গ্রিক মূর্তি অপসারণ ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ চত্বরে অনুষ্ঠিত হেফাজতে ইসলামের বিশাল সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মাইনুদ্দিন রুহী
১১ মার্চ ২০১৭, শনিবার, ১০:০৭

আন্দরকিল্লার সমাবেশে হেফাজত নেতৃবৃন্দ

সুপ্রিম কোর্ট থেকে মূর্তি না সরালে ঢাকা ঘেরাওসহ শাপলা চত্বরে ফের অবস্থান

সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপনের প্রতিবাদে এবং অপসারণের দাবিতে ও হেফাজত নেতৃবৃন্দের মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগর শাখা গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের উত্তর গেট চত্বরে এক বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ করে।

বিক্ষোভ সমাবেশে হেফাজত নেতারা বলেন, সর্বোচ্চ বিচারালয়ের সামনে গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপন বাংলাদেশের গণমানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস, সংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও আদর্শিক চেতনার বিপরীত। কোনো মুসলমান মূর্তিকে ন্যায়বিচারের প্রতীক বিশ্বাস করলে তার ঈমান থাকবে না। বাংলাদেশে মূর্তি স্থাপনের চাহিদা ও সুযোগ কোনোটাই নেই। অবিলম্বে এই মূর্তি অপসারণ করতে হবে। অন্যথায় ঈমান, আক্বীদা ও ঐতিহ্য রক্ষার লক্ষ্যে মূর্তি অপসারণের দাবিতে প্রয়োজনে লাখ লাখ মানুষ নিয়ে ঢাকা ঘেরাওসহ শাপলা চত্বরে আবারো অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। নেতৃবৃন্দরা বলেন, অবিলম্বে গ্রিক মূর্তি অপসারণ করা না হলে ঢাকা ঘেরাও সহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

তারা বলেন, মসজিদের নগরী ঢাকাকে মূর্তির নগরী বানানো হচ্ছে কার স্বার্থে? দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভাস্কার্যের নামে মূর্তি তৈরি করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। যারা মূর্তির পক্ষে কথা বলছেন তারা জনবিচ্ছিন্ন। এরা নাস্তিকদের দালাল। মূর্তি ও অপসংস্কৃতি চর্চা থেকে সরকারকে বের হয়ে আসতে হবে। ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশের মূর্তি সংস্কৃতি কেন? মূর্তি ও অপসংস্কৃৃতি দু’টিই ইসলামবিরোধী। মূর্তি ও অপসংস্কৃতিকে বৈধ মনে করলে মুসলমানিত্ব থাকবে না। ইসলাম এসেছে মূর্তিরপুজার বিরুদ্ধে।

বক্তারা আরো বলেন, মহানবী (সা.) বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ আইন প্রণেতা হিসেবে স্বীকৃত। আমেরিকা সুপ্রিম কোর্টের সামনের ফটকে রাসূল (সা.) সর্বশ্রেষ্ঠ আইনপ্রণেতা হিসেবে ফলকে নাম আছে। ভারতের সুপ্রিম কোর্টেও আইন প্রণেতারূপে কোনো মূর্তির অবস্থান নেই। কোনো মুসলিম দেশেও এরূপ কোনো নজির নেই। তাহলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের সামনে কেন মূর্তি থাকবে। সুতরাং সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে মূর্তি অপসারণ করতেই হবে। অন্যথায় জান-মাল দিয়ে হলেও ঈমান রক্ষায় ইসলামী জনতা গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাধ্য হবে, যা সরকারের জন্য শুভ হবে না।

কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত অর্থসম্পাদক মাওলানা হাজী মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশ আরো বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী, মাওলানা ক্বারী মুবিনুল হক, মাওলানা আ.ন.ম আহমদুল্লাহ, মাওলানা জয়নুল আবেদীন কুতুবী, মাওলানা মনছুর আলম, মাওলানা শেখ আবু তাহের, মাওলানা জুনাইদ জওহর, মাওলানা অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইউনুস, মাওলানা ইকবাল খলিল, মাওলানা মুহাম্মদ হানিফ, মাওলানা তকি ওসমানী, মাওলানা কুতুব উদ্দিন, মাওলানা সায়েম উল্লাহ, মাওলানা হাবিবুর রহমান হাকীম, মাওলানা আব্দুল আজিজ, মাওলানা জুনায়েদ বিন ইয়াহইয়া, মাওলানা কামরুল ইসলাম কাসেমী, মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ, মাওলানা নাজমুস সাকিব, মাওলানা আবুল কাশেম, মাওলানা ফয়জুর রহমান ফয়েজ, মাওলানা মাহামুদুল হাসান খাকি, মাওলানা নাঈম উদ্দিন, মাওলানা সাইফুল্লাহ, মাওলানা নুরুল ইসলাম প্রমুখ।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে একের পর এক ইসলাম বিদ্বেষী আইন হচ্ছে, পাঠ্যপুস্তকে ইসলামবিরোধী পাঠ যোগ করা হয়েছে, সংবিধান থেকে ইসলামের মৌলিক বিধান তুলে দেয়া হয়েছে, নারী নীতিমালার নামে মা-বোনদেরকে বেহায়াপনার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। সরকারের এসব নীতির বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলাম আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছে। এবার গ্রিক মূর্তির অপসারণের দাবিতে হেফাজতের কর্মসূচি চলছে। নেতৃবৃন্দরা বলেন, গ্রিক মূর্তি অপসারণের চলমান আন্দোলন বানচাল করতে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলায় হেফাজত নেতৃবৃন্দর বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। অবিলম্বে এসব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

