১০ অক্টোবর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১২:০০

প্রতিবাদে উত্তাল গোটা দেশ ॥ খুনিদের ফাঁসিসহ ১০ দাবিতে উত্তপ্ত বুয়েট

  • ভিসির পদত্যাগের দাবিতে একাট্টা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
    * ১০ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধের দাবি
    * ছাত্রলীগের ‘সাংগঠনিক নেত্রী’ হিসেবে শেখ হাসিনা দায় এড়াতে পারেন না বলে প্রতিবাদ সমাবেশে দাবি
    * ছাত্রলীগ ঘাতক তৈরির মেশিন
    স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তৃতীয় দিনের মতো উত্তল রয়েছে বুয়েট। ভিসির পদত্যাগের দাবিতে একাট্টা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আবরারের খুনিদের ‘ফাঁসি চাই’ স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট ক্যাম্পাস। খুনীদের ফাঁসিসহ ১০ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি বলছে, অদক্ষ ভিসির কারণে বুয়েটকে নষ্ট হতে দেয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষক সমিতি। এ দিকে ঘটনায় বুয়েটের শেরেবাংলা হলের প্রভোস্ট ড. মো. জাফর ইকবাল খান পদত্যাগ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত নিপীড়নবিরোধী অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রতিবাদ সমাবেশে ফাহাদ হত্যাকাণ্ডসহ ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের জন্য সংগঠনটির ‘সাংগঠনিক নেত্রী’ হিসেবে শেখ হাসিনা দায় এড়াতে পারেন না বলে মন্তব্য করে বলা হয়েছে, সরকারের দায়িত্বে অবহেলার কারণে শুধু আবরারই খুন হয়নি, অনেক শিক্ষার্থীর জীবন নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া খুনীদের ফাঁসির দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, মানববন্ধন অনষ্ঠিত হয়েছে।
    গতকাল বুধবার সকাল থেকে বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়। সেখানে এক সাংবাদিক সম্মেলন থেকে তুলে ধরা হয়েছে নতুন ১০ দফা দাবি। শিক্ষার্থীদের দেয়া ১০ দফা দাবির মধ্যে প্রধান হচ্ছে আবরার হত্যায় জড়িত সবার ফাঁসির দাবি। দুপুরে ১০ দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টার দিকে বকশিবাজার থেকে পলাশী মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে ব্যারিকেড দিয়ে সড়ক অবরোধ করেন তারা।
    সেখানে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ১০ দফা দাবি তুলে ধরে বলা হয়, সেগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে তিনজন এসব দাবি সাংবাদিকদের সামনে পড়ে শোনান। তাদের একজন প্রতিনিধি বলেন, বেঁধে দেয়া সময়ে দাবি পূরণ না করা হলে ১৪ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষাসহ সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত রাখতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দাবি মানা না হবে, ততক্ষণ তারা ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এই ঘোষণার পর স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে বুয়েট ক্যাম্পাস। মিছিলে ফাঁসি চেয়ে স্লোগান দেন তারা। পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের কালো হাত গুঁড়িয়ে দেয়ার মতো স্লোগান দিতে দিতে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরছেন। কেউ কেউ ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের পদত্যাগ দাবিতেও স্লোগান দেন।
    শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবি হলো
    ১. খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে: সিসিটিভি ফুটেজ ও জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে শনাক্তকারী খুনিদের প্রত্যেকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
    ২. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সিসিটিভি ফুটেজ থেকে শনাক্ত করা সবাইকে ১১ অক্টোবর ২০১৯ বিকাল ৫টার মধ্যে আজীবন বহিষ্কার নিশ্চিত করতে হবে।
    ৩. মামলা চলাকালে সব খরচ এবং আবরারের পরিবারের সব ক্ষতিপূরণ বুয়েট প্রশাসনকে বহন করতে হবে। এ মর্মে অফিশিয়াল নোটিশ ১১ তারিখ ৫টার মধ্যে প্রদান করতে হবে।
    ৪. আবরার হত্যায় দায়ের করা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অধীনে স্বল্পতম সময়ে নিষ্পত্তি করতে বুয়েট প্রশাসনকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বুয়েট প্রশাসনকে সক্রিয় থেকে সব প্রক্রিয়া নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং নিয়মিত ছাত্রদের আপডেট করতে হবে।
    ৫. অবিলম্বে চার্জশিটের কপিসহ অফিশিয়াল নোটিশ দিতে হবে।
    ৬. বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে দীর্ঘদিন ধরে বুয়েট হলে হলে ত্রাসের রাজনীতি কায়েম করে রাখা হয়েছে। জুনিয়র মোস্ট ব্যাচকে সবসময় ভয়ভীতি প্রদর্শনপূর্বক জোর করে রাজনৈতিক মিটিং-মিছিলে যুক্ত করা হয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে যেকোনো সময় যেকোনো হল থেকে সাধারণ ছাত্রদের জোর প্রদর্শনপূর্বক হল থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে হলে হলে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। রাজনৈতিক সংগঠনের এমন কর্মকা-ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ। তাই আগামী সাত দিনের মধ্যে (১৫ অক্টোবর) বুয়েটে সব রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রম স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।
    ৭. বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম কেন ৩০ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পরও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হননি এবং ৩৮ ঘণ্টা পর উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করেন এবং কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে স্থান ত্যাগ করেন। তাকে সশরীরে ক্যাম্পাসে এসে আজ বেলা ২টার মধ্যে জবাবদিহি করতে হবে।
