আজ ১৯ জুলাই ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক রচিত এবং প্রচারিত “সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে ইসলাম” শীর্ষক একটি ভাষ্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক রচিত ও প্রচারিত ভাষ্যটির যে শিরোনাম দেয়া হয়েছে তার সাথে মূল ভাষ্যের কোন সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় না। বরং ভাষ্যটি জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি প্রচার পত্রে পরিণত হয়েছে। এ ভাষ্যে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সম্পর্কে যে সব বক্তব্য ও মন্তব্য করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়।
আমি স্পষ্ট ভাষায় জানাতে চাই যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির সম্পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক পন্থায় এ দেশে রাজনীতি করছে। ছাত্রশিবিরের দাওয়াতি কাজে সাড়া দিয়ে লক্ষ লক্ষ ছাত্র আলোর পথের সন্ধান পেয়ে তাদের জীবনকে ইসলামের আলোকে গড়ে তুলেছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবির নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় ছাত্রদের মাঝে দাওয়াতি কাজ করছে। ছাত্রশিবিরের অনুপম চরিত্রে আকৃষ্ট হয়ে সাধারণ ছাত্ররা দলে দলে এ সংগঠনের পতাকা তলে সমবেত হচ্ছে। ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, চরমপন্থার অভিযোগ যারা উত্থাপন করেন, মূলতঃ তারাই বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে জঙ্গিবাদের মদদদাতার ভূমিকা পালন করছেন।
জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথে কোন সন্ত্রাসী জঙ্গি সংগঠনের সম্পর্ক নেই। জেএমবি, হিজবুত তাহরীর, আনসার উল্লাহ বাংলা টীমসহ কোন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্ক থাকার প্রশ্নই আসে না। কাজেই জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের দ্বারা উপরোল্লিখিত সংগঠনগুলো নিয়ন্ত্রিত হওয়ার প্রশ্ন অযৌক্তিক, অবান্তর ও কল্পনাপ্রসূত। প্রকৃত পক্ষে দেশের কোথাও কিছু ঘটলে জামায়াতের ঘাড়ে দোষ চাপানো এসব জ্ঞান পাপীদের একটি দূরারোগ্য ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে প্রচার করতে গিয়ে তাদের ভাষ্যে ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা, অর্থব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, শিক্ষা-সংস্কৃতি, ব্যাংক-বীমা ব্যবস্থাসহ সব কিছুকেই সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে ইসলামের মূলোৎপাটনের ষড়যন্ত্র করেছেন। মূলত: তারা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থা ও ইহুদীদের উদ্ভাবিত পূঁজিবাদী অর্থনীতির পক্ষেই সাফাই গেয়েছেন। ইসলামের দুশমনদের খুশী করার উদ্দেশ্যেই যে তারা এ ভাষ্যটি রচনা ও প্রচার করেছেন তা যে কেউ ভাষ্যটি পাঠ করলেই বুঝতে পারবেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের খুৎবা যেভাবে এ দেশের আলেম সমাজ প্রত্যাখ্যান করেছেন, এই ভাষ্যটিও জনগণ সেভাবেই প্রত্যাখ্যান করবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভাষ্যে ‘মোনাফিক চক্র’ আখ্যায়িত করে যে ফতুয়াবাজি করা হয়েছে তা বাংলাদেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষ মানে না এবং এ দেশের জনগণ তা প্রত্যাখ্যান করছে। সরকারী প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে যে রাজনীতি করা হচ্ছে এর এখতিয়ার জনগণ কাউকে দেয়নি। এদের বিকৃত চরিত্র ও মানসিকতা বারবারই জনগণের সম্মুখে প্রকাশিত হয়েছে। দেশের জনগণ এদের সম্পর্কে ভালভাবেই জানেন। সুতরাং তাদের মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্যে দেশবাসী বিভ্রান্ত হবেন না বলে আমরা আশা করি।
তারা রাসূল (সাঃ) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা ও খোলাফায়ে রাশেদীনের রাষ্ট্রব্যবস্থাকেই অস্বীকার করেছেন। ইসলাম যে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা- তা তারা সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করেছেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে রচিত ও প্রচারিত ভাষ্যটি মূলতঃ ইসলামের বিরুদ্ধে একটি গভীর ষড়যন্ত্রেরই ফসল। এ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়া দেশের সকল আলেম-ওলামা, পীর মাশায়েখসহ সকল ধর্মপ্রাণ মানুষের পবিত্র কর্তব্য। আলেম নামধারী কতিপয় ইসলাম বিদ্বেষী বিভ্রান্ত লোকের খপ্পর থেকে ইসলামকে উদ্ধারের জন্য দেশের সকল আলেম সমাজ, পীর-মাশায়েখ এবং ধর্মপ্রাণ জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।”