নেতৃবৃন্দরা আরো বলেন, অতীতে শাপলা চত্বরের অবস্থান কর্মসূচি থেকে আমরা হেফাজত আমীরের নির্দেশে চলে এসেছি কিন্তু ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ যদি সরকার কঠোর হাতে দমন না করে এবং অবিলম্বে গ্রিক মূর্তি অপসারণ করা না হয় তাহলে আবারো শাপলা চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি দেয়া হবে। তৌহিদী জনতা এবার শাপলা চত্বর থেকে আর ফিরে আসবে না যতক্ষণ না মূর্তি অপসারণ করা না হবে।

সিলেট ব্যুরো: হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে গ্রিক দেবীর মূর্তি অপসারণের দাবিতে সিলেটে মিছিল-সমাবেশ করেছে হেফাজতের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা সিলেট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে থেকে হোফাজত নেতা হাফেজ শাব্বীর আহমদ রাজীর নেতৃত্বে শুরু হওয়া মিছিলটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বন্দরবাজারস্থ পত্রিকা পয়েন্টে সমাবেশে মিলিত হয়।

সিলেট মহানগর তৃণমূল হেফাজতের আহ্বায়ক হাফেজ শাব্বীর আহমদ রাজির সভাপতিত্বে ও ছাত্রনেতা-হেফাজত কর্মী হাফেজ শাহিদ হাতিমীর উপস্থাপনায় মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তরা বলেন, নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে কখনো ন্যায়ের প্রতীক গ্রিক মূর্তি হতে পারে না। বক্তারা অবিলম্বে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সামন থেকে স্থাপিত মূর্তি অপসারণের জোর দাবি জানান। সভাপতির বক্তব্যে তৃণমূল হেফাজতের আহ্বায়ক হাফেজ শাব্বীর আহমদ রাজি বলেন- এদেশের আধ্যাত্মিক রাহবর আল্লামা শাহ আহমদ শফি ও আল্লামা নূর হোসেন কাসেমীর আহবানে আমরা রাজপথে এসেছি। মূর্তি অপসারণের এই দাবি আমাদের ঈমানের দাবি। তিনি শীর্ষ হেফাজত নেতৃবৃন্দের উপর জারিকৃত গ্রেফতারি পরওয়ানার তীব্র নিন্দা জানান।

পথ সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মাওলানা কবির আহমদ, মাওলানা সালেহ আহমদ শাহবাগী, মাওলানা এনামুল হক, মুফতী মুশতাক আহমদ ফুরকানী, সালমান বিন মালেক, হাফেজ মাওলানা আহমদুল হক উমামা, মাওলানা নাসির উদ্দিন নেজামপুরী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাবিব আহমদ, শাহ মাছরুর আহমদ, আদনান চৌধুরী, মাছনুন আহমদ, মাওলানা আহমদ শফী, শাহদাত হোসেন, তামিম আহমদ, হাফেজ আব্দুল করিম হেলালী, জামিল আহমদ প্রমুখ।

পলাশ (নরসিংদী) সংবাদদাতা: দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে গ্রিক দেবী মূর্তি অপসারণের দাবিতে নরসিংদীর পলাশে আল খিদমা ওলামা পরিষদের আয়োজনে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকালে পলাশ কো-অপারেটিভ জুটমিল মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে শত শত ধর্মপ্রাণ মুসল্লি একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ওয়াপদা রোড হয়ে বিএডিসি মোড় হয়ে পলাশ বাসস্ট্যান্ডে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশের মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার সর্বোচ্চ স্থান সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে কথিত ন্যায়ের প্রতীক নগ্ন-অশ্লীল দেবী থেমিসের মূর্তি স্থাপন হচ্ছে চরম ধৃষ্টতা এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের অবমাননা।

স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের নিজস্ব ইতিহাস, কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও আত্মমর্যাদাবোধেরও সম্পূর্ণ বিপরীত ও সাংঘর্ষিক। গ্রিক দেবীর মূর্তি নয়, মুসলমানদের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতীক হলো মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কুরআন। মহান আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলামে মূর্তি স্থাপন হারাম। বক্তারা আরো বলেন, আমাদের আন্দোলন কোনো সরকারকে বসানোর বা নামানোর আন্দোলন নয়। আমাদের আন্দোলন ইসলাম ও মুসলমানদের অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন। অবিলম্বে মূর্তি অপসারণ করে দেশের ৯২ ভাগ মুসলমানদের কাতারে সামিল হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- আল খিদমা ওলামা পরিষদের পলাশ উপজেলার সভাপতি মাওলানা হেদায়েতুল ইসলাম কাশেমী, সহ-সভাপতি মুফতি আব্দুর রহিম, বেলায়েত হোসেন, মাওলানা মিজানুর রহমান, কারী মো. ইসমাঈল হস এলাকার ধর্মপ্রাণ তৌহিদী জনতা।

http://www.dailysangram.com/post/275094