    ৮. আবাসিক হলগুলোতে র‌্যাগ ডে নামে ও ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর সব ধরনের শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন বন্ধ করতে হবে এবং এ ধরনের সন্ত্রাসে জড়িত সবার ছাত্রত্ব প্রশাসনকে বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে আহসানউল্লা হল এবং সোহরাওয়ার্দী হলের পূর্বের ঘটনাগুলোতে জড়িত সবার ছাত্রত্ব বাতিল ১১ অক্টোবর বিকাল ৫টার মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে।
    ৯. পূর্বের এ ধরনের ঘটনা প্রকাশ এবং পরবর্তী সময়ে ঘটা যেকোনো ঘটনা প্রকাশের জন্য একটা কমন প্ল্যাটফরম, কোনো সাইট বা ফরম থাকতে হবে এবং নিয়মিত প্রকাশিত ঘটনা রিভিউ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারের ব্যবস্থা নিতে হবে। এই প্ল্যাটফরম হিসেবে বুয়েটের বিআইআইএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে হবে এবং ১১ অক্টোবর বিকাল ৫টার মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি প্রদর্শন করতে হবে। পরবর্তী ১ তারিখের মধ্যে কার্যক্রম পূর্ণরূপে শুরু করতে হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে সব হলের প্রত্যেক ফ্লোরে উইংয়ের দুপাশে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করতে হবে।
    ১০. রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে আবাসিক হল থেকে ছাত্র উৎখাতের ব্যাপারে অজ্ঞ থাকা এবং ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হওয়ায় শেরেবাংলা হলের প্রভোস্টকে ১১ অক্টোবর বিকাল ৫টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে।
    বুয়েটে শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ: বুয়েট শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের রাজনীতিও শিগগিরই নিষিদ্ধ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতির এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
    বুয়েট ক্যাম্পাসে আবরার হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সামনে এ তথ্য জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. একেএম মাসুদ। তিনি আন্দোলনকারীদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। শিক্ষার্থীদের রাজনীতিও শিগগিরই নিষিদ্ধ করা হবে। তিনি বলেন, একজন অদক্ষ ভিসির কারণে আমাদের প্রাণপ্রিয় প্রতিষ্ঠানকে নষ্ট হতে দেব না। আবরার ফাহাদ হত্যাকা-কে কেন্দ্র করে চলমান পরিস্থিতিতে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় বৈঠকে বসেন বুয়েট শিক্ষক সমিতির তিনশ শিক্ষক। বৈঠক শেষে দুপুর আড়াইটায় শিক্ষার্থীদের সামনে এসে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
    শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা তোমাদের নিরাপত্তা দিতে পারিনি। আমরা অপরাধী। বুয়েট শিক্ষক সমাজ আবরারের বাবা-মার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। তবে হত্যাকা-ে জড়িতদের বুয়েট থেকে আজীবন বহিষ্কার করতে যাচ্ছি আমরা। তিনি বলেন, তিনশ শিক্ষকের সমন্বয়ে মিটিং হয়েছে। সে মিটিংয়ে নেয়া সিদ্ধান্ত আমরা লিখিত আকারে সুপারিশ করবো। এছাড়া বুয়েটের স্বার্থে কোনো শিক্ষক ও শিক্ষার্থী পরোক্ষ রাজনীতিতে জড়িত হবে না বলেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সময় ভিসির পদত্যাগসহ আট দফা তুলে ধরেন তিনি।
    ভিসির পদত্যাগ চাইলেন ৩০০ শিক্ষক: বুয়েট ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অন্তত তিনশ' শিক্ষক। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত শিক্ষক সমিতির এক বৈঠক থেকে এ দাবি করা হয়। এতে অন্তত ৩০০ শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে পদত্যাগ করেন শেরেবাংলা হলের প্রভোস্ট ড. মো. জাফর ইকবাল খান।
    বৈঠকে হত্যাকা- কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে বুয়েট ভিসির পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বুয়েট শিক্ষক সমিতি। তারা আবরার হত্যায় প্রশাসনিক ব্যর্থতার দায় নিয়ে ভিসি সাইফুল ইসলামকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান।
    এর আগে বুয়েট অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে বুয়েট ভিসির অপসারণ দাবি করা হয়। অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী এসোসিয়েশনের পক্ষে এই দাবি করেন।
    শিক্ষকদের ৮ দফা দাবি
    ১. দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
    ২. হত্যাকারীদের বুয়েট থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করতে হবে।
    ৩. ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
    ৪. বুয়েটের সব আবাসিক হল থেকে বহিরাগতদের সরিয়ে হলের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।
    ৫. বুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পরোক্ষ রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।
    ৬. র‌্যাগিং ও নির্যাতন বন্ধে আগের সব র‌্যাগিং ও নির্যাতনের সুষ্ঠু তদন্ত এবং শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
    ৭. বুয়েটের ওয়েবসাইটে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ করার ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং
    ৮. ভিসির অদক্ষতা ও নির্লিপ্ততায় আমরা ক্ষুব্ধ। তিনি প্রশাসনিক কাজে পূর্ণ সহায়তা দেননি বলেই এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আবরার হত্যার দায় তার। এ দায় নিয়ে বুয়েট থেকে তাকে পদত্যাগ করতে হবে। স্বেচ্ছায় তিনি পদত্যাগ না করলে অপসারণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়।
