১৬ নভেম্বর ২০১৯, শনিবার, ১:৫১

কুমিল্লা থেকে সিলেট রেলপথ ঝুঁকিপূর্ণ

১৭৯ কিলোমিটারে ১৩ ডেড স্টপ

ব্রিটিশ আমলে নির্মিত দেশের অন্যতম পুরনো রেললাইন কুমিল্লা-সিলেট রেলপথ সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন থেকে রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায়। জরাজীর্ণ হয়ে পড়া এ সেকশনে রয়েছে ১৩টি মহাঝুঁকিপূর্ণ সেতু, রেলওয়ের ভাষায় যা ‘ডেড স্টপ’। এছাড়া ট্রেনলাইনও ত্রুটিপূর্ণ। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে এ রেলপথে। গত পাঁচ মাসেই ঘটেছে অন্তত ১১টি দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনার কারণে ট্রেনের সময়সূচিও ঠিক থাকছে না। রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, কুমিল্লা-সিলেট সেকশনে আগে ট্রেন চলত ঘণ্টায় ৭০-৮০ কিলোমিটার গতিতে। এখন তা অর্ধেকে, অর্থাৎ ৪০ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। পাঁচ বছর আগে রেলওয়ের চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন আহসান হাবীব। ছয় মাস ধরে তিনি রেলওয়ের সিলেট স্টেশনে সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি বলেন, পাহাড়ি ও আঁকাবাঁকা সড়ক হওয়ায় কুমিল্লা-সিলেট সেকশনের রশিদপুর থেকে মাইজগাঁও পর্যন্ত সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।

কুমিল্লা-সিলেট রেল সেকশনের মোগলাবাজার থেকে মাইজগাঁও পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ জায়গায় সিøপারের নাটবল্টু খুলে গেছে। কোথাও কোথাও নাটবল্টু ঢিলা থাকায় রেললাইন নড়বড়ে হয়ে আছে। দুই সিøপারের মাঝে পর্যাপ্ত পাথরও নেই। সেতুগুলোর অবস্থা আরো নাজুক।

রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের তথ্যমতে, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এ ধরনের ১৩টি স্পটকে ডেড স্টপ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সিলেট থেকে মোগলাবাজার স্টেশন পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে আটটি ও মোগলাবাজার থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ১৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে পাঁচটি সেতু ডেড স্টপ হিসেবে চিহ্নিত।

কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন ম্যানেজার জানান, ডেড স্টপ হিসেবে চিহ্নিত করা সেতুর আগে ট্রেন থেমে যাবে, পরে পাঁচ কিলোমিটার গতিতে চলা শুরু করবে। রেলওয়ের প্রকৌশল শাখা জানায়, কুমিল্লা-সিলেট সেকশনের অতিঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলোর মধ্যে রয়েছে শমশেরনগর-টিলাগাঁও সেকশনের ২০০ নম্বর সেতু, মোগলাবাজার-মাইজগাঁও সেকশনের ৪৩, ৪৫ ও ৪৭ নম্বর সেতু, কুলাউড়া-বরমচাল সেকশনের ৫ ও ৭ নম্বর সেতু, সাতগাঁও-শ্রীমঙ্গল সেকশনের ১৪১ নম্বর সেতু, শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সেকশনের ১৫৭ নম্বর সেতু, মাইজগাঁও-ভাটেরাবাজার সেকশনের ২৯নম্বর সেতু ও মনতলা-ইটাখোলা সেকশনের ৫৬ নম্বর সেতু।

মাইজগাঁও স্টেশন মাস্টার সাখাওয়াত হোসেন রেললাইনের সমস্যার কারণে বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে বলে জানালেও রেলওয়ের প্রকৌশলী শাখার একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, ট্রেনের পুরনো ইঞ্জিন ও বগির কারণেও এ দুর্ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে জালালাবাদ ট্রেনের বগি সবচেয়ে পুরনো হওয়ায় এ ট্রেন বেশি দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে জেলা প্রশাসনের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত কাজ শুরু করেছে। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন কমিটির সদস্যরা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও তদন্ত কমিটির প্রধান মিতু মরিয়ম জানান, গত মঙ্গলবার থেকেই তদন্ত কাজ শুরু করেছি। প্রাথমিক পর্যায়ে যারা রেসপন্ড করেছে তাদের সাথে কথা বলেছি।

আখাউড়া রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শ্যামল কান্তি দাস জানান, স্টেশন মাস্টার থানায় একটি ইউডি (অপমৃত্যু) মামলা দায়ের করেছেন।

https://www.dailyinqilab.com/article/248268