১০ অক্টোবর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১২:২০

শিক্ষক-শিক্ষার্থী অ্যালামনাইয়ের ২৫ দফা দাবি

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কারসহ ২৫ দফা দাবি করেছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বুয়েট অ্যালামনাই।

এর মধ্যে রয়েছে বুয়েট শিক্ষক সমিতির ৮, শিক্ষার্র্থীদের ১০ ও অ্যালমনাইয়ের ৭ দফা। তবে বুধবার শেরেবাংলা হলের প্রভোস্ট মো. শাহিনুর ইসলাম পদত্যাগ করায় শিক্ষার্থীদের একটি দাবি বাস্তবায়ন হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের ১০ দফা :

১. সিসিটিভি ফুটেজ ও জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে শনাক্তকারী খুনিদের প্রত্যেকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা।

২. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সিসিটিভি ফুটেজ থেকে শনাক্ত করা সবাইকে ১১ অক্টোবর বিকাল ৫টার মধ্যে আজীবন বহিষ্কার।

৩. মামলা চলাকালে সব খরচ এবং আবরারের পরিবারের সব ক্ষতিপূরণ বুয়েট প্রশাসনকে বহন করতে হবে। এ মর্মে অফিশিয়াল নোটিশ ১১ অক্টোবর ৫টার মধ্যে দিতে হবে।

৪. দায়েরকৃত মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অধীনে স্বল্পতম সময়ে নিষ্পত্তি করতে বুয়েট প্রশাসনকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

৫. অবিলম্বে চার্জশিটের কপিসহ অফিশিয়াল নোটিশ দিতে হবে।

৬. সাত দিনের মধ্যে (১৫ অক্টোবর) বুয়েটে সব রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রম স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।

৭. বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কেন ৩০ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পরও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হননি এবং ৩৮ ঘণ্টা পরে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করেন এবং কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে স্থান ত্যাগ করেন। তাকে সশরীরে ক্যাম্পাসে এসে বুধবার দুপুর ২টার মধ্যে জবাবদিহি করতে হবে। তবে সকালেই আবরারের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিতে গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া যান ভিসি।

৮. আবাসিক হলগুলোয় র‌্যাগের নামে ও ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর সব ধরনের শারীরিক, মানসিক নির্যাতন বন্ধ করতে হবে এবং এ ধরনের সন্ত্রাসে জড়িত সবার ছাত্রত্ব প্রশাসনকে বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে আহসানউল্লাহ হল এবং সোহরাওয়ার্দী হলের আগের ঘটনাগুলোতে জড়িত সবার ছাত্রত্ব ১১ অক্টোবর বিকাল ৫টার মধ্যে বাতিল নিশ্চিত করতে হবে।

৯. পূর্বে এ ধরনের ঘটনা প্রকাশ এবং পরবর্তী সময়ে ঘটা যে কোনো ঘটনা প্রকাশের জন্য একটা কমন প্লাটফর্ম (কোনো সাইট বা ফর্ম) থাকতে হবে এবং নিয়মিত প্রকাশিত ঘটনা রিভিউ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। এ প্লাটফর্ম হিসেবে বুয়েটের বিআইআইএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে হবে এবং ১১ অক্টোবর বিকাল ৫টার মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি প্রদর্শন করতে হবে। পরবর্তী এক মাসের মধ্যে কার্যক্রম পূর্ণরূপে শুরু করতে হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে সব হলের প্রত্যেক ফ্লোরে উইংয়ের দু’পাশে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করতে হবে।

১০. রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে আবাসিক হল থেকে ছাত্র উৎখাতের ব্যাপারে অজ্ঞ থাকা এবং ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হওয়ায় শেরেবাংলা হলের প্রভোস্টকে ১১ অক্টোবর বিকাল ৫টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে। যদিও শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. একেএম মাসুদ বেলা ৩টার দিকে জানান, শেরেবাংলা হলের প্রভোস্ট জাফর ইকবাল খান নিজেই পদত্যাগ করেছেন।

অ্যালামনাইয়ের ৭ দফা :

১. অনতিবিলম্বে হত্যার সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিশেষ বিচার ট্রাইব্যুনালের আওতায় এনে দ্রুততম সময়ে বিচারের ব্যবস্থা।

২. হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সব ছাত্রকে অবিলম্বে বুয়েট থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার।

৩. বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গ সংগঠনভিত্তিক ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারীদের সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা।

৪. বুয়েট প্রশাসনকে ঐতিহ্য পরিপন্থী যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব ও প্রভাবমুক্ত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।

৫. অবিলম্বে ভিসির অপসারণসহ প্রশাসনের আমূল পরিবর্তন করে এ ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের মান অতীতের মতো সমুন্নত রাখতে সুযোগ্য, নির্ভীক ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের পদায়ন।

৬. র‌্যাগিং এবং অন্যান্য অজুহাতে ছাত্রছাত্রী নির্যাতন নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।ক্যাম্পাসে সব শিক্ষার্থীর সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর ব্যবস্থা এবং ৭. আবরার হত্যাসহ ইতিপূর্বে সংঘটিত অন্যান্য ছাত্র নির্যাতনের ঘটনাবলীর ক্ষেত্রে অসম্পূর্ণ বিচারকার্য অবিলম্বে সম্পন্ন করে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।

শিক্ষক সমিতির ৮ দফা :

১. দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

২. হত্যাকারীদের বুয়েট থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার।

৩. ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এ শাস্তির ব্যবস্থা।

৪. বুয়েটের সব আবাসিক হল থেকে বহিরাগতদের সরিয়ে হলের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা।

৫. বুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পরোক্ষ রাজনীতি নিষিদ্ধ।

৬. র‌্যাগিং ও নির্যাতন বন্ধে আগের সব র‌্যাগিং ও নির্যাতনের সুষ্ঠু তদন্ত এবং শাস্তির ব্যবস্থা।

৭. বুয়েটের ওয়েবসাইটে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ করার ব্যবস্থা এবং ৮. ব্যর্থতার দায় নিয়ে বুয়েট থেকে ভিসিকে পদত্যাগ করতে হবে। স্বেচ্ছায় তিনি পদত্যাগ না করলে অপসারণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/230203