    শেরেবাংলা হলের প্রভোস্টের পদত্যাগ: আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় শেরেবাংলা হলের প্রভোস্ট ড. মো. জাফর ইকবাল খান পদত্যাগ করেছেন। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ৩০০ শিক্ষকের সমন্বয়ে এক বৈঠকে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। বৈঠকে হত্যাকা-কে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে বুয়েট ভিসির পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবির সাথে সংহতি প্রকাশ করে বুয়েট শিক্ষক সমিতি।
    নিপীড়নবিরোধী অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সমাবেশ: বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকা-সহ ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক কর্মকা-ের জন্য সংগঠনটির ‘সাংগঠনিক নেত্রী’ হিসেবে শেখ হাসিনা দায় এড়াতে পারেন না বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেছেন, একজন মন্ত্রী পরিষ্কারভাবে বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা ছাড়া বাংলাদেশে কিছু হয় না। যদি তাই হয়, ছাত্রলীগের নেতারা তো পরিষ্কারভাবে বলবে, আমাদের এই অধিকার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ এই ছাত্রলীগ গঠন ও নেতাদের নিয়োগ দেয়া ও বরখাস্ত করার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীরই। তাহলে ছাত্রলীগের বর্তমান কার্যকলাপের দায়ও সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে চাঁদা চাওয়ার জন্য সমালোচনার মুখে থাকা ছাত্রলীগ এখন ব্যাপক সমালোচনায় রয়েছে বুয়েটছাত্র আবরারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায়।
    আবরার হত্যাকা- নিয়ে সারাদেশে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘নিপীড়নবিরোধী অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষক’ ব্যানারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, সরকারের দায়িত্বে অবহেলার কারণে শুধু আবরারই খুন হয়নি, অনেক শিক্ষার্থীর জীবন নষ্ট হয়েছে। আইন-আদালত বলে বাংলাদেশে এখন কোনোকিছু কাজ করে না। বাংলাদেশে কোনো প্রতিষ্ঠান কাজ করে না।
    আনু মুহাম্মদ বলেন, যে ক্ষমতাসীনরা ভিসি, প্রভোস্ট, এবং ছাত্র-তরুণদের বিষাক্ত করে নিজেদের ক্ষমতা, আধিপত্য, সা¤্রাজ্যবাদী আধিপত্য, দেশের সম্পদ পাচারের ব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করতে চায়, দেশের মানুষকে নিরাপত্তাহীনতার দিকে ঠেলে দিতে চায়, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলাটাই হচ্ছে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব। আর সেই প্রশ্ন তোলার রাজনীতি ছাড়া বাংলাদেশের কোনো ভবিষ্যৎ নেই।
    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, আমরা লেজুড়বৃত্তির রাজনীতিতে চলে গেছি, দলকানা রাজনীতিতে চলে গেছি। বিবেক এবং সততাকে অবহেলা করে ব্যক্তিগত লোভ-লালসা, ব্যক্তিগত সুবিধার দিকে চলে গেছি। ফলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মর্যাদা হারিয়ে গেছে।
    প্রত্যেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের টর্চার সেলগুলোতে নির্যাতিত হয়ে ছেলেদের মেডিকেলে গিয়ে ভর্তি হতে হয়। আজকের সমাবেশের পরেও এই টর্চার রুমগুলো উঠে যাবে না, হলগুলো থেকে গণরুমের অত্যাচার বন্ধ হবে না। এই অবস্থা থেকে মুক্তির পথ খুঁজে নেয়ার জন্য আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে প্রতিবাদ করতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান এই শিক্ষক।
    আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, যে বড় ভাইদের কথা ছিল ছোটদের আগলে রাখা, তারাই আজ আবরারকে খুন করেছে। এটি কেন হল? আবরারের পোস্টে তাদের কী ক্ষতি হয়েছিল? বরং আবরারকে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীন মত প্রকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হল।
    বুয়েট কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে ব্যারিস্টার বড়ুয়া বলেন, যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রক্টর এবং প্রভোস্টগণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা না দিতে পারেন, তাহলে কে বলেছে আপনাদের দায়িত্ব নিতে? কেউ তো আপনাদের পায়ে ধরেনি।
    সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল,অধ্যাপক কাবেরী গায়েন, অভিভাবক রাফিজা শাহিন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিউলী সবুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তানজীমউদ্দিন খান, আবদুল মান্নান, শাওন্তী হায়দার, কাজলী সেহরীন ইসলাম, মার্জিয়া রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আল রাজী, ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায়, শিক্ষার্থী অদিতি রায়, অভিভাবক নাজমা বেগম,ঢাবির শামসুন নাহার হলের সংস্কৃতিক সম্পাদক অরুণিমা তাহসীন উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সামিনা লুৎফা।
    ১১ বিশিষ্ট নাগরিক: দেশের রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ছাত্র, যুব ও দলীয় কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। আদর্শের ভিত্তিতে দল পরিচালনা না করে পেশিশক্তিনির্ভর দল গঠন ও পরিচালনা কি ভয়াবহ পরিণতি আনতে পারে, তা সবার সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
    গতকাল দেয়া এক বিবৃতিতে কথাগুলো বলেছেন দেশের ১১ বিশিষ্ট নাগরিক। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ নিহত হওয়ার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল এই বিবৃতি দিলেন বিশিষ্টজনেরা। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বিবৃতিটি পাঠান।
    বিবৃতিতে বলা হয়, এক গভীর উৎকণ্ঠা ও অসীম বেদনায় নিমজ্জিত আজ পুরো জাতি। বুয়েট শিক্ষায়তনে সহপাঠী আবরার ফাহাদকে একদল ছাত্রলীগ কর্মী কর্তৃক নির্মমভাবে হত্যা, সাম্প্রতিক সময়ে যুবলীগ নামক যুব সংগঠনের সামাজিক অনাচার, মাদক ব্যবসা ও দুর্নীতির অবিশ্বাস্য নিদর্শন আমাদের দারুণভাবে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিষ্ঠিত ছাত্র ও যুব সংগঠনের এ বিপথগামিতা আমাদের হতাশ ও ব্যথিত করে।
    বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাসমূহ প্রমাণ করে রাজনৈতিক দলের আদর্শ বিহীন দেউলিয়া চরিত্র। আমাদের রাজনৈতিক দলসমূহ সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ তাদের ছাত্র, যুব ও দলীয় কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে। শুধু তাই নয়, কোনো প্রকার আদর্শের ভিত্তিতে দল ও অঙ্গসংগঠন পরিচালনা না করে শুধু পেশিশক্তিনির্ভর দল গঠন ও পরিচালনা কি ভয়াবহ পরিণতি আনয়ন করে, তা আজ সবার সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
    বিশিষ্টজনেরা বলেন, আবরার হত্যার শুধু দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাঝে আমাদের এ ভয়াবহ সংকট নিরসন হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা মনে করি মানবিক মূল্যবোধের যে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আজ জাতিকে গ্রাস করেছে, তা থেকে মুক্তি পেতে হলে সরকার, শাসক দল ও সব রাজনৈতিক দলকে নিজ নিজ দল, অঙ্গসংগঠন, সরকার ও প্রশাসনের অভ্যন্তরে মানবিক মূল্যবোধ ও সহনশীল-সংস্কৃতির বীজ উপ্ত করতে হবে। বিশেষ করে সরকার ও সরকারি দলকে এ কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। অন্যথায় জাতি এক ভয়াবহ দুর্যোগের মুখোমুখি হবে। কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল আদর্শহীন যুব ও ছাত্রসংগঠনের হাতে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ জিম্মি থাকতে পারে না।
    বিবৃতিদাতারা বলেন, আমরা দ্রুত এই সংকট থেকে জাতি ও দেশকে রক্ষা করতে সরকারের আশু পদক্ষেপ প্রত্যাশা করি। একই সঙ্গে জনগণকে সচেতন ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাই।
    বিবৃতিদাতারা হলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, সৈয়দ হাসান ইমাম, হাসান আজিজুল হক, অনুপম সেন, সরোয়ার আলী, রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজুমদার, মামুনুর রশীদ, মফিদুল হক ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ।
    ফাহাদ হত্যাকাণ্ড মানবিক মূল্যবোধে কষাঘাত: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের নৃশংস হত্যাকাণ্ড মানুষের মানবিকতা এবং মানবিক মূল্যবোধকে কষাঘাত করেছে।
    গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) দেশের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়, সেই ছাত্ররা যখন তাদেরই কোনো সহপাঠীকে অমানবিকভাবে পিটিয়ে হত্যা করতে পারে, তাহলে বুঝতে হবে, সমাজে কতটা অবক্ষয় নেমে এসেছে এবং মানবিক মূল্যবোধের কতখানি পতন ঘটেছে।
    তিনি বলেন, আমি এই হত্যাকা-ের তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। জাপা নেতা বলেন, যারা এই হত্যাকা- ঘটিয়েছে তারা যেন কোনোভাবেই রক্ষা না পায়, সেদিকে সব পক্ষের নজর রাখতে হবে। আশা করি, এ ব্যাপারে সরকারের কঠোর মনোভাবের বাস্তবায়ন ঘটবে। এই হত্যাকা-ের প্রতিবাদে ছাত্ররা যে দাবি পেশ করেছে, তা বিবেচনার জন্য আমি বুয়েট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
    কালো পতাকা মিছিল নিয়ে বুয়েটে ভিপি নূর: আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার দাবিতে কালো পতাকা মিছিল নিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নূর। তিনি বুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
    দুপুর দেড়টার দিকে কালো পতাকা মিছিল নিয়ে বুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যোগ দেন ভিপি নুরুল হক নূর। এরপর তিনি বুয়েটে আন্দোলনরতদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন।
    ভিপি নুর বলেন, আবরার ফাহাদ প্রথম নয়। ২০০২ সালে বুয়েটে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হয়েছে, ঢাকা মেডিকেলে রাজীবকে হত্যা করা হয়েছে। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দখলদারিত্ব চলছে। তারা জোর করে শিক্ষার্থীদের মিটিং মিছিলে নিয়ে যাচ্ছে, তাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এখন সময় এসেছে ছাত্রসমাজের ঐক্যবদ্ধ থাকার। আমরা অনুভূতির জায়গা থেকে আপনাদের এখানে এসেছি মিছিল নিয়ে। আপনাদের যে দলবাজ প্রশাসন রয়েছে তারা একটি সন্তানের মৃত্যুর পরেও ঘটনাস্থলে আসতে পারে না। এর জবাবদিহি আপনারা নিশ্চিত করবেন। আমার আহ্বান থাকবে, আপনাদের দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আপনারা যেন এই আন্দোলন বন্ধ না করেন।
    এর আগে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক সমাবেশে বক্তৃতা করেন ভিপি নুর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ওই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন।
    সেখানে বক্তৃতায় ভিপি নুর বলেন, দেশবিরোধী সব চুক্তি বাতিল করতে হবে। যে চুক্তির বিরোধীতা করে আবরার খুন হয়েছেন সেটি দেশবাসী মেনে নেবে না। পাশাপাশি আবরার হত্যার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।
    ঢাবিতে ছাত্রদলের মৌন মিছিল: বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
    গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে মিছিলটি বের করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পদক ইকবাল হোসেন শ্যামল। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে টিএসসি এসে তাদের মিছিল শেষ করে।
    ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বলেন, সরকার ভারতের সঙ্গে যেসব চুক্তি করেছে তা দেশের স্বার্থবিরোধী। সেগুলোই আবরার ফেসবুকে লিখেছিল। আমরা সেসব দাবি বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি। ফাহাদের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- নিশ্চিত করার দাবিও জানান তিনি। ক্যাম্পাস পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ কোথাও অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নেই। ডাকসু নির্বাচন হলেও ক্যাম্পাসে কার্যকরী সহাবস্থান নিশ্চিত করতে পারেনি প্রশাসন। আমরা ভয়ভীতিহীন ক্যাম্পাস চাই। এদিকে ফাহাদ হত্যার ঘটনায় বুয়েটে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের আল্টিমেটামসহ নতুন করে ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেছেন আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
    ছাত্রলীগ ঘাতক তৈরির মেশিন: ছাত্রলীগ ঘাতক তৈরির মেশিন হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফা। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ক্যাফেটেরিয়ার সামনে ‘ভারতের সঙ্গে করা অসম চুক্তি বাতিল ও আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার’ দাবিতে সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।
    গোলাম মোস্তফা বলেন, ফাহাদ হত্যা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের ধারাবাহিক নিপীড়ন-নির্যাতনের ফলে মরদেহের মিছিলে আরেকটি নাম যুক্ত হয়েছে মাত্র। আওয়ামী লীগের মদদে ছাত্রলীগ ঘাতক তৈরির মেশিন হয়ে গিয়েছে। ফাহাদ হত্যায় জড়িতরা খুনি হিসেবে বুয়েটে ভর্তি হয়নি, সংগঠনটির সাংগঠনিক ক্ষমতাচর্চার সংস্কৃতিই তাদের হত্যাকারী বানিয়েছে। এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।
    ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন বলেন, বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি হবে ভারসাম্যপূর্ণ, সমান সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদার ভিত্তিতে। কিন্তু দিল্লি সফরে যেসব চুক্তি ও সিদ্ধান্ত হয়েছে সেগুলোর কোনোটাই আদতে বাংলাদেশের স্বার্থ-মর্যাদা রক্ষা করেনি। এই সফরের মাধ্যমে নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। সুতরাং, ছাত্রসমাজ ও দেশপ্রেমিক জনসাধারণকেই জাতীয় স্বার্থবিরোধী সব তৎপরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
    সমাবেশে সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাদিক রেজা, দফতর সম্পাদক এম এইচ রিয়াদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবু রায়হান খান উপস্থিত ছিলেন। কার্যক্রম সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক সৈকত আরিফ।
    লজ্জা প্রকাশ করে আবরার হত্যার দ্রুত বিচার চাইলো ছাত্রলীগ: বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবি করেছে ছাত্রলীগ। একইসঙ্গে এই ঘটনার সঙ্গে বুয়েট ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততার ঘটনায় কেন্দ্রীয় সংগঠনের পক্ষ থেকে লজ্জা প্রকাশ করা হয়েছে।
    গতকাল দুপুরে ‘আবরার হত্যার দ্রুত বিচারের’ দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে ছাত্রলীগ তাদের এই অবস্থান জানায়। ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, আমরা আবরার হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার দাবি করছি। আপনারা দেখেছেন, শুরু থেকেই আমরা অপরাধীদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছি। কারণ আমরা বলেছি কোনও অপরাধীর স্থান বাংলাদেশ ছাত্রলীগে হবে না। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা ১১ জনকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছি। আপনারা জানেন, কোনও ঘটনার জন্য এই প্রথম এতো দ্রুত অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি এবং সাংগঠনিকভাব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এই হত্যাকা-ের জন্য আমরা লজ্জা প্রকাশ করছি।
    সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় সাংবাদিক সম্মেলনে আবরার হত্যাকা-ের পর তাদের নেয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন। ছাত্রলীগ এ ধরনের সহিংসতাকে জায়গা দেবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঘটনার পরপরই বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের ১১ জনকে বহিষ্কার করি। দ্রুততম সময়ে হত্যাকা-ে জড়িত এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৩ জনকে গ্রেফতার করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই। পলাতকদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতারের আহ্বান জানাই। একইসঙ্গে এজাহারের বাইরে হত্যাকা-ে জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসারও আহ্বান জানাই। এক্ষেত্রে ছাত্রলীগ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
    জয় বলেন, সাংগঠনিকভাবে ছাত্রলীগ কখনোই কোনও প্রকার সন্ত্রাসী কর্মকা-কে প্রশ্রয় কিংবা উৎসাহ প্রদান করে না। সংগঠনের পরিচয় ব্যবহার করে অতি উৎসাহী কোনও কর্মকা-কে ছাত্রলীগ অতীতের মতো ভবিষ্যতেও প্রশ্রয় দেবে না। সম্প্রতি আবরার হত্যাকা-ের ছাত্রলীগের পদক্ষেপে আবারও তা প্রমাণ পেয়েছে।
    তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা নজিরবিহীন। ছাত্রলীগের সব নেতাকর্মীর প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন, কারও কর্মকা-ে উন্নয়নের ধারা যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমার চোখে সব অপরাধী সমান, আবরার হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত কেউ ছাড় পাবে না।
    আবরার হত্যার প্রতিবাদ মিছিলে ছাত্রলীগের হামলা: বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিলে হামলা করেছে ছাত্রলীগ।
    গতকাল সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় ছাত্রদলের সহসভাপতি মিজানুর রহমান নাহিদ এবং যুগ্ম-সম্পাদক মিজানুর রহমান শরীফ গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় জবি ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদক আলী হাওলাদার ও ছাত্রদল কর্মী জাহিদকে আটক করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
