১ নভেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ১২:৫১

আজ থেকে কার্যকর নয়া সড়ক পরিবহন আইন

সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড

আজ শুক্রবার থেকে সারা দেশে কার্যকর হতে যাচ্ছে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮। এক বছর দুই মাস পরে আইনটি কার্যকর হচ্ছে। এই আইনের ফলে সড়কে অনেকটাই শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে সাধারণ মানুষ মনে করছেন। এত দিন ৭৯ বছরের পুরনো আইন দিয়ে সড়ক নিয়ন্ত্রণ হয়ে আসছিল।

নতুন আইনে সব ধারায় আগের চেয়ে সাজা বাড়ানো হয়েছে। ফলে আইনটি কার্যকর হলে সড়কে দুর্ঘটনা কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হওয়ার জেরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারা দেশে নজিরবিহীন আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর ওই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে সড়ক পরিবহন আইন পাস করা হয়। ওই বছরের ৮ অক্টোবর আইনের গেজেট জারি করা হলেও নানা কারণে আইনটি এত দিন ঝুলে ছিল। অবশেষে আইনটি কার্যকর হতে যাচ্ছে।

নতুন আইনে বেপরোয়া বা অবহেলায় গাড়ি চালানোর কারণে কেউ গুরুতর আহত বা কারো প্রাণহানি হলে অপরাধীর সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। তদন্তে যদি দেখা যায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চালক বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাহলে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী শাস্তি দেয়া হবে। সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাজা হবে ফাঁসি। তবে এটা তদন্ত সাপেক্ষে এবং তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্ধারণ করবে। এটি অজামিনযোগ্য শাস্তি। আগের আইনে ছিল তিন বছরের কারাদণ্ড ও তা জামিনযোগ্য।

নতুন সড়ক আইনে শিক্ষানবিস লাইসেন্স ছাড়া কর্তৃপক্ষের দেয়া যেকোনো লাইসেন্সের বিপরীতে ১২ পয়েন্ট দেয়া থাকবে। দোষ করলে তা কাটা যাবে। লালবাতি অমান্য, ওভারটেক, গতিসীমা অমান্য, বিপরীত দিক থেকে গাড়ি চালানো, ওজনসীমা লঙ্ঘন, নেশাগ্রস্ত হয়ে গাড়ি চালালে পয়েন্ট কাটা যাবে চালকের। এ বিধান আগে ছিল না।

নতুন আইনে বৈধ চালক ছাড়া নিয়োগ না দেয়ার বিধান আবারো যুক্ত করে বলা হয়েছে, কারো ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে তাকে চালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া যাবে না। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুসারে, লিখিতভাবে চুক্তি সম্পাদন ও নিয়োগপত্র ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো ব্যক্তিকে গণপরিবহনের চালক নিয়োগ করতে পারবে না। নিয়োগপ্রাপ্ত চালক তার কাগজপত্র গাড়িতে প্রদর্শন করবেন। এ ছাড়া লাইসেন্স ছাড়া কন্ডাক্টর নিয়োগ করা যাবে না বলে বিধান করা হয়েছে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আগে এ অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল চার মাসের কারাদণ্ড বা ৫০০ টাকা অর্থদণ্ড।

কর্তৃপক্ষ ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা সমিতি ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি, প্রদান ও নবায়ন করলে শাস্তি অনধিক দুই বছর। তবে অন্তত ছয় মাসের জেল বা এক থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রয়েছে। নিবন্ধন ছাড়া গাড়ি চালালে অনধিক ছয় মাসের জেল বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

নতুন আইনে ফিটনেস সনদ ছাড়া বা মেয়াদ পেরোনো ফিটনেস সনদ ব্যবহার করে ইকোনমিক লাইফ অতিক্রান্ত বা ফিটনেসের অনুপযোগী, ঝুঁকিপূর্ণ গাড়ি চালালে ছয় মাসের জেল বা অনধিক ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেয়া হবে। এ ছাড়া আরো বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে আগের তুলনায় শাস্তি বাড়ানো হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/452678/