৭ মার্চ ২০১৭, মঙ্গলবার, ৫:১৫

সেই নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি আর নয়

এম. কে. দোলন বিশ্বাস :

তিন বছর আগে গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি রোববার ‘বিতর্কিত’ এক নির্বাচন সারা বিশ্বের চোখ ফিরিয়েছিল বাংলাদেশের দিকে। ওই নির্বাচনকে ঘিরে সারা দেশে সংঘটিত হয় নজিরবিহীন সহিংসতা। নির্বাচন বাতিলের দাবিতে নির্বাচনের আগের দিনই জেলায় জেলায় ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ হয়। নির্বাচনের দিন সকাল থেকেই দেশজুড়ে শুরু হয় সহিংসতা। নির্বাচন ঠেকাতে হরতালসহ নানাবিধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল আগেই।

ওই কর্মসূচি আর ভোট ঠেকানোর আন্দোলনে ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতার বেসারতিতে ভোটের দিন ও আগের দুই দিনে অন্তত ২৫ জন মারা যান। হামলায় মারা যান নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত এক কর্মকর্তাও। ভোটের আগের দিন রাতেই ৪৩ জেলার দু’শতাধিক ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ঠাকুরগাঁওয়ে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার জোবায়দুল হককে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া মৌলভীবাজার, যশোরের মনিরামপুরে আরও দুই সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারকে কুপিয়ে আহত করা হয়। তাছাড়া কয়েকটি কেন্দ্র থেকে হাতবোমা উদ্ধার করে পুলিশ। অব্যাহত অগ্নিসংযোগ ও বিস্ফোরণের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায়। রংপুরের পীরগাছা ও লালমনিরহাটে দুই প্রিজাইডিং অফিসার ও চট্টগ্রাম, যশোরসহ বিভিন্ন জেলায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন।

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও লক্ষ্মীপুরে দুটি করে এবং দিনাজপুর ও নীলফামারীতে একটি করে কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ১৫৪টি আসনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগ, ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক দলের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এটিও ছিল বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা। ভোটের দিন সকাল থেকেই শুরু হয় সহিংসতা।

১৪৬টি আসনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রগুলো সকাল থেকেই ছিল ফাঁকা। কয়েকটি আসনের ৪১টি কেন্দ্রে কোনো ভোটই পড়েনি সারা দিনেও। ওই দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলি এবং ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে একজন আনসার সদস্য, একজন আওয়ামী লীগ কর্মী ও একজন পথচারী ছিলেন। বাকিরা বিএনপি ও জামায়াত কর্মী। সংঘাত ও সহিংসতার কারণে ওই পাতানো নির্বাচনেও সারা দেশে পাঁচ শতাধিক ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। এর মধ্যে রংপুরে ৮৪, গাইবান্ধায় ১২৯, নীলফামারীতে ৯টি, দিনাজপুরে ৪৫ এবং বগুড়ায় প্রায় ১০০টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। এদিকে ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রগুলো ভোটারশূন্য থাকলেও নির্বাচন কমিশনের ভোটের ফলাফলে গড়ে ৪০ ভাগ ভোট পড়ে বলে দেখানো হয়।

আর আসনভিত্তিক ফল ঘোষণা হলেও নির্বাচন কমিশন ভোটের হার ঘোষণা করে কয়েক দিন পর। এদিকে নির্বাচনের দিন সন্ধ্যায় নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলনে প্রহসনের নির্বাচন বাতিল ও সারা দেশের ১৮ দলের নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে অবরোধের পাশাপাশি টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ঘোষণা দেন বিএনপি নেতা ড. ওসমান ফারুক। এছাড়া একতরফা ওই নির্বাচন দেশবাসী ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে মন্তব্য করে অবিলম্বে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে একতরফা ওই নির্বাচনে ৪-৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে দাবি করেন সাবেক ওই শিক্ষামন্ত্রী। নির্বাচনের পরদিন ৬ই জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় স্বদলীয় কার্যালয়ে অবরুদ্ধ বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত আলবার্ট কোনৎসে। এরপর রাত ৮টায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ব্যুরো চীফ ও পলিটিক্যাল এডিটর অ্যালেন বেরি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর আগে বিকালে ‘এ’ লেভেল পরীক্ষা চলাকালে হরতাল-অবরোধ বন্ধ রাখতে অনুরোধ জানিয়ে স্মারকলিপি দিতে খালেদা জিয়ার বাসভবনে গিয়েছিলেন পাঁচ শিক্ষার্থীর অভিভাবক।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৩ সালের ২৫শে নবেম্বর একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক সহিংসতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয় ১৮২ জন। আহত হন পাঁচ সহস্রাধিক মানুষ। ওদিকে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ এক বিবৃতিতে জানায়, ২৫শে নবেম্বর থেকে ৩রা জানুয়ারি পর্যন্ত সহিংসতায় ১৪৯ জন নিহত এবং ৪৮৮৬ জন আহত হন। এসময় ৫৯ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের শিকার হন বলেও তথ্য প্রকাশ হয়। (তথ্য সূত্র : মানবজমিন- ০৪.০১.২০১৫)

