১৮ জুলাই ২০১৬, সোমবার, ৩:১৭

প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ঐক্যের পরিবর্তে দোষারোপের রাজনীতি করে জাতিকে বিভক্তির দিকেই ঠেলে দিয়েছেন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৭ জুলাই বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে “দেশে ইতোমধ্যেই জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়ে গেছে” মর্মে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আজ ১৮ জুলাই প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডা: শফিকুর রহমান বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির পরিবর্তে দোষারোপের রাজনীতি করে জাতিকে বিভক্তির দিকেই ঠেলে দিয়েছেন।

দেশ-বিদেশের সচেতন মানুষ ও বুদ্ধিজীবীগণ এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যে মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেয়ার আহবান জানানো হচ্ছে ঠিক সেই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর এহেন বক্তব্য জাতিকে হতাশ ও হতবাক করেছে। সেই সাথে আমরাও হতবাক হয়েছি। তার এ বক্তব্য অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘জাতীয় ঐক্য ইতোমধ্যেই সৃষ্টি হয়েছে।’

জাতীয় ঐক্য বলতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোটের কথা যদি প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে থাকেন, তাহলে তার বক্তব্য ঠিক আছে। কিন্তু একজন সাধারণ মানুষও বুঝতে পারে যে, এর নাম জাতীয় ঐক্য নয়। প্রধানমন্ত্রী যদি দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে রাজনৈতিক দলসমূহসহ সকল শ্রেণি-পেশার লোকদের উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিতেন, তাহলে তা জাতীয় ঐক্য হত। কিন্তু তার পক্ষ থেকে সকলের প্রতি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানানো তো দূরে থাক, এখানেও তিনি দোষারোপের রাজনীতি করেছেন।

সন্ত্রাস যেখানে আজকে জাতীয় দুর্যোগের রূপ ধারণ করেছে, দেশের কোন নাগরিক যেখানে স্বস্তিতে নেই, গোটা জাতি যেখানে আতঙ্কগ্রস্ত, সেখানে প্রধানমন্ত্রী সরকারী দল, বিরোধী দল নির্বিশেষে জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিবর্গসহ গোটা জাতির দাবি এবং প্রত্যাশাকে উপেক্ষা করে কার্যতঃ জাতিকে ভয়াবহ অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। জঙ্গি দমনের নামে বহুলাংশে নাটকীয়তা সৃষ্টি করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকে অব্যাহতভাবে খুন করা হচ্ছে। অনেকেই গুম হয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকের ওপর সীমাহীন অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে বিভিন্ন ঘটনার দায় স্বীকার করার জন্য মিথ্যা জবানবন্দী আদায় করা হচ্ছে। এ সমস্ত কার্যক্রম প্রকারান্তরে জঙ্গি এবং সন্ত্রাসীদেরকেই আড়াল করা এবং আস্কারা দেয়ার শামিল। সন্ত্রাসের এ দুর্যোগ থেকে জাতিকে মুক্ত করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ দেয়ার জন্য দলীয় একচোখা রাজনীতির বৃত্ত থেকে প্রধানমন্ত্রীকে বেরিয়ে আসতেই হবে।

আমরা তাই মনে করি, প্রধানমন্ত্রী ‘জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়ে গেছে’ বলে যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা একেবারেই অন্যায্য ও অর্থহীন। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে আবারও অনুরোধ করবো, দলীয় দৃষ্টি ভঙ্গির ঊর্দ্ধে উঠে এবং দোষারোপের রাজনীতি থেকে বের হয়ে এসে কার্যকর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য সরকারী দল, বিরোধী দল নির্বিশেষে চিন্তাশীল, বিবেকবান এবং সকল পর্যায়ের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দসহ সকলকে ঐক্যবদ্ধ করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।”