১১ মার্চ ২০১৭, শনিবার, ১০:১৫

বেসিক ও রাজশাহী কৃষি ব্যংকের ঋণে অনিয়ম

১০২ কোটির টাকার বেশি ক্ষতি হওয়ায় অডিট আপত্তি

বেসিক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণ প্রদান সংক্রান্ত অনিয়মের কারণে ১০২ কোটি ৬৫ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হওয়ায় অডিট আপত্তি প্রদান করা হয়েছে। আগামী ৬০ কার্য দিবসের মধ্যে অনাদায়ী টাকা আদায় করে অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির সুপারিশ করেছে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৬৬তম বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের আওতাধীন (বেসিক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক)’র ২০০৯-২০১০ অর্থবছরের হিসাব সম্পর্কিত বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের বার্ষিক অডিট রির্পোট, ২০০৯-২০১০’র অডিট আপত্তি/ নিয়ে আলোচনা হয় এবং আপত্তিগুলো কমিটি কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনার আলোকে নিষ্পত্তির সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও কমিটি বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের রিপোর্টভুক্ত অডিট আপত্তির মধ্য থেকে ত্রিপক্ষীয় সভা এবং বিএসআর জবাবের ভিত্তিতে ৯১টি নিরীক্ষা আপত্তিতে সর্বমোট জড়িত অর্থের পরিমাণ ১১৪ দশমিক ৯৫ কোটি টাকা এবং ২০০৭১ দশমিক ৩৫ মার্কিন ডলার নিষ্পত্তির সুপারিশ করে।

কমিটি সূত্রে জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের আওতাধীন বেসিক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। এ দুই ব্যাংকের ২০০৯-২০১০ অর্থবছরের হিসাব সম্পর্কিত বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের বার্ষিক অডিট রির্পোট, ২০০৯-২০১০’র অডিট আপত্তি/মন্তব্যের অনুচ্ছেদ নং-১ এ বর্ণিত ঋণ মঞ্জুরির শর্ত মোতাবেক ১০ দশমিক ৫১ কোটি টাকার জামানত রেজিস্টার্ড মর্টগেজ ছাড়া এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পালন না করে ঋণ বিতরণ করায় ব্যাংকের ক্ষতি ৪২ কোটি ৮৬ লাখ ৬৩ হাজার ৪৩৩ টাকা আর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে। অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে অনাদায়ী টাকা আদায় করে জমার প্রমাণক মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের নিকট ৬০ কার্য দিবসের মধ্যে দাখিল করার শর্তে আপত্তিটি নিষ্পত্তি করতে বলা হয়।

আপত্তির অনুচ্ছেদ-২ এ বর্ণিত কার্যাদেশের অ্যাসাইনমেন্ট মোতাবেক বিল না পাওয়া ও পর্যাপ্ত জামানত ছাড়া অনুমোদিত স্বল্প মেয়াদী ঋণ আদায় না করতে পারায় ব্যাংকের ক্ষতি ১,৩৮,৬২,৭১০ টাকা উত্থাপিত অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে অনাদায়ী টাকা আদায় হওয়ায় আপত্তিটি নিষ্পত্তির সুপারিশ করে।

আপত্তির অনুচ্ছেদ-৩ এ বর্ণিত অনুমোদিত ঋণ সীমার অতিরিক্ত ঋণ বিতরণ, বর্তমানে ব্যবসায়িক স্থবিরতায় ঋণ আদায়ের জন্য বিশেষ সুযোগ দিলেও তা কার্যকরী না করায় এলটিআর ও সিসি ঋণ বাবদ ব্যাংকের ক্ষতি ১,৪০,৪৭,১৮৭ টাকা উত্থাপিত অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটি ট্রেজারিতে বর্ণিত টাকা জমার প্রমাণক ৩০ দিনের মধ্যে দাখিল করার শর্তে আপত্তিটি নিষ্পত্তির সুপারিশ করে।