২০১৪ সালে বছরজুড়েই দেশ-বিদেশে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে ছিল ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যে নির্বাচনকে একতরফা বলছেন অনেকেই। নানা মহলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এখনো এটি এক প্রশ্নই রয়ে গেছে অনেকের কাছে। নির্বাচনে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াত অংশগ্রহণ না করলেও তাদের অনুপস্থিতিতে জ্বালাও-পোড়াও-ভাঙচুর-অবরোধের মধ্য দিয়েই সম্পন্ন হয় ওই নির্বাচন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তথাকতিথ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে; ফাঁকা মাঠে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হন ১৫৩ সাংসদ।

নির্বাচন নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ হতাশা ব্যক্ত করে। নিরাশ হয় কমনওয়েলথ। তবে একমাত্র ভারত মন্তব্য করে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় ওই নির্বাচন আবশ্যক ছিল। নির্বাচনের পর দিন ৬ জানুয়ারি এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র মন্তব্য করে নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেনি।

২০১৩ সালের ২৫ নবেম্বর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল ঘোষণার পর ভোটের আগের দিন পর্যন্ত ৪১ দিনে সারা দেশে সহিংসতায় ১২৩ জনের প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া ভোটের দিন সারা দেশে ১৯ জন নিহত হন। এর মধ্যে ১৫ জনই প্রাণ হারান পুলিশের গুলিতে। আহত হয় সহস্রাধিক। নিহতের অধিকাংশই ছিলেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী। ভোটের দিন একসঙ্গে এত মানুষের প্রাণহানি বিরল ঘটনা বলে গণমাধ্যমের খবরে উল্লেখ করা হয়।

তফসিল ঘোষণার পর ক্ষমতাসীন দলের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করে তা প্রতিহতের ডাক দেয় বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। ‘একতরফা’ নির্বাচনের প্রতিবাদে ২০১৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ২৯ ডিসেম্বর ঢাকায় ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ বা ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ নামে এক কর্মসূচির ডাক দেন। কিন্তু ঢাকামুখী ওই অভিযাত্রা ঠেকাতে ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর সরকার-সমর্থিত অঘোষিত অবরোধে সারা দেশের সঙ্গে সড়ক, নৌ ও রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিরোধী দল না থাকায় ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার মতো ৮টি স্থগিত আসন বাদে ২৯২টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৩২টিতে তথাকতিথ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্টতা পায়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে জাতীয় পার্টি ৩৩টি, ওয়ার্কার্স পাটি ৬, জাসদ ৫, জাতীয় পার্টি (জেপি), তরিকত ফেডারেশন ও বিএনএফ একটি করে আসন পায়। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পায় ১৩টি আসন।

বিএনপির ভাষ্য, ওই নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দাবি করেছে, ওই নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। শত প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও জনগণ কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছে। যদিও গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ভোটের দিন বিভিন্ন স্থানে ব্যালট পেপার ছিনতাই, ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের প্রকাশ্যে সিল মারার খবর গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এমনকি প্রিসাইডিং অফিসাররাও এমন কাজ করেছেন। অধিকাংশ কেন্দ্র ভোটারশূন্য থাকায় সকালের দিকে দায়িত্বরত প্রিসাইডিং অফিসারদের ঘুমানোর দৃশ্য দেখা গেলেও দুপুরের পর ব্যালট বাক্স ভরে যাওয়ার মতো অবিশ্বাস্য ঘটনার জন্ম দেয় ৫ জানুয়ারি নির্বাচন। 

