২০ ডিসেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ১১:৫২

টাকার সঙ্কটে ব্যাংকের ঋণ প্রদান বাধাগ্রস্ত

একদিনে ১৬ ব্যাংকের ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা ধার গ্রহণ

ঋণ পেতে গ্রাহকদের নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। নানা রকম টালবাহানা করে দিনের পর দিন কাল ক্ষেপণ করা হয় ব্যাংক থেকে। যথাসময়ে ঋণ না পাওয়ায় অনেকেই ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছে না। অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবসা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এমনি পরিস্থিতিতে একের অধিক ব্যক্তিগত গ্যারান্টি প্রদানে ব্যাংকগুলোকে বাধ্য না করতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বলা হয়েছে, গ্যারান্টির জন্য ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের চাপ প্রয়োগ করা যাবে না। এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। অনেক ব্যাংকই দৈনন্দিন ব্যয় পরিচালনা করতে পারছে না। বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হাত পাতছে। তীব্র সঙ্কটের মুখে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গতকাল এক দিনেই ১৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংক তিন হাজার ১৫০ কোটি টাকা ধার নিয়েছে।

টাকার সঙ্কটের কারণেই ব্যাংকগুলো অনেক ক্ষেত্রে ঋণ প্রদানে টালবাহানা করে থাকে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে এটা বেশি অভিযোগ পাওয়া যায়। অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের নানাভাবে হয়রানি করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এর আগে বলা হয়েছিল, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জামানতবিহীন ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গ্যারান্টিকে সহায়ক জামানত হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। পাশাপাশি গ্রাহককে একের অধিক ব্যক্তিগত গ্যারান্টি প্রদানে বাধ্য না করার বিষয়ে বলা হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ব্যক্তিগত গ্যারান্টিকে সহায়ক জামানত হিসেবে বিবেচনার ক্ষেত্রে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো একের অধিক ও সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি যেমন, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বিত্তবান আত্মীয়স্বজন স্বামীকে গ্যারান্টি প্রদানের জন্য ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের চাপ প্রয়োগ করে আসছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারে এ বিষয়ে বাধ্য করা হচ্ছে। এর ফলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। এটি দেশের শিল্পায়নে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এক ব্যাংকার জানিয়েছেন আমাদের ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। কিন্তু সমস্যা হলো, আমাদের বিনিয়োগযোগ্য তহবিল কমে যাচ্ছে। তিনি জানান, কোনো কোনো ব্যাংকের দৈনন্দিন কার্যকম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ হাতে থাকছে না। অন্য দিকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের একটি নির্ধারিত হারে ঋণ প্রদানে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এক দিকে তহবিল সঙ্কট, অন্য দিকে ঋণের চাপ, এরও পর আবার ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণগ্রহণ বেড়ে গেছে; সব মিলেই ব্যাংকগুলো আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সমন্বয় করতে পারছে না। অনেকেই তাই আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে তহবিল জোগাড় করতে না পেরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হাত পাতছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তহবিল সঙ্কট মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে ধার প্রদান করে আসছে। সাধারণত কোনো ব্যাংকের তহবিল সঙ্কট দেখা দিলে এবং আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে তহবিলের জোগাড় করতে না পারলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সহায়তা করা হয়। ব্যাংকগুলো সরকারের যে ঋণ প্রদান করে তার বিপরীতে সরকার ব্যাংকগুলোকে বিল ও বন্ড নামক উপকরণ দিয়ে থাকে। এই বিল ও বন্ড বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখে ব্যাংকগুলোকে সমপরিমাণ অর্থ ধার নিতে পারে। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্ধারিত হারে সুদ গুনতে হয়। একে ব্যাংকিং ভাষায় রেপো বলে। আবার কোনো ব্যাংকের প্রয়োজনীয় বিল ও বন্ড না থাকলে বিশেষ তারল্য সহায়তার আওতায় নগদ টাকার সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোকে সহযোগিতা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল বৃহস্পতিবার এমন ১৬টি ব্যাংককে তিন হাজার ১৫০ কোটি টাকা ধার দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল একটি পিডি (যে ব্যাংক সরকারের ঋণের জোগান দিতে বাধ্য থাকে) ও ৫টি নন-পিডি ব্যাংককে এক হাজার ৩০০ কোটি ৫০ লাখ টাকা ধার দেয়া হয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোকে ১০০ টাকার বিপরীতে ব্যয় করতে হয়েছে ৬ টাকা। অন্য দিকে ৯টি পিডি ব্যাংককে তারল্য সুবিধাবাবদ এক হাজার

৭০০ কোটি ১৩ লাখ টাকা এবং বিশেষ রেপো হিসেবে একটি পিডি ব্যাংককে দেড় শ’ কোটি টাকা ধার দেয়া হয়েছে। ৯ শতাংশ সুদে বিশেষ রেপোর মাধামে এ ধার দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো রকম হয়রানি না করতে নির্দেশ দেয়া হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্দেশনায় বলা হয়, ব্যক্তিগত সহায়ক জামানত হিসেবে একের অধিক বা সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির গ্যারান্টি প্রদানের জন্য ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কোনোভাবেই চাপ প্রয়োগ করা যাবে না। এ বিষয়ে কোনো ব্যাংকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে ওই ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/465502/