৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৬:৩৫

এক মাসে সীমান্তে ১১ হত্যা : বিজিবি

গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে গতকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত এক মাসে দেশের সীমান্ত এলাকায় ১১ জন বাংলাদেশী নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে। আর বেশি হত্যার শিকার হচ্ছে সীমান্তে গরু ব্যবসার সাথে জড়িতরা। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বলছে, শুধু যে সীমান্তে হত্যার ঘটনা ঘটছে তা নয়; ভারতীয় সীমান্তের পাঁচ থেকে ১৫ কিলোমিটারের ভেতরেও হত্যার ঘটনা ঘটছে। গতকাল বুধবার বিজিবি সদর দফতরে বাহিনীর পরিচালক (পরিকল্পনা) লে. কর্নেল সৈয়দ আশিকুর রহমান সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, সীমান্তে হত্যাকাণ্ডে যেটা সাধারণভাবে বোঝা যায়, সীমান্তের কাছে, তা কিন্তু না। অনেক সময় দেখা যায়, ভারতীয় সীমান্তের পাঁচ থেকে ১৫ কিলোমিটারের ভেতরেও হয়। হয়তো দেখা যায়, কোনো নিরীহ মানুষ ভারতের সীমান্তে ঢুকে যাচ্ছে, হয়তো গরু আনার জন্য গেছে। তাই অনেক সময় দেখা যায়, আমাদের নির্দিষ্ট এলাকার বাইরেও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। যখন আমাদের ওপাশ থেকে লাশ হস্তান্তর করা হয়, তখনই আমরা জানতে পারি। এই সংখ্যাটা বেশি ঘটে যারা গরু ব্যবসার সাথে জড়িত তাদের ক্ষেত্রে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ও বাংলাদেশী সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির মধ্যে এ বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদান হচ্ছে। মহাপরিচালক পর্যায়ে যে সম্মেলন হয়েছে, সেখানেও সীমান্ত হত্যা নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা আবারো আলাপ-আলোচনা করছি। তিনি বলেন, সীমান্তে চোরাকারবারি অনেকে চিহ্নিত, অনেকে চিহ্নিত না। তবে সীমান্তে যারাই এ ধরনের কাজের সাথে জড়িত আছে, তাদের আমরা নজরদারিতে রেখেছি। তারা যখনই কোনোকিছু পাচারের চেষ্টা করছে, তখনই আমরা তাদের গ্রেফতার করছি। গণমাধ্যমে তা জানানোও হচ্ছে।

পরিচালক বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমরা নিয়মিত প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে চিঠি দিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়। এ ছাড়া আমরা আমাদের সীমান্ত এলাকার মানুষদের সচেতন করছি, যাতে ভুল করে বা অন্য কোনো কারণে তারা যেন সীমান্ত এলাকা অতিক্রম না করে। এ ছাড়া আমাদের গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সীমান্ত এলাকায় যেসব স্পর্শকাতর জায়গা রয়েছে, সেসব জায়গা চিহ্নিত করে আমরা জনবল বৃদ্ধি করেছি। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক উপায়েও কাজ চলছে। বিজিবি গত জানুয়ারিতে দেশের সীমান্ত এলাকাসহ অন্য স্থানে অভিযান চালিয়ে সর্বমোট ৯৭ কোটি ১৮ লাখ তিন হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকারের চোরাচালান ও মাদকদ্রব্য জব্দ করেছে। এ ছাড়া সীমান্তে বিজিবির অভিযানে ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক পাচার ও অন্যান্য চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৭২ জন চোরাচালানিকে এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে ৩৮ জন বাংলাদেশী নাগরিক ও দুইজন ভারতীয় নাগরিককে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

বিজিবির মাদকবিরোধী অভিযানে জব্দকৃত মাদকের মধ্যে রয়েছে সাত লাখ ২৩ হাজার ৬৮৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৪০ হাজার ৭৪২ বোতল ফেনসিডিল, ১১ হাজার ৭৯২ বোতল বিদেশী মদ, ২৯৮ লিটার বাংলা মদ, ৫৪৯ ক্যান বিয়ার, ৭৬২ কেজি গাঁজা, ৬৬৫ গ্রাম হেরোইন, চার হাজার চারটি ইনজেকশন এবং দুই হাজার ৪৩১টি সেনেগ্রা ট্যাবলেট। জব্দকৃত অন্যান্য চোরাচালান দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ১৪ কেজি ৪৮২ গ্রাম সোনা, পাঁচ হাজার ৮২৮টি ইমিটেশন গয়না, ৩৩ হাজার কসমেটিকসামগ্রী, এক হাজার ৫০০টি শাড়ি, ২৭ হাজার শার্ট ও থ্রিপিস, কাঠ, চা পাতা, পাথরের মূর্তি, ২১টি ট্রাক, ছয়টি পিকআপ, একটি প্রাইভেটকার, ১১টি অটোরিকশা। এ ছাড়া দু’টি পিস্তল, চারটি বন্দুক, দু’টি ম্যাগজিন, ১০ রাউন্ড গুলি এবং ৫৪টি মোটরসাইকেল।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে পরিচালক আশিকুর রহমান জানান, করোনাভাইরাস বিষয়ে সীমান্তে কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে বিজিবি অন্যান্য সংস্থাকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/478244/