ওই নির্বাচনকে কেন্দ্র্র করে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের পড়তে হয় নানাবিধ প্রশ্নের মুখোমুখি। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশ ক’টি প্রভাবশালী দেশ নির্বাচন নিয়ে বাহাস করে। ভোটের দিন কাতারভিত্তিক টিভি চ্যানেল আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তত ১শ কেন্দ্রে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। একই সঙ্গে কয়েকটি কেন্দ্রে যে একজন ভোটারও আসেননি, সেসব দৃশ্যও সম্প্রচার করে। নির্বাচন নিয়ে সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসিসহ প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোয় বারবার বাংলাদেশের নাম উঠে আসে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনুষ্ঠিত আসনগুলোর ভোটের পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়। চূড়ান্ত হিসাবে, সারা দেশের ১৩৯টি আসনে গড়ে ৪০ দশমিক ৫৬ শতাংশ ভোট পড়ে।

এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলে আসছেন, দশম সংসদের এ সরকারকে কেউ স্বীকৃতি দেয়নি। তারা (সরকার) দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে শতকরা ৫ ভাগ মানুষের ভোট পায়নি।

তিনি আরও বলেন, একদলীয় নির্বাচন জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বর্জন করেছেন, ঘৃণাভরে প্রহসনের ভোট প্রত্যাখ্যান করেছেন। নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ১ জানুয়ারি থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে। (তথ্যসূত্র : আমাদের সময়- ২৬.১২.২০১৪)

বলাবহুল্য যে, ২০১৪ সালে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে আয়োজিত জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকার উৎখাতের আন্দোলন ব্যর্থ হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে বৃহৎ দল বিএনপি’র শক্তি ক্ষয় হয়, দুর্বল হয়ে পড়ে। নাজেহাল হয় অন্যতম শরীক দল জামায়াতে ইসলামী।

রাজপথের আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে অভাবনীয় এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় বিএনপি। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, পরস্পরের ব্যাপারে অবিশ্বাস, হামলা-মামলায় তৃণমূলে ভয়ভীতি সব মিলিয়ে প্রচণ্ড প্রতিকূলতার মুখে দাঁড়িয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয় তারা। এমন প্রেক্ষাপটে আজ ৫ জানুয়ারি।

২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্তিতে প্রতিবাদ সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ায় দেশজুড়ে টানা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল। ওই আন্দোলনে ব্যাপক সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনার মামলায় বিপুলসংখ্যক দলীয় নেতাকর্মী গ্রেফতার হন। গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান অনেকে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম। প্রথম বারের মতো দলীয় প্রতীকে পৌরসভা নির্বাচনের মাধ্যমে দলের বিপর্যস্ত পরিস্থিতি কাটিয়ে পুনঃরায় ঘুরে দাঁড়াতে সুযোগ খোঁজ ছিল বিএনপি। দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে স্বদলীয় তৃণমূলের কাছে ‘ভুল’ শোধরাতে পৌর নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল দলটি এমনটি আমাদের ধারণা। কারণ বিএনপি দেশ ও বিশ্ববাসীকে দেখাতে চেয়েছে যে, মহাজোট সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আদৌ সম্ভব হয় কি-না। তাছাড়া এ নির্বাচনে ‘হারলেও লাভ, জিতলেও লাভবান’ এমন চিন্তা-ফিকির থেকেই দলটির হাইকমান্ড হতে নেতাকর্মীরা ভোট গ্রহণ থেকে শুরু করে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত সক্রীয় ছিল।

২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের দু’বছর পূর্তিতে প্রতিবাদ সমাবেশেরও সরকার অনুমতি দেয়নি বিএনপি জোটকে। তৃতীয় বছর পূর্তিতে প্রতিবাদ সমাবেশেরও অনুমতি দেয়নি সরকার।

সাম্প্রতিক রাজনীতি ও দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণে বলা যায়, বর্তমান বাস্তবতায় সরকারের ‘শক্ত মুঠো শিথিলের সম্ভাবনা ক্ষীণ’। তবে আমরা জগতমালিক হক্কের হাকিম আল্লাহতালায়ার নিকট বিচার প্রার্থী নয়, তবে আশাবাদী, হয়তো দ্রুতই দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকট উত্তোরণ ঘটাবেন তিনি। নিষ্পেষিত মজলুম জনতার আশা অব্যশই পূরণ হবে ইনশাল্লাহ্।

[লেখক : দৈনিক সংবাদের সাবেক সহ-সম্পাদক] 

http://www.dailysangram.com/post/274612