এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস।
৭ মে ২০১৯, মঙ্গলবার, ১:৫২

ভর্তি নিয়ে সংশয়ে শিক্ষার্থীরা

জিপিএ-৫ পেলেও মিলবে না পছন্দের কলেজ

প্রকাশ হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল। নতুন সংশয় ও অনিশ্চয়তায় পড়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে ভর্তির জন্য চাহিদার চেয়েও প্রায় সাড়ে ১২ লাখ আসন বেশি আছে। এরপরও মানসম্মত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া নিয়ে রয়েছে উৎকণ্ঠা।

এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ফলাফল জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের দুশ্চিন্তাই বেশি। দেশের মানসম্মত প্রায় পৌনে দু’শ কলেজের ৫০ হাজারের মতো আসনের বিপরীতে এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ জন। সেই হিসাবে জিপিএ-৫ পেয়েও প্রায় অর্ধলাখ শিক্ষার্থী প্রথম সারির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাবে না। এদের অধিকাংশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। এ অবস্থায় জেলা ও জেলার বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলোর মানোন্নয়নে গুরুত্ব দিয়েছেন শিক্ষাবিদেরা।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, যারা জিপিএ-৫ পেয়েছে তাদের বেশিরভাগই শহরের। কারণ তাদেরকে কোচিং-প্রাইভেটের মাধ্যমে সেভাবে তৈরি করা হয়েছে। শহরের স্কুলগুলোতে সুযোগ-সুবিধাও বেশি। তাই তারা ভালো ফলাফল করছে। যার বিপরীত চিত্র রয়েছে গ্রামের স্কুলগুলোতে। সেখানে সীমিত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে যে শিক্ষার্থীরা পাস করে আসছে, সেটাই তো অনেক বড় ব্যাপার। একটা গ্রামের ছেলের সঙ্গে শহরের ভালো স্কুলের ছেলের মধ্যে মেধার কোনো পার্থক্য নেই। পার্থক্য হল কেবলই সুযোগ-সুবিধার। তাই এ মেধাবীদের সামনে এগিয়ে নিতে গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক মানোন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

সরকার এরইমধ্যে গতবারের মতো একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির সময়সূচি ও প্রক্রিয়া নির্ধারণ করেছে। ৩০ জুনের মধ্যে ভর্তি শেষ করে ১ জুলাই শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে। এবারও কলেজের সব আসনে মেধার ভিত্তিতে ভর্তি করা হবে। কোটার শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হবে বাড়তি আসনে। তিনটি ধাপে নেয়া হবে আবেদন। প্রথম ধাপে আবেদন করা যাবে ২৩ মে পর্যন্ত। এই পর্যায়ে আবেদনকারীদের ফল প্রকাশ করা হবে ১০ জুন। দ্বিতীয় ধাপে আবেদন করা যাবে ১৯ ও ২০ জুন। ২১ জুনই এদের আবেদনের ফল প্রকাশ করা হবে। তৃতীয় ধাপে আবেদন নেয়া হবে ২৪ জুন। ফল প্রকাশ করা হবে ২৫ জুন। ২৭ থেকে ৩০ জুন শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত কলেজে ভর্তি হতে হবে। অনলাইনে সর্বনিম্ন ৫টি এবং সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ বা মাদ্রাসায় আবেদন করা যাবে। তবে এসএমএস এবং অনলাইন মিলিয়ে কোনো শিক্ষার্থী ১০টির বেশি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবে না।

৮টি সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এবারের প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, গত বারের চেয়ে এবার পাসের হার বেড়েছে ৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এ বছর পাসের হার ৮২ দশমিক ২ শতাংশ। মোট উত্তীর্ণ ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ১৬৫ জন।

উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি সংক্রান্ত কমিটির তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সাড়ে ৮ হাজারের মতো কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে প্রায় ৩০ লাখ। যার মধ্যে মানসম্মত কলেজের সংখ্যা মাত্র পৌনে দু’শ। এসব কলেজে আসন সংখ্যা ৫০ হাজারের কিছু বেশি। অথচ এবার ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৪ হাজার ৫৫৬ জন। মাদ্রাসা বোর্ড থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬ হাজার ২৮৭ জন এবং কারিগরি বোর্ড থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৭৫১ জন। সর্বমোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ জন। মাদ্রাসা বোর্ডের অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী এবং কারিগরির বড় একটি অংশ উচ্চ মাধ্যমিকে সাধারণ বোর্ডের অধীনে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়। ফলে কলেজগুলোতে ৮ সাধারণ বোর্ডের বাইরেও ৫ হাজারের বেশি আবেদন পড়তে পারে। এর ফলে প্রথম সারির কলেজগুলোতে জিপিএ-৫ পেয়েও প্রায় অর্ধলাখেরও বেশি শিক্ষার্থী এতে ভর্তির সুযোগ পাবে না।

গত কয়েক বছরে অনলাইনে যেসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন বেশি পড়েছে সেই হিসাবে মানসম্মত প্রতিষ্ঠান রয়েছে ঢাকা বিভাগে ৭৫টি, রংপুর বিভাগে রয়েছে ৩২টি, বরিশাল বিভাগে ১৪টি, রাজশাহী বিভাগে ৭টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৯টি, খুলনা বিভাগে ১৩টি এবং সিলেট বিভাগে ২৩টি। এসব কলেজে স্ব স্ব বিভাগের জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা ভিড় করলে সবার সংস্থান হবে না। এর বাইরে সংশ্লিষ্ট এলাকার সাধারণ ৮ শিক্ষা বোর্ডের বাইরের অন্য দুই শিক্ষা বোর্ড থেকে শিক্ষার্থীরা ভর্তির আবেদন করবেন।

রাজধানী ঢাকাতে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনার জন্য আসন রয়েছে ৪৫ হাজারের মতো। এর মধ্যে ভালো মানের ২০-২২টি কলেজে আসন রয়েছে ২১ হাজারের বেশি। বিপরীত দিকে ঢাকা বোর্ডেই এবার পাস করেছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৪৭৮ জন। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৯ হাজার ৬৮৭ জন। আবার জিপিএ-৪ থেকে ৫-এর মধ্যে পেয়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৯৯ জন। সেই হিসাবে ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীদের রাজধানীর প্রতিষ্ঠানসমূহে ভর্তির সুযোগ কতটা থাকবে, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। ফলে ভালো ফলাফলের পর উচ্চ মাধ্যমিকে রাজধানীতে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি থাকবে। একই ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে মাদ্রাসা বোর্ড থেকে পাস করার শিক্ষার্থীদের জন্যও। সব শিক্ষার্থীর ভর্তির জন্য পর্যাপ্ত আসন থাকলেও প্রথম সারির প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির সুযোগ পাবে না সবাই।

এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক যুগান্তরকে বলেন, গ্রামের প্রতিষ্ঠানগুলোতে দক্ষ শিক্ষকের অভাব, বিশেষ করে ইংরেজি ও বিজ্ঞান বিষয়ে ভালো শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীরা শহরের ভালো প্রতিষ্ঠানমুখী হয়। ফলে শহরের মানসম্মত প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য ভিড় বাড়ে। তবে এটা সার্বিক চিত্র নয়। তিনি আরও বলেন, উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির জন্য পর্যাপ্ত আসন রয়েছে। গ্রামের অনেক প্রতিষ্ঠানে আসন খালি থাকে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/174740