কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ব্রিটেনে বাংলাদেশীদের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। সাধারণ মানুষ ছাড়াও মৃত্যুর মিছিলে রয়েছেন একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, একজন ব্যারিস্টার এবং কয়েকজন কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব। এ ছাড়া সেখানে রয়েছেন ১০ দিনের ব্যবধানে মারা যাওয়া আপন দুই সহোদরও। ৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত গত তিন দিনে বিভিন্ন স্যোশাল মিডিয়ায় আরো ১০ ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন স্বজনরা। সরকারি হিসেবে আলাদাভাবে বাংলাদেশীদের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করা হচ্ছে না। তবে স্যোশাল মিডিয়ার পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে ব্রিটেনে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ জন বাংলাদেশী মৃত্যুবরণ করেছেন।

ডা: আব্দুল মাবুদ চৌধুরী ওরফে ফয়সাল : ব্রিটেনে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত পূর্ব লন্ডনেই বাস করতেন লন্ডনের রমর্ফোডের কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা: আব্দুল মাবুদ চৌধুরী ওরফে ফয়সাল। স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে থাকেন চিগওয়েল এলাকায়। তার স্ত্রী ডা: রানীও ডাক্তার হিসেবে কাজ করেন নিউহ্যাম হাসপাতালে। ইউরোলজি বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হয়েও সম্প্রতি সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে করোনা রোগীদের সেবা দিচ্ছিলেন ডা: ফয়সাল। আর সেখানেই গত সপ্তাহে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয় মঙ্গলবার। গত বুধবার রাতে তিনি ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। বাংলাদেশে তার আদি বাড়ি হবিগজ্ঞের নবীগজ্ঞ থানার কামারগাঁও।

ব্যারিস্টার মনির জামান শেখ : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মৃত্যুবরণ করেছেন পূর্ব লন্ডনের আইনজীবী ব্যারিস্টার মনির জামান শেখ। তিনি মঙ্গলবার রাত ১০টায় লন্ডনের নিউহাম হাসúাতালে ইন্তেকাল করেন বলে বিভিন্ন স্যোশাল মিডিয়ায় তার স্বজনরা জানিয়েছেন। লন্ডনের পি জি এ সলিসির্টসের প্রিন্সিপ্যাল হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সমাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি গ্রেজয়েট ক্লাব ইউকের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। ৬২ বছর বয়সী ব্যারিস্টার মনির জামান শেখের দেশের বাড়ি বাগেরহাট জেলা রামপাল থানার কুমলাইগ্রামে।

মাওলানা আব্দুল মুকিত : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত সোমবার ইন্তেকাল করেন প্রবীণ কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব মাওলানা আব্দুল মুকিত (৬৭)। তিনি পূর্ব লন্ডনের স্টেপনিগ্রিনের বাসিন্দা ছিলেন। জানা গেছে, মাত্র ৩ সপ্তাহ আগে তিনি বাংলাদেশ সফর শেষে ব্রিটেন ফিরেন। তার দেশের বাড়ি বিয়ানীবাজার উপজেলার তিলপাড়া ইউনিয়নের দাসউড়া গ্রামে। তিনি ব্রিটেনে কাউন্সিল অব মস্কসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি স্ত্রী, ৪ ছেলে ও দুই মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন রেখে গেছেন।

আলহাজ বদরুল হক : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন প্রবীণ কমিউনিটি নেতা আলহাজ বদরুল হক। ৬৫ বছর বয়সী আলহাজ বদরুল হক ইস্ট-লন্ডনের কমার্শিয়াল রোডের বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘ দিন থেকে হৃদরোগ ও ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে তিনি গত মঙ্গলবার রাতে লন্ডনের একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তিনি স্ত্রী ও ৪ ছেলে রেখে গেছেন। তার দেশের বাড়ি গোলাপগঞ্জ উপজেলার বহর গ্রামে। বদরুল হক বহরগ্রাম জনমঙ্গল সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যসহ গোলাপগঞ্জের একাধিক সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন।

দুই সহোদরের ইন্তেকাল : পূর্ব লন্ডনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১০ দিনের ব্যবধানে ইন্তেকাল করেছেন আপন দুই সহোদর। তারা শেডওয়েলহিথ এলাকায় বসবাস করতেন বলে জানা গেছে। গত ২৬ মার্চ ইন্তেকাল করেন বড় ভাই দেলোয়ার ওয়াহিদ (৩৭)। আর ৫ এপ্রিল ইন্তেকাল করেন ছোট ভাই এনামুল ওয়াহিদ (৩২)। তাদের দেশের বাড়ি নবীগঞ্জ উপজিলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণগ্রাম। তাদের বাবার নাম আব্দুল ওয়াহিদ। দেলোয়ার ওয়াহিদ স্ত্রী ও দুই ছেলে এবং এনামুল ওয়াহিদ স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।

মফিজুল ইসলাম বকুল : ব্রিটেনের স্কটল্যান্ডে বসবাসকারী মফিজুল ইসলাম বকুল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ৪ এপ্রিল ইন্তেকাল করেন। স্যোশাল মিডিয়া সূত্রে জানা গেছে, তিনি ব্রাক্ষণবাড়ীয়া জেলার নবীনগর থানার বগডহর গ্রামের ইদ্রিছ বেপারীর ছেলে। তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তান রেখে গেছেন। মফিজুল ইসলাম বকুল ইতালির ভিসেন্সার মালো শহরে বসবাস করতেন।

জামিল আহমদ আজাদ : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার ভোররাতে ইন্তেকাল করেন পূর্ব লন্ডনের স্টেপনিগ্রিনের বাসিন্দা জামিল আহমদ আজাদ। তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। তিনি স্ত্রী, ৩ ছেলে ৪ মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন রেখে গেছন। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে কিডনির জটিলতাসহ নানা রোগে ভুগছিলেন। তার দেশের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার বুধবারী বাজার ইউনিয়নের বানীগ্রামে।

হাজী খলিলুর রহমান : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সোমবার বিকেলে ইন্তেকাল করেছেন লিভারপুলের বাসিন্দা ৬০ বছর বয়সী হাজী খলিলুর রহমান। তার দেশের বাড়ি সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার খুছকিপুর গ্রামে। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে কিডনির জটিলতাসহ নানান রোগে ভুগছিলেন। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।

বদরুল ইসলাম টুনু মিয়া : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন পূর্ব লন্ডনের ক্যানিংটাউনের বাসিন্দা প্রবীণ কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব বদরুল ইসলাম টুনু মিয়া (৬৫)। তার দেশের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দেওকলস ইউনিয়নের কোনারাই গ্রামে। তিনি গত ৫ এপ্রিল রোববার লন্ডনের একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থেকে কমিউনিটির উন্নয়নে কাজ করে গেছেন।