    প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, ছাত্রদল সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঁঠালতলায় সমবেত হয় এবং সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে থেকে আবরার হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মিছিল বের করে। মিছিলটি অবকাশ ভবনের সামনে আসলে পেছন থেকে ছাত্রলীগের কর্মীরা অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় জবি ছাত্রদলের সহসভাপতি মিজানুর রহমান নাহিদ ও যুগ্ম-সম্পাদক মিজানুর রহমান শরীফকে মারধর করা হয়।
    এ দিকে ছাত্রদলের মিছিলে হামলার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, জবিতে আজকেও আবরার হত্যার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারতো। ছাত্রদের ওপর ছাত্রদের হামলা কোন মানবিক কাজ হতে পারে না। আজকের ঘটনাটির সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িতদের কঠিন শাস্তির আওতায় আনা হবে।
    জবি ছাত্রদলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, আবরার হত্যার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠুভাবে বিক্ষোভ মিছিল করছিলাম। হঠাৎ ছাত্রলীগ বিক্ষোভ মিছিলে হামলা করে। ছাত্রলীগকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ক্যাম্পাসে যাবো। এরপরে ছাত্রদলের ওপর হামলা হলে উচিত জবাব দেব। এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) মওদুদ হাওলাদার বলেন, দুজন ছাত্রদল কর্মীকে আটক করে আমাদের হেফাজতে রেখেছি। পরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
    জবি প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, আমরা নিজেরাই নিজেদের শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর রাখব। অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর রাখবেন। যদি তারা কোন খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে বুঝিয়ে তাদের ফেরাতে হবে।
    উল্লেখ্য, গত রোববার রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বুয়েটের ১৭তম ব্যাচের ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বীকে। রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের দ্বিতীয় তলা থেকে আবরারের মরদেহ উদ্ধার করে কর্তৃপক্ষ। পুলিশ জানিয়েছে, তাকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় বুয়েট ছাত্রলীগের ১৩ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। আবরার ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা গ্রামে। তার বাবা বরকত উল্লাহ একজন এনজিওকর্মী, মা রোকেয়া বেগম কিন্ডার গার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে আবরার বড়। তার ছোট ভাই ঢাকা কলেজের ছাত্র।
    আবরার হত্যার প্রতিবাদ
    রাজশাহীতে ছাত্রদলের
    বিক্ষোভে পুলিশী বাধা
    বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে গতকাল বুধবার সকালে রাজশাহীতে ছাত্রদল বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। পরে রাজশাহী মহানগরীর ভুবনমোহন পার্ক সড়কে সমাবেশ করে ছাত্রদল।
    ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা জানান, বুয়েট আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে রাজশাহী ছাত্রদল মালোপাড়া এলাকা থেকে মিছিল শুরুর পরই পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পরে সেখানেই তারা অবস্থান নেয় এবং সমাবেশ করে। এতে বক্তব্য দেন রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রবি। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, মহানগর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মাসুদুল হক মৃধা মোমিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ হোসেন, জেলা ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ খুরশেদ রিজভী, সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লিমন, যুগ্ম সম্পাদক রায়হান ইসলাম রুদ্র, মতিহার থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পিয়ারুল ইসলাম পিয়াল প্রমুখ।
    শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন
    জয়পুরহাট সংবাদদাতা: বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের দ্রুত বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে জয়পুরহাটের প্রগতিশীল ছাত্র সমাজ। বুধবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিলটি চিনিকল সড়ক থেকে বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন শেষে পাচুরমোড় জিরো পয়েন্টে মানব বন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এ সময় বক্তব্য রাখেন অধ্যক্ষ ওয়াজেদ পারভেজ, জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারন সম্পাদক এম এ রশিদ, জেলা প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমন্বয়ক রিফাত আমিন রিয়ন, সদস্য রাশেদুজ্জামান রাশেদ প্রমূখ। বক্তারা অবিলম্বে দোষীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন এবং এ ঘটনায় কোন রকম তালবাহানা না করার আহবান করেন। বিক্ষোভ মিছিল ও মানব বন্ধনে ওই ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারন শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা অংশ গ্রহণ করে।
    রংপুরের সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাজপথে
    রংপুর অফিস : বুয়েেেটর মেধাবী শির্ক্ষাথী আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগের নামধারী দুর্বৃত্তদের হাতে নির্মম হত্যার অব্যাহত প্রতিবাদে রংপুরের সাধারন শির্ক্ষাথীরা গতকালও দ্বিতীয় দিনের মত রাজপথে বিক্ষোভ এবং সমাবেশ করেছে।
