৮ মে ২০১৯, বুধবার, ১২:৫৩

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যৌন হয়রানি বিষয়ক কমিটি, নানা প্রশ্ন

যৌন হয়রানি প্রতিরোধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এপ্রিলের শেষের দিকে মন্ত্রণালয়ের গবেষণা অনুবিভাগের জারি করা এক আদেশে কমিটিটি গঠন করা হয়। আদেশে বলা হয়, ১৫ ব্যাচের কর্মকর্তা মিজ নওরীন আহসানের নেতৃত্বাধীন ওই কমিটি ‘নারী নিপীড়ন’ এবং ‘যৌন নির্যাতনবিরোধী অভিযোগ’ কমিটি হিসেবে অভিহিত হবে। মন্ত্রণালয় বা মিশনে পোস্টিংয়ে থাকা কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা ওই কমিটিতে যেকোনো ধরনের যৌন হয়রানি প্রতিরোধে বা প্রতিকারে যেকোনো অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন। শুধু তাই নয়, মন্ত্রণালয় বা দূতাবাসের কর্মকর্তা বা কর্মচারী দ্বারা নিগৃহীত যেকোনো নারী এবং বিভিন্ন দেশের কর্মরত বা বসবাসরত যেকোনো বাংলাদেশি নারী ওই কমিটির কাছে অভিযোগ করতে পারবেন। ভুক্তভোগীরা রবি থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টার মধ্যে অফিস আদেশে উল্লিখিত টেলিফোন নম্বর (৮৮-০২৯৫৬৯১৪৯)-এ যোগাযোগ করতে পারেন। একই সঙ্গে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা নির্ধারিত ই-মেইল (ovijog.commiittee@mofa.gov.bd)-এ অভিযোগ দাখিল করা যাবে। গবেষণা অনুবিভাগের মহাপরিচালক নওরীন আহসান স্বাক্ষরিত ওই আদেশে তিনি নিজেকে ‘মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠতম নারী মহাপরিচালক’ দাবি করে কমিটি প্রধান হিসেবে নিজেকে নিয়োগ দিয়েছেন।

দুই সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটির অন্য সদস্য করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (আঞ্চলিক সংস্থাসমূহ) নাহিদা রহমান সুমনাকে।

প্রশ্ন ওঠেছে- পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা মিশনগুলোতে কি যৌন হয়রানির মতো গুরুতর ঘটনা ঘটছে, যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আদেশ জারি করতে হলো? শুধু হেডকোয়ার্টার বা মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী বা তাদের পরিবারই নয়, তাদের অধস্তন বা সংশ্লিষ্ট যেকোনো ভুক্তভোগী দেশি কিংবা বিদেশি ওই কমিটির কাছে অভিযোগ করতে পারবে। প্রশ্ন ওঠেছে এমন ঘোষণাই বা দিতে হলো কেন? কী এমন ঘটছে অধস্তন বা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। বিদেশে থাকা যেকোনো বাংলাদেশি নারীর জন্য ওই কমিটির কাছে অভিযোগ দাখিল করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এটাই বা করতে হলো কেন? বিদেশ থেকে কি যৌন হয়রানির ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিতভাবে আসছে, যা কমিটির আওতায় নিয়ে আসা হলো? প্রশ্ন অনেক।

সাধারণত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক যেকোনো আদেশ প্রশাসন অনুবিভাগ থেকে জারি করা হয়। কিন্তু যৌন হয়রানি প্রতিরোধ সংক্রান্ত জনগুরুত্বপূর্ণ ওই আদেশ জারি হয়েছে গবেষণা অনুবিভাগ থেকে। আদেশ জারিকারক নিজেকে ‘মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ নারী মহাপরিচালক’ দাবি করে নিজেই নিজেকে ‘কমিটি প্রধান’ ঘোষণা করে আদেশটি জারি করতে হলো কেন? জবাব খুঁজতে গেলে প্রশাসন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া বা মন্তব্য করতে রাজি হননি। কমিটি প্রধানকেও পাওয়া যায়নি। তবে কমিটির সদস্য নাহিদা রহমান সুমনা এ নিয়ে কথা বলেছেন। জারি করা আদেশে ‘সেক্স্যুয়াল হেরেজম্যান্ট অ্যাট এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট অ্যান্ড ওয়ার্কপ্লেসেস: ইমপ্লিমেন্টেশন স্ট্যাটাস অব দ্য সুপ্রিম কোর্ট গাইডলাইন’ শীর্ষক আদালতের যে রেফারেন্স রয়েছে সেই প্রসঙ্গ টেনে তিনি মানবজমিনের জিজ্ঞাসার জবাবে বলেন অভিযোগের কোনো প্রশ্ন নয়, বরং আদালতের নির্দেশনার কারণেই এটি জারি করা হয়েছে। তাছাড়া, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১ বাস্তবায়নে জাতীয় পরিকল্পনা-২০১৩তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্তির জন্য গৃহীত উদ্যোগ সমূহের অংশ হিসেবে এমন আদেশ জারি করা জরুরি ছিল।

কমিটির একমাত্র ওই সদস্য বলেন, আদেশ যে কেউ জারি করতে পারেন। প্রশ্ন হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের এতে সায় বা অনুমোদন আছে কি-না? হ্যাঁ, যথাযথভাবে অনুমোদন নিয়েই এটি জারি হয়েছে। কমিটি প্রধান নিজেই নিজের আদেশটি জারি করেছেন, এতেও অন্যায়ের কিছু নেই বলে মনে করেন কমিটির ওই সদস্য। কমিটি গঠনের আগে বা পরে মন্ত্রণালয়ে যৌন হয়রানির কত অভিযোগ জমা পড়েছে? জানতে চাইলে সুমনা বলেন, না, এখন পর্যন্ত একটা অভিযোগও আসেনি। কিন্তু এটা তো সবার জন্য একটা বিস্তৃত জানালা (উইন্ড্রো) খোলা হলো। ভুক্তভোগীরা চাইলে যখন তখন অভিযোগ করতে পারেন।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=171504&cat=2