১৩ জানুয়ারি ২০১৮, শনিবার, ৪:০৩

প্রধানমন্ত্রী সরকারের উন্নয়নের যে সাফাই গেয়েছেন তার কোন গ্রহণযোগ্য ভিত্তি নেই

‘নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকার’ ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে দেশবাসী হতাশ হয়েছে

ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২ জানুয়ারী সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে যে ভাষণ দিয়েছেন, তাতে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান আজ ১৩ জানুয়ারী প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২ জানুয়ারী জাতির উদ্দেশ্যে যে ভাষণ দিয়েছেন, তাতে জনগণের দাবী ‘নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকার’ ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে তার সরকারকে নির্বাচনকালীন সরকার আখ্যা দিয়ে সে সরকারের অধীনে নির্বাচন করার কথা বলায় দেশের জনগণ হতাশ হয়েছে। তার এ বক্তব্য দেশবাসীর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়।

দেশের জনগণের দাবী হলো নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ ধরনের নির্বাচন ছাড়া তা দেশে-বিদেশে কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচনসহ বর্তমান সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনগুলোই প্রমাণ করছে যে, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের কোন বিকল্প নেই।

নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের দাবী পাশ কাটিয়ে যাওয়ার অর্থই হলো যে, বর্তমান সরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় না। তারা যে কোন মূল্যে ক্ষমতায় থেকে ব্যালট ডাকাতির প্রহসনের নির্বাচন চায়। তাদের এক তরফা নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র দেশের জনগণ কখনো মেনে নিবে না। গায়ের জোরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে আলোপ-আলোচনার মাধ্যমেই করতে হবে। আলাপ-আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করা হবে- এটার জন্যই জনগণ অপেক্ষা করছে। আশা করি জনগণের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে সরকার শুভ বুদ্ধির পরিচয় দেবেন।

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের উন্নয়নের যে সাফাই গেয়েছেন তার কোন গ্রহণযোগ্য ভিত্তি নেই। দেশের শিল্প কারখানায় উৎপাদন কমে গিয়েছে। প্রায় ১৫ শত পোশাক শিল্প বন্ধ হয়ে গিয়েছে এবং এছাড়াও বহু কল-কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বৈদেশিক আয় অনেক কমে গিয়েছে। অর্থনৈতিক বিনিয়োগ কমে গিয়েছে। ঘুষ, দুর্নীতি ও সরকারী দলের সন্ত্রাস এবং লুটপাট চলছে ব্যাপকভাবে। সরকারী ও বেসরকারী ব্যাংকগুলোতে সরকারী দলের লোকদের লুটপাট চলছে।

১২/১৩ বছর পূর্বে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে অর্থনেতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.৪ শতাংশ। অথচ চলতি অর্থ বছরেও প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৬.৪ শতাংশ। এতেই প্রমাণিত হয় যে, বর্তমান সরকারের আমলে দেশের কোন অগ্রগতি হয়নি। বরং আরো পিছিয়ে গিয়েছে। দেশের মানুষের জানমালের কোন নিরাপত্তা নেই। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে যে, ২০১৭ সালে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে ৮৬ জন মানুষকে গুম করা হয়েছে এবং বিচার বর্হিভূত হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে ১৫৪ জন মানুষ। এ সব তথ্য থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের বর্ণনা যথার্থ নয়। যেখানে মানুষের জনমালের কোন নিরাপত্তা নেই, সেখানে উন্নয়নের ফিরিস্তি বর্ণনা বেমানান।

তাই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জোর করে ক্ষমতায় থাকার ষড়যন্ত্র বন্ধ করে নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে এগারতম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আমি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”