    তাদের ফেষ্টুন আর ব্যানারে প্রতিবাদী শ্লোগান ছিল ” আবরার মরেনি, মরেছে বাক স্বাধীনতা”। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী শির্ক্ষাথী আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডে জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে গতকাল বুধবারও দ্বিতীয় দিনের মত রংপুরের সাধারণ ছাত্র সমাজ রংপুরের রাজপথ প্রকম্পিত করে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে। এই অভিন্ন দাবিতে সকাল সাড়ে ১১ টা নাগাদ রংপুর মহানগরীর জিলা স্কুল মোড়ে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল চত্বরে সাধারন শির্ক্ষাথীরা অবস্থান নেয়। এখানে প্রতিবাদ সমাবেশের এক পর্যায়ে তারা আবরার হত্যার প্রতিবাদে প্রতীকি পথ নাটকেরও আয়োজন করে। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, শিক্ষাঙ্গনগুলোতে বার বার মত প্রকাশের স্বাধীনতা আগাত প্রাপ্ত হচ্ছে। তারা বলেন, আবরার ফাহাদকে হত্যা করা হয়নি। ” আবরার মরেনি, মরেছে বাক স্বাধীনতা”। এই বাক স্বাধীনতাকে মুক্ত করতে হবে। শেষে প্রতিবাদী সাধারণ শির্ক্ষাথীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদী শ্লোগান সম্বরিত প্লার্কাড, ব্যানার, ফেষ্টুন নিয়ে একটি মৌন মিছিল নগরীর প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে। এসম তারা অবরার হত্যায় জড়িত ইন্ধনদাতা এবং সকল খুনীদের ফাঁসীর দাবী জানায়। এছাড়া একই দাবীতে দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে রংপুরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ” আমরাই পাশে ” এক মানববন্ধন এবং সমাবেশের আয়োজন করে। এতে সাধারন শিক্ষার্থী সহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিগন অংশ নেয়। এদিকে বুয়েটের মেধাবী শির্ক্ষাথী আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল রংপুর জেলা ও মহানগর শাখার উদ্যোগে গতকাল দুপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ পুলিশী বাধার মুখে পন্ড হয়ে যায়। নগরীর গ্রান্ডহোটেল মোড়স্থ কার্যালয় থেকে মিছিলটি বের হলে প্রধান সড়কের মুখেই পুলিশ সেখানে তাদের বাধা দেয়। এসময় ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের সাথে পুলিশের বাক-বিতন্ডা হয়। পরে সেখানেই তারা সমাবেশ করে। এসময় বক্তব্য রাখেন, ছাত্রদল রংপুর জেলা শাখার সভাপতি মনিরুজ্জামান হিজবুল, সাধারণ সম্পাদক শরীফ নেওয়াজ জোহা, মহানগর ছাত্রদলের সাধারন সম্পাদক জাকারিয়া ইসলাম জিম প্রমুখ।
    অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল জাবিতে
    সাভার সংবাদদাতা: বুয়েটের শিক্ষার্থী আরবারের হত্যা কান্ডের প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মত ঢাকা আরিচা মহাসড়কের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি গেট অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। এসময় ঢাকা আরিচা মহাসড়কে প্রায় আধাঘন্টা বন্ধ থাকে। মহাসড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।
    গতাকাল বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা আরিচা মহাসড়কে অবরোধ করে রাখেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ শিক্ষকরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক থেকে সড়িয়ে দেন। এদিকে একই দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
    বগুড়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
    বগুড়া অফিসঃ ছাত্রলীগের নেতাকর্মিদের নির্মম আঘাতে নিহত বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের খুনীদের বিচারের দাবীতে সারাদেশের ন্যায় বগুড়াতেও বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে বুধবার দুপুরে শহরের জিরো পয়েণ্ট সাতমাথায় মানববন্ধ ও বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা অবিলম্বে আবরার হত্যায় জড়িত ছাত্রলীগের নেতাকর্মিদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার দাবী জানান। মানববন্ধনে আব্দুল আজিজ, সোহানুর রহমান, রাকিবুল ইসলাম, রাফিউল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল মামুন, হাসিবুল ইসলাম, তানজিব আলম, সিয়াম প্রমূখ। বক্তব্য রাখেন। মানববন্ধন চলাকালে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাইমুর রাজ্জাক তিতাস সেখানে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন। এসময় তিনি বলেন, সারাদেশের সকল শিক্ষার্থীর মত ছাত্রলীগও আবরার খুনের প্রতিবাদ জানাচ্ছে, আমরাও এই হত্যার বিচার চাই।
    এদিকে, আবরার খুনের প্রতিবাদে জাতীয় ছাত্রফ্রন্ট, জাসদ ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
    দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
    ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা : বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যার প্রতিবাদে ও হত্যাকারীদের ফাঁসি এবং ভারতের সাথে সম্পাদিত অসম সকল চুক্তি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ঠাকুরগাঁওয়ের প্রগতিশীল ছাত্রজোটের শিক্ষার্থীসহ সাধারন মানুষ। বুধবার দুপুর ১২ টায় শহরের চৌরাস্তায় প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ব্যনারে এ বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচী পালন করা হয়।
    এ সময় বক্তব্য রাখেন, ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি ও প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক আবু বক্কর সিদ্দীক, সহ সভাপতি আবু বক্কর, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের জেলা সংগঠক জাকির হোসেন, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক নেতা রেজওয়ানুল হক রিজু, ছাত্র ফ্রন্টের সাবেক নেতা মাহাবুব আলম রুবেল প্রমুখ।
    বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যা করে হত্যাকারীরা দেশের মানচিত্রের একটি অংশকে সাদা কাফনে মুুড়িয়ে দিয়েছে। শুধু মাত্র নিজ দেশের স্বার্থ রক্ষার কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখে প্রকাশ করার কারণে তাকে শিবির সন্দেহে পৈশাচিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় বক্তারা এ হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করেন। সেই সাথে অনিক, তানিন রবিন, রাসেলসহ আবরার হত্যার সাথে যারা জড়িত তাদের সকলের ফাঁসির দাবি করেন। বক্তারা অবিলম্বে ভারতের সাথে সম্পাদিত অসম সকল চুক্তি বাতিলের দাবিও জানান।
    নীলফামারীতে ছাত্রদলের বিক্ষোভ
    নীলফামারী সংবাদদাতা : বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে নীলফামারীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জেলা ছাত্রদল। বুধবার সকালে জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ শেষে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশ অনুষ্টিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মারুফ পারভেজ প্রিন্স, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আযম, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য আব্দুস সালাম বাবলা প্রমূখ।
    দিনাজপুরে ছাত্রদলের বিক্ষোভ
    দিনাজপুর অফিস : ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ক্যাডার কর্তৃক বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে দেশব্যাপী কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে দিনাজপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জেলা ছাত্রদল। দেশব্যাপী সকল জেলা, মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে এ কর্মসূচী পালন করা হয়। আজ ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী সকল থানা, পৌর ও কলেজ সমূহে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
    দিনাজপুরের বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেন দিনাজপুর জেলা ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ। শহরের স্টেশন রোড থেকে মিছিলটি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
    চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ঘোষিত বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহসীন এর নেতৃত্বে বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিন করে নিউ মার্কেটস্থ দোস্ত বিল্ডিং দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক বিক্ষোভ মিছিলে অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহসীন বলেন, বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যকান্ডের ঘটনায় আরেকবার প্রমানিত হল ছাত্রলীগ একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। অনতিবিলম্বে আবরার ফাহাদের হত্যাকারী ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান। এসময় বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন ওবায়দুল হক রিকু, ওহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলমগীর, সাঈদ মানিক, রমজান আলী পিংকু, হাবিবুর রহমান রিপন, নাঈমুল আলম খোকন, মো: সেলিম প্রমুখ।
    চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল: ছাত্রলীগের বর্বরোচিত নির্যাতনে নিহত বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যাকারীদের শাস্তির দাবীতে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্টিত হয়েছে। ৯ অক্টোবর বুধবার বিকালে নগরীর কাজীর দেউরী মোড় থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে ওয়াসা মোড়ে এসে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্টিত হয়। নগর ছাত্রদল নেতা মহসিন কবির আপেল এর সভাপতিত্বে ও আরিফুর রহমান মিটুর পরিচালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নগর ছাত্রদল নেতা রাসেদুল ইসলাম,ইফাদ আহমের রাসেল,মোঃ আরিফ, শাহজী চিশতি, রাসেল সরকার,মোঃ জাবেদ সাফায়েত, আলি আকবর, সাহাদাত হোসেন সাজ্জাদ,মোঃ শরীফ, সাইদুল ইসলাম তৈয়ব, মোঃ করীম, আবদুল্লাহ আল মুনির রাফি নেতৃবৃন্দ।
    জাতীয় ছাত্র সমাজ চট্টগ্রাম উত্তর জেলার নেতৃবৃন্দ : জাতীয় ছাত্র সমাজ চট্টগ্রাম উত্তর জেলার আহ্বায়ক মোঃ মাসুদ-অর-রশিদ ও সদস্য সচিব আলাউদ্দীন সোহেলের এক যৌথ বিবৃতিতে জানান যে, বাংলাদেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে। নেতৃবৃন্দ পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
    বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা নিমর্মভাবে রাতের অন্ধকারে অত্যাচার করে হত্যার প্রতিবাদ ও বিচার দাবীতে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের পক্ষ হতে নগর ছাত্রদল নেতা জাফরুল ইসলাম রানার সভাপতিত্বে এবং আলিফ উদ্দিন রুবেলের সঞ্চালনায় এক বিক্ষোভ মিছিল চটেশ্বরী রোড হতে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রবর্তক মোড়ে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।তার আগে কাজীর দেউডী মোড়ে মিছিল পূর্ব জমায়েতে অর্তকিত হামলা চালায় সরকারের পেটুয়া পুলিশ বাহিনী এবং মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়, এতে কয়েকজন ছাত্রদল নেতা আহত হয় এবং একজন গ্রেফতার হয়।
    বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যার প্রতিবাদে ৯ অক্টোবর বুধবার বিকালে চান্দগাঁও ছাত্রদলের উদ্যোগে নগরীর চান্দগাঁও বাস টার্মিনাল স্বাধীনতা কমপ্লেক্সের সামনে এক বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নগর ছাত্রদল নেতা শহীদুজ্জামান, ৫ নং মোহরা ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. মনসুর, পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রশিদ, ছাত্রনেতা শহীদুল ইসলাম ছোটন, আনিসুর রহমান ইমন, বশিরুল্লাহ, হান্নান রহিম, আবদুর কাদের প্রমুখ।

https://www.dailysangram.com/post/392402