আপত্তির অনুচ্ছেদ-৪ এ বর্ণিত জামানত ঘাটতি এবং ঋণের টাকা আদায়ে প্রয়োজনীয় ডাউন পেমেন্ট ব্যতীত পুনঃতফসিল সুবিধা দেয়া সত্ত্বেও টাকা আদায়ে ব্যর্থতায় শ্রেণীবিন্যাসিত ঋণের জন্য ব্যাংকের ক্ষতি ১৬,৯৬,৯০,৬৯৮ টাকা; অনুচ্ছেদ-৫ এ বর্ণিত প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশ অমান্য করে কোনো প্রকার জামানত ব্যতীত পার্টির সঙ্গে যোগসাজশ করে অনিয়মিতভাবে চলতি হিসাবে টাকা না থাকা সত্ত্বেও সাময়িক জমাতিরিক্ত (টিওডি) সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে ব্যাংকের ১,৯২,৪৯,৯৭৯ টাকা আত্মসাৎ; অনুচ্ছেদ-৬ এ বর্ণিত মেসার্স বাংলাদেশ স্যু ম্যানুফ্যাকচারিং কোং লিঃ এর অনুকূলে প্রদত্ত এসটিএল ও সিসি (হাইঃ) ঋণের মেয়াদোর্ত্তীণ হওয়ায় ব্যাংকের ক্ষতি ১,২০,০৮,০১২ টাকা; অনুচ্ছেদ-৭ এ বর্ণিত শাখা ব্যবস্থাপক ক্ষমতাবর্হিভূতভাবে টিওডি এবং এসটিএল লোন সৃষ্টি করে গ্রাহককে আর্থিক সুবিধা প্রদান করায় ব্যাংকের ক্ষতি ১৩,৬০,৪৪,৮২৯ টাকা; অনুচ্ছেদ-৮ এ বর্ণিত মেসার্স নিদ্রা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিঃকে অনিয়মিতভাবে সিসি (হাইপো) ঋণের লিমিট অতিরিক্ত ঋণ বিতরণ এবং টার্ম লোনের কিস্তি খেলাপী হওয়ায় ও ঋণের দায় আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংকের ক্ষতি ৩,১১,৪৬,২১০ টাকা; অনুচ্ছেদ-৯ এ বর্ণিত চলতি হিসাবে জমার অতিরিক্ত উত্তোলন সুবিধা প্রদান এবং এসওডি ও সিসি (হাইপো) ঋণসীমার অনিয়মিতভাবে তিনগুণ অতিরিক্ত উত্তোলন সুবিধা প্রদান করায় ব্যাংকের ক্ষতি ১,২৩,৩৬,৬৭৩ টাকা; অনুচ্ছেদ-১০ এ বর্ণিত মেসার্স ইন্টার লিংক সেন্টার লিমিটেড ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইন্টার লিংক পিলসি লিঃ এর চলতি হিসাবে টাকা না থাকা সত্ত্বেও অর্থ প্রদান এবং ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে সিসি (হাইপে) ও এসটিএল ঋণ বিতরণ না করায় ব্যাংকের ক্ষতি ২,২২,৯১,৭৮২ টাকা; অনুচ্ছেদ-১১ এ বর্ণিত অবৈধভাবে লেনদেন করে জামানতবিহীন টিওডি লোন সৃষ্টি করায় ব্যাংকের ক্ষতি ৮৩,৩০,১৭০ টাকা; অনুচ্ছেদ-১২ এ বর্ণিত কার্যাদেশের বিপরীতে দেয় ঋণের কাজের মেয়াদ পার হবার দীর্ঘদিন পরও ঋণ আদায় না হওয়ায় ব্যাংকের ক্ষতি ১৩,৪৮,১৮,৬৫৩ টাকা; অনুচ্ছেদ-১৩ এ বর্ণিত কাজের মেয়াদ শেষলগ্নে ঋণ অনুমোদন, ঋণের মেয়াদ শেষ হলেও ঋণ আদায় না করা এবং মঞ্জুরি অনুযায়ী জামানত সম্পন্ন করতে না পারায় বিনিয়োগকৃত ১৬,৬৪,১৭৮ টাকা আদায় অনিশ্চিত; অনুচ্ছেদ-১৪ এ বর্ণিত দারিদ্র্য দূরীকরণ ঋণ কর্মসূচির আওতায় ভুয়া ঋণ প্রদানের মাধ্যমে আত্মসাৎ ৫৬,৯২,৭৩৮ টাকা; অনুচ্ছেদ-১৫ এ বর্ণিত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের যোগসাজশে ভুয়া আরপিএস হিসাবের বিপরীতে কোনো লোন সেফ ফাইল সৃষ্টি ছাড়াই ভুয়া আরপিএস/কৃষি লোন প্রদানের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করায় বর্তমানে অনাদায়ী ১৯,৫৩,৩৫৬ টাকা উত্থাপিত অডিট আপত্তিগুলোর প্রেক্ষিতে কমিটি ট্রেজারিতে বর্ণিত অনুচ্ছেদ অনুযায়ী টাকা জমার প্রমাণক ৯০ দিনের মধ্যে দাখিল করার শর্তে আপত্তিটি নিষ্পত্তির সুপারিশ করে।

অনুচ্ছেদ ১৬ এ বর্ণিত ঋণ প্রদানের পূর্বে সংশ্লিষ্ট ব্যবসার কোন ভবিষ্যৎ না থাকা সত্ত্বেও যথাযথ যাচাই বাছাই ব্যতিরেকে সিসি ঋণ প্রদান করায় মেয়াদ উর্ত্তীণ অবস্থায় অনাদায়ী ৩৬,৮৫,৯৭৭ টাকা; অনুচ্ছেদ-১৭ এ বর্ণিত প্রকল্পের যর্থাথতা যথাযথভাবে যাচাই বাছাই না করে প্রকল্প ঋণ প্রদান করার ফলে এবং প্রকল্পটির অস্তিত্ব বর্তমানে না থাকা সত্ত্বেও নামামাত্র টাকা আদায়ের ফলে ব্যাংকের অনাদায়ী ১,১০,৫২,০০০ টাকা উত্থাপিত অডিট আপত্তি দুটির প্রেক্ষিতে কমিটি ট্রেজারিতে বর্ণিত অনুচ্ছেদ অনুযায়ী টাকা জমার প্রমাণক ৯০ দিনের মধ্যে দাখিল করার শর্তে আপত্তিটি নিষ্পত্তির সুপারিশ করে।

কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, কমিটির সদস্য এ, কে, এম মাঈদুল ইসলাম, মো. মোসলেম উদ্দিন, পঞ্চানন বিশ্বাস, মো. শামসুল হক টুকু, রেবেকা মমিন এবং ওয়াসিকা আয়েশা খান।

http://www.dailysangram.com/post/275101