২১ জানুয়ারি ২০২০, মঙ্গলবার, ১০:০০

যোগাযোগ বিপর্যস্ত

দক্ষিণাঞ্চলে বার বার ফেরি দুর্ঘটনা

দক্ষিণাঞ্চলে টেকসই ফেরির অভাব। অত্যাধিক মালামাল বোঝাই যানবাহন ফেরি সার্ভিসকে বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে বারবার। এরই সাথে প্রয়োজনীয় সচল ফেরির অভাবে ঘাটগুলোতে দূরপাল্লার যাত্রীদের দুর্ভোগ বর্ণনার বাইরে।

যদিও গত দুই দশকে ঢাকা-কুয়াকাটা এবং বরিশাল-খুলনা মহাসড়কের ১০টি ফেরি পয়েন্টে ছোট-বড় সেতু নির্মিত হয়েছে। কিন্তু বরিশাল-ভোলা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নদীগুলো পারাপারে ফেরি সার্ভিস যথেষ্ট বিড়ম্বনায় রেখেছে মানুষকে। চট্টগ্রাম থেকে ল²ীপুর-ভোলা-বরিশাল হয়ে মোংলা ও খুলনা মহাসড়ক চালু হলেও টেকসই ফেরি ব্যবস্থাপনার অভাবে পণ্য পরিবহনে সময় ও ব্যয় বাড়ছে।

মাত্রাতিরিক্ত ভার বহনের পাশাপাশি ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন সাথে দীর্ঘদিনের পুরনো ফেরির কারণে একের পর এক দুর্ঘটনাও ঘটছে। গত শনিবার বরিশাল-বাবুগঞ্জ-মুলাদী-হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ সড়কের মীরগঞ্জ পয়েন্টে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ ওজনের বিদ্যুৎ খুঁটি নিয়ে পার হবার সময় ফেরির গ্যাংওয়েতে ট্রাকের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে পেছনে ছিটকে পড়ে পন্টুনসহ ট্রাকের অর্ধেক নদীতে নিমজ্জিত হয়। ফলে টানা ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় যানবাহন পারপার বন্ধ থাকে।

গতবছর বরিশাল-খুলনা মহাসড়কের বেকুঠিয়া পয়েন্টে কঁচা নদীতে পারাপারের সময় জ্বালানিবাহী নৌযানের সাথে সংঘর্ষে সড়ক বিভাগের একটি ফেরির তলা ফেটে যায়। চালক দ্রুত নিকটবর্তী একটি চরে ফেরিটি তুলে দিয়ে বড় বিপর্যয় এড়াতে সক্ষম হলেও নৌযানটি ডুবে যায়। দুর্ঘটনায় প্রাণহানি না ঘটলেও বাস-ট্রাক, অন্য যানবাহনসহ ফেরিটির ব্যাপক ক্ষতি হয়। দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক বিভাগের বেশিরভাগ ফেরিতেই রাতের বেলা চলাচলের মত প্রয়োজনীয় সঙ্কেত বাতিসহ সার্চ লাইট থাকে না।

সড়ক ও জনপথ অধিদফতর এবং বিআইডব্লিউটিসি দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা সংযোগ সড়কের ১৮টি পয়েন্টে ফেরি পরিচালনা করছে। এর বেশিরভাগই দীর্ঘদিনের পুরনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরি যা চলছে সম্পূর্ণ জোড়াতালি দিয়ে। সড়ক অধিদফতরের ১৭টি পয়েন্টে যে ২৬টি ফেরি পরিচালনা করছে তার মধ্যে মাত্র ২টি নতুন। অবশিষ্টগুলো পাঁচ থেকে ২০ বছরের পুরনো। অনেক ফেরিতে দুই যুগেরও বেশি পুরনো ইঞ্জিন চলছে না চলার মত করে।

অপরদিকে ফেরি ও ফেরিঘাটগুলোতে যানবাহন পারাপারে ইজারাদারের খামখেয়ালির কাছে জিম্মি যাত্রী, চালকরা। বরিশাল-খুলনা মহাসড়কের বেকুঠিয়াতে প্রতি ঘণ্টায় একবার ফেরি পারাপারের অলিখিত নিয়মও ইজারাদার অনুসরণ করছে না। ফলে দু’প্রান্তেই প্রতিনিয়ত অপেক্ষমান যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে।

এসব ব্যাপারে বরিশাল সড়ক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সুশীল কুমার সাহা জানান, দক্ষিণাঞ্চলে নতুন ও ভালো মানের ফেরির চাহিদা সদর দফতরকে জানিয়েছি। সড়ক অধিদফতরও চেষ্টা করছে। ফেরি চলাচলে সব সময় নিয়মকানুন অনুসরণে বারবারই তাগিদ দেয়ার কথাও জানা তিনি। পাশাপাশি মাত্রাতিরিক্ত বোঝাই ট্রাক পারাপার না করতেও বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।

তবে একাধিক যানবাহন মালিক ও চালকের মতে, ‘দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনের অর্ধেক সময় ফেরিঘাটে কাটলেও’ দীর্ঘদিনেও তা থেকে পরিত্রাণ মেলেনি। এ কারণে এ অঞ্চলে পরিবহন ব্যবসায় নতুন বিনিয়োগও আসছে না বলে অভিযোগ করেন তারা।

https://www.dailyinqilab.com/article/262287/