মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে উল্লেখ করে একটি নোটিশ গত বৃহস্পতিবার রাতে গেটে টানিয়ে দেয়। কিন্তু ব্যাংকিং সমস্যার কারণে বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেও ওই টাকা অনলাইন ব্যাংকের মোবাইল অ্যাকাউন্টে জমা না হওয়ায় শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। রাতের মধ্যে মোবাইল অ্যাকাউন্টে টাকা জমা না হওয়ায় শ্রমিকরা তাদের পাওনা পরিশোধের দাবিতে শুক্রবার সকালে বন্ধ কারখানা গেটে এসে জড়ো হয়। এ সময় তারা টাকা পরিশোধের ওই নোটিশ দেখতে পেয়ে উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং বিক্ষোভ শুরু করে। শ্রমিকদের অভিযোগ শ্রমিকদের টাকা পরিশোধ না করেই কর্তৃপক্ষ ওই নোটিশ টানিয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষের সাড়া না পেয়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শ্রমিকরা কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে বিক্ষোভ করতে থাকে। বহিরাগত কিছুসংখ্যক লোকও তাদের সাথে যোগ দেয়। এতে মহাসড়কের উভয় দিকে বেশ কিছু যানবাহন আটকা পড়ে।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার সিদ্দিকুর রহমান জানান, শ্রমিক অসন্তোষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। মালিকপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়ে আগামী ২২ এপ্রিল পুলিশের পক্ষ থেকে মালিক পক্ষের কাছ থেকে শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের আশ্বাস দিলেও শ্রমিকরা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখে। উত্তেজিত শ্রমিকরা কয়েকটি গাড়ি ও কারখানার দরজা জানালার কাচ ভাঙচুর করতে থাকে। এ সময় শ্রমিকদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে একটি প্রাইভেট কার দ্রুতগতিতে ঘটনাস্থল থেকে পালানোর সময় এক শ্রমিকের সাথে ওই কারের ধাক্কা লাগে। এতে শ্রমিকরা চালককে নামিয়ে মারধর করতে থাকে। এ সময় পুলিশ শ্রমিকদের রোষানল থেকে ওই চালককে উদ্ধার করতে গেলে উত্তেজিত শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে দু’পক্ষের মাঝে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। শ্রমিকদের ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশের কয়েক সদস্যসহ সাত-আটজন আহত হয়। একপর্যায়ে পুলিশ ১৩ রাউন্ড টিয়ার শেল ও ৯ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে প্রায় চার ঘণ্টা পর যানবাহন চলাচল শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে কারখানা কর্তৃপক্ষ আগামী ১৯ এপ্রিলের মধ্যে শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের আশ্বাস দেন।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/496387