৩ এপ্রিল ২০২০, শুক্রবার, ২:০৭

‘কাজ নেই, লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণ নিতে পারছি না’

শ্রমজীবীরা মহাবিপদে

করোনাভাইরাসে বিশ্বে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে ৪৭ হাজারেরও বেশি মানুষ। বাংলাদেশেও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৫৬ জনে দাঁড়িয়েছে। মারা গেছেন ৬ জন। বাকি ৫০ জনের মধ্যে ২৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এবং ২৫ জন চিকিৎসাধীন আছেন।

করোনা পরিস্থিতিতে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে শহরের রাস্তাঘাট, অলি-গলিতে কমে গেছে জনসমাগম। বন্ধ রয়েছে গণপরিবহনে যাত্রী চলাচল। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে দোকানপাট ও মার্কেট। বন্ধ রয়েছে টং দোকান, যা নিম্ন আয়ের মানুষের নাস্তার কেন্দ্র। হোটেল রেস্টুরেন্টের মধ্যে কয়েকটি খোলা থাকলেও বলা হচ্ছে পার্সেল সার্ভিসের জন্য। এমনতাবস্থায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষেরা। তাদের হাতে টাকা নেই, কাজ নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, স্বামীবাগ, শনির আখড়া, মতিঝিল, দৈনিকবাংলা, পল্টন, কাকরাইল, নয়াপল্টন, মৌচাক এলাকা ঘুরে দেখা যায় রাস্তা ফাঁকা। কিছু মানুষ রাস্তায় বের হয়েছে; তাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এ সময় কয়েকজন শ্রমজীবীর সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, কাজ বন্ধ। সামাজিক কারণে লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণ নিতে পারছি না, কাজ করারও উপায় নেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী রাজধানী সুপার মার্কেট, আয়শা সুপার মার্কেট, আবেদীন মার্কেট, ফরচুন শিপিং মল, মৌচাক মার্কেট, আনারকলি মার্কেট, ইস্টার্ন প্লাস, গাজী ভবন শপিং সেন্টার, পলওয়েল সুপার মার্কেট বন্ধ রয়েছে। এসব মার্কেটের কোল ঘেঁষে থাকা টং দোকানগুলোও বন্ধ রয়েছে। রাস্তায় শুধু সেনাবাহিনী ও পুলিশি টহল চোখে পড়ছে। পথচারীদের অবাধ চলাচল নেই। গণপরিবহন আগে থেকেই বন্ধ রয়েছে। তবে হাতেগোনা দু’একটি ব্যক্তিগত গাড়ি চোখে পড়ছে। বিশেষ প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষগুলোর একমাত্র বাহন এখন রিকশা। লোকসমাগম কম থাকায় রাস্তায় রিকশাও কম দেখা গেছে। তবে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। কারণে যারাই বাইরে বের হচ্ছেন তাদের অনেককেই মাস্ক এবং হ্যান্ড গøাভস ব্যবহার করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে, নিত্যপণ্য ও ওষুধের দোকান খোলা রয়েছে আগের মতোই। তবে ক্রেতার উপস্থিতি কম। কমেছে বিক্রির পরিমাণ।

এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ। তাদের হাতে নেই কোনো টাকা, পাচ্ছেন না কোনো কাজ।
যাত্রাবাড়িতে পান বিক্রি করেন আনোয়ার। বললেন, সব বন্ধ। পুঁজি ভেঙে খাচ্ছি। শনিরআখড়ায় গাড়া মালের দোকান করে মো. মনির হোসেন। বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন দোকান খুলতে পারছি না। খুলতে গেলেই পুলিশ এসে বন্ধ করে দেয়। মানসম্মানের কারণে দোকান খুলতে পারছি না। হাতে টাকা নেই, পরিবারের চাহিদা প‚রণ করতে পারছি না। সামাজিক মান-সম্মানের কারণে লাইনে দাঁড়িয়ে সহায়তাও নিতে পারছি না। একই কথা জানান সবুজ হোসনে। তিনি বলেন, এর আগে কোম্পানি চাকরি ছেড়ে রাইড শেয়ারিং করে ভালোই আয় হতো। এখন কাজ বন্ধ আছে। টাকা-খাবার কোনোটাই নেই। অন্যরা তো লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণ নিচ্ছেন, আমরাতো সেটাও পারছি না। কাজ করারও কোনো উপায় নেই। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাহন বিক্রি করে খেতে হবে। আর সেটাও কে কিনবে?

https://www.dailyinqilab.com/article/280332