চট্টগ্রাম বন্দর। ফাইল ছবি
৯ নভেম্বর ২০১৯, শনিবার, ১:০৫

চট্টগ্রাম বন্দরকে বারভিডার চিঠি: গাড়ির জন্য গড়তে চায় প্রাইভেট আইসিডি

প্রবেশে কড়াকড়ি ও চার্জ বেশি হওয়ায় আমদানিকারকরা যাচ্ছেন মোংলায় * এ খাতে কমেছে আমদানি ও রাজস্ব

চট্টগ্রাম বন্দরে গাড়ি রাখার ক্ষেত্রে জটিলতা এড়াতে প্রাইভেট আইসিডি (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) স্থাপন করতে চান গাড়ি আমদানিকারকরা। এ আগ্রহের কথা জানিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে তাদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা)। পাশাপাশি এজন্য প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছেন তারা।

বিশেষায়িত প্রাইভেট আইসিডি হলে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর আমদানি করা গাড়ির চাপ অনেকটাই কমে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, গাড়ি আমদানিকারকরা বন্দরের ইয়ার্ডকে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছেন। তারা গাড়ি খালাস না নিয়ে ফেলে রাখছেন সেখানে। বিরাট একটি অংশ গাড়ির দখলে থাকায় অন্য পণ্য রাখতে প্রায়ই জায়গা পাওয়া যায় না। বন্দরের ভেতরে সৃষ্টি হয় পণ্যজট। যে কারণে ব্যাহত হয় বন্দরের স্বাভাবিক পণ্য হ্যান্ডলিং কার্যক্রম।

আমদানিকারকরা জানান, আগে গাড়ি আমদানিকারক ও ক্রেতা সহজেই বন্দরের ভেতরে ঢুকতে পারতেন। ক্রেতারা বন্দরে গিয়ে গাড়ি পছন্দ করার পর দরদাম ঠিক করতেন। এরপর আমদানিকারক গাড়ি ডেলিভারি নিতেন। সম্প্রতি নিরাপত্তায় কড়াকড়ি আরোপের ফলে ক্রেতা ও আমদানিকারকরা বন্দরে ঢুকতে পারছেন না। এ অবস্থায় গাড়ি বিক্রিতে জটিলতা দেখা দিয়েছে। বিক্রি আগের চেয়ে কমে গেছে। আর বিক্রি কমে যাওয়ায় বন্দর থেকে গাড়ি ডেলিভারিও কমেছে।

আমদানিকারকরা আরও বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরে গাড়ি রাখার চার্জও তুলনামূলক বেশি। যা মোংলা বন্দরের প্রায় দ্বিগুণ। সময়মতো খালাস নিতে না পারলে আমদানি করা গাড়ি নিলামে তোলা হচ্ছে।

এসব জটিলতা এড়াতে অনেক আমদানিকারক এখন মোংলা বন্দরমুখী। এ কারণে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি কমে গেছে। তবে নিজস্ব আইসিডি হলে সেখানে ক্রেতা ও আমদানিকারকদের প্রবেশে কড়াকড়ি থাকবে না। ক্রেতারা দেখেশুনে গাড়ি পছন্দ করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে বেচাবিক্রি বাড়বে এবং বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানির পরিমাণও বাড়বে। গাড়ি নিলামে তোলার শঙ্কাও আর আমদানিকারকদের তাড়িয়ে বেড়াবে না। এসব কারণে তারা নিজস্ব আইসিডি স্থাপনে আগ্রহী।

বারভিডার সিনিয়র সহ-সভাপতি এসএম আনোয়ার সাদাত এ প্রসঙ্গে যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা প্রাইভেট আইসিডি নির্মাণ করতে চাই। গত মাসে এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানকে বারভিডার পক্ষ থেকে চিঠি দিয়েছি। কাস্টমস কমিশনারকেও আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। কমিশনার আশ্বস্ত করে বলেছেন, আমরা প্রাইভেট আইসিডি করতে পারলে সেখানে শুল্কায়নের জন্য কাস্টমসের একটি বুথ তিনি করে দেবেন। বন্দর চেয়ারম্যানও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।’

এ বারভিডা নেতা আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক নানা জটিলতার কারণে এ বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি কমে গেছে। প্রবেশে কড়াকড়ি ও গাড়ি নিলাম নিয়ে অতি মাত্রায় বাড়াবাড়ি আমদানিকারকদের ক্রমশ এ বন্দরবিমুখ করে তুলছে। গাড়ির জন্য আলাদা প্রাইভেট আইসিডি করা গেলে সেখানে এসব জটিলতা থাকবে না। প্রাইভেট আইসিডিতে অনেক বড় বিনিয়োগ লাগে।

তাই গাড়ি আমদানিকারকদের মধ্যে যারা এক্ষেত্রে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন তাদের নিয়ে একটি লিমিটেড কোম্পানি গঠনের চিন্তা করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আইসিডি করতে ৩-৪ বছর সময়ের প্রয়োজন হয়। সেই সময় পর্যন্ত প্রতিটি আমদানিকারকের পক্ষে দু’জন প্রতিনিধিকে যেন বন্দরে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয় সেই দাবি জানিয়েছি বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে।’

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি কমে যাওয়ায় কাস্টমসের রাজস্ব আদায় কমছে। গত অর্থবছরে (২০১৮-১৯) চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১২ হাজার ৬২টি বিভিন্ন ধরনের গাড়ি আমদানি হয়েছে।

যা থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ১ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে গাড়ি আমদানি হয়েছিল ১৬ হাজার ২১৯টি। কাস্টমসের আয় হয় ১ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরে তার আগের বছরের চেয়ে ৪ হাজার ১৫৭টি গাড়ি কম আমদানি হয়েছে। রাজস্ব আদায় কমেছে ১৪২ কোটি টাকা।

বারভিডার সভাপতি আবদুল হক যুগান্তরকে জানান, শুল্ক বৈষম্য ও চট্টগ্রাম বন্দরে চার্জ বেশি হওয়ার কারণে গাড়ির দাম বেড়ে যাচ্ছে। গাড়ি ক্রেতাদের ৮০ শতাংশ রিকন্ডিশন্ড গাড়িই পছন্দ করেন। কিন্তু নতুন গাড়ি ও রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শুল্ক বৈষম্য অনেক। তাই রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম এখন অনেক বেশি পড়ছে। এতে ক্রেতারা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।

আবদুল হক আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গাড়ি খালাসে যেসব জটিলতা রয়েছে তা এড়াতে আমরা নিজেরা প্রাইভেট আইসিডি করতে আগ্রহী। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, কাস্টমস ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আমাদের এ আগ্রহকে স্বাগত জানিয়েছে। আমরা আইসিডি নিয়ে কাজ করছি।’

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক যুগান্তরকে জানান, ‘গত মাসে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারভিডা কর্মকর্তাদের একটি বৈঠক হয়েছিল। সেখানে বারভিডার পক্ষ থেকে একটি আইসিডি স্থাপনের প্রস্তাব দেয়া হয়।’

বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট ১৯টি বেসরকারি আইসিডি রয়েছে। এ বন্দর দিয়ে রফতানি হওয়া পণ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ এবং আমদানি পণ্যের প্রায় ২১ শতাংশ এসব আইসিডির মাধ্যমে হ্যান্ডলিং হয়। তবে অ্যাসেসমেন্ট ও শুল্কায়ন জটিলতার কারণে প্রাইভেট আইসিডিতে বর্তমানে গাড়ি হ্যান্ডলিং হয় না বলে জানান আমদানিকারকরা।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/241914/