২০ জানুয়ারি ২০২০, সোমবার, ১২:৫১

পুঁজিবাজারে হঠাৎ উত্থানে আশা আর শঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা

হঠাৎ ফুলে ওঠেছে দেশের পুঁজিবাজার। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস গতকাল রোববার সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় উত্থান হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, বাজার উন্নয়নে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা, সরকারি ব্যাংকগুলোর শেয়ার কেনার ঘোষণা ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তারল্য সঙ্কট দূর করার আশ্বাস- বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশা ও আস্থার সঞ্চার করেছে। ফলে বাজার বড় ধরনের উত্থানের দিকে গেছে। তবে অনেকের আশঙ্কা হঠাৎ বাজারে বিক্রেতা কমে গিয়ে ক্রেতা বেড়ে যাওয়া চিন্তার বিষয়। ব্যাপক পতন যেমন স্বাভাবিক বাজারের চিত্র নয় তেমন হঠাৎ ব্যাপকভাবে দর বেড়ে যাওয়াও স্বাভাবিক বাজারের লক্ষণ নয়। সুতরাং বিনিয়োগকারীদের খুবই সাবধানে থাকতে হবে। জেনে বুঝে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। আর বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন- উত্থান দীর্ঘস্থায়ী হবে তো?

গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৩২ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেড়েছে। আর অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৭১৩ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সাত বছর আগে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি দেশের প্রধান পুঁজিবাজারে নতুন এই সূচক চালু হওয়ার পর এত বড় উত্থান আর দেখা যায়নি। এর আগে ডিএসইর পুরনো সূচক ডিজিইএন থাকার সময় ২০১২ সালে ৭ই ফেব্রুয়ারি সূচক বেড়েছিল ৯ দশমিক ১০ শতাংশ; সেদিন ৩২৯ পয়েন্ট বেড়ে ডিজিইএন হয়েছিল ৩ হাজার ৯৪৫। এ দিন লেনদেনও বেড়েছে দুই পুঁজিবাজারে। ডিএসইতে এ দিন লেনদেন ৫৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪১১ কোটি টাকা। সিএসইতে লেনদেন ৪০৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪৩ কোটি টাকা। অথচ গত সপ্তাহে চরম ধসের মধ্যে পড়েছিল পুঁজিবাজার। গত সপ্তাহের মঙ্গলবার পর্যন্ত বড় পতনে সব সূচক নেমে গিয়েছিল ভিত্তি পয়েন্টের নিচে। লেনদেন ওঠতে পারেনি ৩০০ কোটি টাকার ঘরে। আট কার্যদিবস পতনে কমেছিল ৪০০ পয়েন্টের বেশি।

বাজারের চরম খারাপ অবস্থার মধ্যে সক্রিয় হয়ে ওঠে সরকার। নানা পদক্ষেপের আশ্বাস দেয়। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনসহ সংশ্লিষ্টদের নিজ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠক থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থাসহ ছয়টি নির্দেশনা দেয়া হয়।

গতকালের বাজার বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ এ হাফিজ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপই বাজারে দরের ঊর্ধ্বগতির কারণ। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে পুঁজিবাজার নিয়ে ইতিবাচক খবর আসছে। বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজার নিয়ে ভালো কথা বলেছে। প্রধানমন্ত্রীর সাথে পুঁজিবাজার নিয়ে আলোচনার খবর এসেছে। মানুষের আস্থা বেড়েছে। মানুষ মনে করছে, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি দেখছেন, এবার হয়তো বাজার ঠিক হবে। যে কথাগুলো বলা হয়েছে, সেগুলো সত্যি সত্যি করা গেলে বাজার আসলেই ভালো হবে।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, পুঁজিবাজারে শেয়ারের দর অনেক কমে গিয়েছিল। এই অবস্থায় দু’টি সুখবর এসেছে। একটি হচ্ছে পুঁজিবাজার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক এবং আরেকটি হচ্ছে সরকারি ব্যাংকগুলো শেয়ার কিনবে। ফলে আস্থাটা ফিরে এসেছে। আর মানুষ আতঙ্কিত হয়ে যে বিক্রি করে দিচ্ছিল, সেটাও বন্ধ হয়েছে। এ জন্য সূচক বেড়েছে। বড় ধরনের পতনের ধারাবাহিকতায় থাকা ডিএসইর সূচক বুধ ও বৃহস্পতিবার সামান্য বেড়েছিল। এরপর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আসার পর রোববার যে বড় ধরনের উত্থান ঘটবে, সে আশা অনেকেই করেছিলেন বলে জানান তিনি।

তবে বিনিয়োগকারীরা রয়েছেন দ্বিধার মধ্যে। সরকাররের এসব উদ্যোগে আশান্বিত হলেও শঙ্কা এখনো কাটেনি। এ উত্থান দীর্ঘস্থায়ী হবে কি না তা নিয়েও দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছেন তারা। বাদশা আলমগীর নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, সরকারের উদ্যোগগুলো নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। এতে আমরা বাজারের সুদিন ফিরবে বলে আশা করি। তবে বাজারে উত্থান মাঝেমাঝেই হয়। কিন্তু বেশি দিন থাকে না। বড় পতনে তলানিতে নেমে আসে। এ ছাড়া এক দিনে সূচকের এত উত্থান অস্বাভাবিক বাজারের ইঙ্গিত দেয়।

বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের পক্ষ থেকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়। বিএসইসি থেকে বৃহস্পতিবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, শেয়ারবাজার উন্নয়নে সরকার আন্তরিক। শেয়ারবাজার উন্নয়নের জন্য যে ধরনের সাহায্য প্রয়োজন সরকার ধারাবাহিকভাবে তা করবে। সভায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। স্বল্পমেয়াদি কিছু পদক্ষেপ অচিরেই কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তার জন্য মতামত দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- শেয়ারবাজারে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বাড়ানো, মার্চেন্ট ব্যাংকার ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা পর্যালোচনা, আইসিবির বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়ানো, বাজারে আস্থা বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া এবং বাজারে মানসম্পন্ন আইপিও বাড়াতে বহুজাতিক ও সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায় যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। 

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/473640/