৫ মার্চ ২০১৭, রবিবার, ১:২৩

এবার লোহাগড়ায় স্কুলভবনে রডের বদলে বাঁশ

উপজেলার নোয়াগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণকাজে রডের বদলে বাঁশ ব্যবহারের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে জেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি স্কুলভবনের ঢালাই ও প্লাস্টার খসে বাঁশের অংশবিশেষ বের হলে বিষয়টি সবার নজরে আসে। বাঁশের পাশাপাশি স্কুলভবনের ছাদসহ বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। এছাড়া ভবনের মেঝে ডেবে গেছে। আতঙ্ক আর ঝুঁকি নিয়ে ওই ভবনেই চলছে প্রায় দুই শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থীর পাঠদান। এ নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে অভিভাবকসহ এলাকাবাসীর মধ্যে। যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে ভবনটি।

সরজমিনে দেখা গেছে, নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের ২৯নং নোয়াগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনে ফাটল ও বাঁশ বের হয়ে যাওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীরা ভয়ে আসতে চাচ্ছে না স্কুলে। বিষয়টি তদন্ত করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, ঠিকাদার, প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট কাজের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন অভিভাবক, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ সচেতন মহল। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দ্রুত তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট কাজের সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না করা হলে উপজেলা শিক্ষা অফিস ঘেরাওসহ কঠিন কর্মসূচি দেয়া হবে বলে জানান তারা। স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯০৬ সালে। ২০০৩ সালে বিদ্যালয়ের পুনর্নির্মাণ করা হয়। ‘ছাপা ও নাজির’ নামের দুই ব্যক্তি ঠিকাদার ছিলেন বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়। ভবন নির্মাণের সময় রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করেছে তারা।

এছাড়াও বিদ্যালয়ের পুরনো ভবনটি ভাঙার পর সেটির ইট, রড বা টিন সব কিছুই টেণ্ডার ছাড়াই বিক্রি করা হয়। যার কোনো সঠিক হিসাব আজও পাওয়া যায়নি বলে জানান এলাকাবাসী। অন্যদিকে, ভবন নির্মাণের ফাইল বা প্রকৌশলী কে ছিলেন সে বিষয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।

বিদ্যালয়ের এই বেহাল দশা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক কাজী রবিউল ইসলাম মানবজমিনকে জানান, বিদ্যালয়ের ভবনটির ছাদে ফাটল, মেঝে ডেবে যাওয়া ও ভবনের পিলারসহ কয়েক স্থানে বাঁশ বের হওয়ার ঘটনাটি সত্য। তবে এটা ভয়ের কিছু নেই। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ফাটলের স্থানগুলো সংস্কার করে ক্লাস পরিচালনা করা হচ্ছে। বেশ আগে থেকেই ছাদ দিয়ে পানি পড়তো, সেটিও সংস্কার করা হয়েছে। ভবনের এ অবস্থার কথা উপজেলা শিক্ষা অফিসসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয় কিনা সে বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, বিষয়টি ততটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়নি তাই জানাইনি। সারা দেশে সরকারি ভবন তৈরিসহ বিভিন্ন ধরনের নির্মাণকাজে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের ঘটনা একের পর এক ফাঁস হতে থাকায় পূর্তকাজের মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ভবন ও স্থাপনাগুলোর স্থায়িত্ব নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার এই বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করে আবারো আলোচনায় উঠে এসেছে। বিদ্যালয় ভবনটি নির্মাণকালে বিষয়টি গোপন থাকলেও কয়েক বছর যেতে না যেতেই খোসে পড়ছে বিদ্যালয় ভবনের প্লাস্টার, ঢালাই। আর বেরিয়ে আসছে রডের পরিবর্তে ব্যবহৃত বাঁশ আর বাঁশের ফালি।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=56067