১১ এপ্রিল ২০২০, শনিবার, ২:০৫

করোনায় গার্মেন্ট মালিকের মৃত্যু

কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ

করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণে প্রিন্স গার্মেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: তাসলিম আক্তার মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ৩টায় কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। রাত সাড়ে ৯টায় সরকার নির্ধারিত খিলগাঁও কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন তিনি।

তাসলিম আক্তারের ছোট ভাই এহতেশাম জানান, গত ২৮ মার্চ শরীরে জ্বর অনুভব করেন তাসলিম আক্তার। এ ছাড়া করোনার আর কোনো লক্ষণ ছিল না তার শরীরে। এরপর ব্যক্তিগত চিকিৎসকের পরামর্শে জ্বরের ওষুধ খেয়ে সুস্থ ছিলেন তিনি। ৫ তারিখে নিজের কারখানাও পরিদর্শন করে এসেছেন। এরপর ৬ এপ্রিল অসুস্থ অনুভব করলে পুরান ঢাকার আসগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। নিয়মিত চেকআপে কোনো ত্রুটি না থাকায় চিকিৎসকের পরামর্শে আইইডিসিআরের মাধ্যমে করোনা টেস্ট করান। পরের দিন ৭ এপ্রিল সন্ধ্যার পর অসুস্থ্য বোধ করলে আবার আসগর আলী হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে। সেখানকার চিকিৎসকরা আইইডিসিআরে যোগাযোগ করে তার শরীরে করোনা পজেটিভ হওয়ার তথ্য নিশ্চিত হন। পরের দিন বেলা ২টায় কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। এ সময় অনেকটা সুস্থ বোধ করায় হাসপাতালের চতুর্থ তলার এ ব্লকে নিজেই হেঁটে ওঠেন তিনি।

ভর্তি হওয়ার ৭ ঘণ্টা পেরিয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত কোনো চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মী তার খবর নেননি। এমনকি তাকে কিছু খেতেও দেয়া হয়নি। এমন খবর শুনে হাসপাতালের পরিচালক ডা: শিহাব উদ্দীনের সাথে যোগাযোগ করেন এহতেশাম। পরে একজন চিকিৎসক তাকে দেখতে আসেন। এরপর হাসপাতালের টেলিফোনে কর্তব্যরত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করে অসুস্থ ভাইয়ের ব্লাড প্রেসার, জ্বর ও ডায়াবেটিসের খবর জানতে চাইলে চিকিৎসক তাকে জানাতে পারেননি। এমনকি ‘ডায়াবেটিস পরীক্ষার যন্ত্র কি আপনারা কিনে দিয়ে গেছেন’ এমন প্রশ্ন করেন চিকিৎসক। এ ছাড়াও রোগীকে যে খাবার পরিবেশন করা হয় তা মানসম্মত না হওয়ায় গ্রহণও করতে পারেননি তিনি। পরে নিজের কাছে থাকা কিছু ড্রাইফুড খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েন। সকাল ৯টায় তার আরেক ভাইয়ের সাথে কথা বলেন তাসলিম আক্তার। এ সময়ের মধ্যে কোনো চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মী তার খবর নিতে আসেননি বলে তার ছোট ভাইকে জানান।

এরপর সকাল ৯টা ১০ মিনিট থেকে অসুস্থ বড় ভাইয়ের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন এহতেশাম। কিন্তু বারবার ব্যর্থ হয়ে বেলা ১১টায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেন। এরপর বেলা সাড়ে ১২টায় তাকে জানানো হয়, তার ভাইকে ফ্লোরে অচেতন অবস্থায় পাওয়া গেছে এবং তার চিকিৎসা চলছে। এর বেশি জানাতে রাজি হয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

বেলা সাড়ে ৩টায় হাসপাতালে গিয়ে তারা জানতে পারেন তার ভাই সকালে বাথ রুমে গিয়ে পড়ে সেখানেই মারা যান। এরপর তাদের যোগাযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি বাথরুমের দরজা আটকানো দেখতে পান। পরে সেটির দরজা ভেঙে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের পরিচালক ডা: শিহাব উদ্দীন বলেন, তাসলিম আক্তার একজন সম্মানিত সিআইপি। তিনি ওবেসিটি, ডায়াবেটিস, প্রেসার এবং হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি তিনি বাথরুমে পড়ে আছেন। এরপর আমরা দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে জানতে পারি তিনি মারা গেছেন। আমরা তার চিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। তার পরেও যদি তার পরিবারের কোনো অভিযোগ থাকে সেটির প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জানাই।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/494967