পুরান ঢাকার ওয়ারি এলাকায় লকডাউন করা একটি রাস্তা : নয়া দিগন্ত
১২ এপ্রিল ২০২০, রবিবার, ১:৪৮

লকডাউনে অবরুদ্ধ মানুষের বাসায় খাবারের অভাব

ঢাকার কেরানীগঞ্জের মডেল টাউন আবাসিক গত এপ্রিল লকডাউন করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এতে আটকা পড়েন প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার লোক। ছয় দিন অতিবাহিত হলেও সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো সহযোগিতা পাননি কেউ।

জানা গেছে, গত ৪ এপ্রিল বাবুবাজার ব্রিজের দক্ষিণ পাড় ঢালে কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন আবাসিক এলাকার ব্লক ১ নম্বর রোডের জব্বার মিয়ার বাড়ির তৃতীয় তলায় করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত করা হয়। পরে ওই এলাকা লকডাউন করেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ উপজেলা প্রশাসন। ওই রোগী মোস্তফার অবস্থা বর্তমানে ভালো। তার পরিবারের অন্য কেউ আক্রান্ত হননি বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মীর মোবারক হোসেন।

তবুও লকডাউনে মডেলটাউনবাসী। ওই এলাকায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষের অবস্থা তাদের মধ্যে অনেকে অটোরিকশা চালক, ভ্যানগাড়ি দিয়ে তরকারি বিক্রেতা, শরবত বিক্রেতা, নাপিত, ভ্যানে ফল বিক্রেতা, গার্মেন্ট কর্মী। তাদের অনেকের ঘরে কোনো খাবার নেই। বাইরেও বের হতে পারছেন না। তাদের অনেকে না খেয়ে দিন যাপন করছেন। শরবত বিক্রেতা সেলিম জানান, ধোলাইখাল এলাকায় শরবত বিক্রি করেন তিনি। প্রতিদিন পাঁচ থেকে ৬০০ টাকা আয় করি। গত এক মাস যাবত বাসায় বসা। কোনো আয় রোজগার নেই। মডেল টাউন আবাসিকের এক বাড়িতে সাবলেট থাকি। মাসে ৫ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে। আজ বহুদিন বাসায় কোনো খাবার নেই। আবাসিকের মেইন গেট বন্ধ াকায় বের হতে পারছি না। দুই ছেলে এক মেয়ে নিয়ে পাঁচজনের পরিবার। সন্তানদের খাবার না দিতে পারলে আত্মহত্যা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

ফলবিক্রেতা মোতালেব জানান, মডেল টাউনের তিন নম্বর রোডে তার বাসা। সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া দেন। কারেন্ট বিল ৫০০। আর গ্যাস বাবদ ৫০০ টাকা দিতে হয়। গত ৪ এপ্রিল লকডাউন করে দিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু তাদের কোনো ত্রাণ কিংবা সহযোগিতা কেউ করছে না। তাই চরম কষ্টে দিন যাচ্ছে। তরকারি বিক্রেতা কালু জানান, বাড়িওয়ালা কাদের মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকেন তিনি। শ্যামবাজার থেকে কাঁচা তরকারি পাইকারি কিনে ভ্যানে করে আবাসিকে বিক্রি করেন। দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় দিয়ে চারজনের সংসার চলছে। তাছাড়া সাবলেটে মাসে বাসা ভাড়া বাবদ দিতে হয় ৫ হাজার টাকা। গত ৬ দিন যাবত লকডাউন। সরকারি কোনো সহযোগিতা তো দূরের কথা এলাকার বাড়িওয়ালারাও নিচ্ছে না খোঁজ। আবাসিকের দুই শতাধিক দারোয়ান ছাড়াও রাতে পাহারাদার রয়েছে ২০ জন। তাদের মধ্যে কালাম, বিল্লাল, ওসমান, কাদের, রুবেল, জসিম, হাসান, জয়নাল, মকবুলসহ একাধিক দারোয়ান জানায়, মডেল টাউন আবাসিকে প্রায় ২১৫টি বাড়ি রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটা বাড়ি নির্মাণাধীন। বাকি সব বাড়ির দারোয়ান আছে। তাতে প্রায় আড়াইশ দারোয়ান হবে। মাসে ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা বেতন পাই। আবার পরিবার নিয়ে সাবলেট থাকছি। সব মিলিয়ে হাহাকার অবস্থা। বাসায় খাবার না থাকলেও তারা কাউকে বলতে পারছেন না।

আবার না খেয়েও থাকতে পারছে না। সরকারি কোনো সহযোগিতা পৌঁছেনি মডেল টাউনে। একাধিক ভবন মালিক জানান, মডেল টাউন আবাসিকের কেউ মরে গেলেও খবর নেয় না রাজনৈতিক কোনো নেতা। কারণ এখানের ভবন মালিকরা পছন্দের দলকে ভোট দিলেও দল নিয়ে কোনো মাতামাতি নেই। তাই সরকারি অনুদান মেলে না। মালিক সমিতির সভাপতি হাজী রহমান বলেন, এই আবাসিকে প্রায় ৩০ হাজার লোকের বসবাস। ভাড়াটিয়া মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্ত মিলিয়ে প্রায়২৪ থেকে ২৫ হাজার লোক রয়েছে। এসব পরিবারের লোক খেটে খেয়ে জীবন পার করছে। এত দিন যাবত লকডাউন কোনো সরকারি সহযোগিতা পাচ্ছে না ওই সব মানুষ। তিনি বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনওকে জানানো হয়েছে। তারপরেও কোনো খাদ্যসামগ্রী পাচ্ছে না ওই সব অসহায় মানুষ। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাকুর হোসেন সাকু এ প্রতিবেদককে বলেন, মডেল টাউনে কোনো গরিব ও মধ্যবিত্ত লোক বসবাস করে না। তাই ওখানে ত্রাণসামগ্রী দেয়া যাবে না বলে জানান তিনি।

কেরানীগঞ্জ উপজেলা ইউএন ও বলেন, জিনজিরা ছাড়াও সব এলাকায় কমিটি করে দেয়া হয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বর ত্রাণ দায়িত্বে রয়েছেন বলে জানান তিনি।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/495163