ফারাক্কা বাঁধের সমস্যার ন্যায়সংগত সমাধানের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডা: শফিকুর রহমান আজ ২৮ আগস্ট প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “ভারতের ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের জীবন-মরণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সমস্যার ন্যায় সংগত ও আশু সমাধানই বাংলাদেশের জনগণের প্রাণের দাবী।
গংগার পানির ন্যায্যহিস্যা থেকে বাংলাদেশের জনগণকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যেই ভারত এক তরফাভাবে গংগানদীর উপর ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করেছে। বাংলাদেশের প্রথম সরকারের অনুমতিক্রমে ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত মাত্র ৪১ দিনের জন্য ভারত সরকার পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কা বাঁধটি চালু করেছিল। তখনো বাংলাদেশের জনগণ ফারাক্কা বাঁধের সম্ভাব্য ধ্বংসাত্মক প্রভাব উপলব্ধি করে তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল। জননেতা মরহুম মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ফারাক্কা বাঁধের প্রতিবাদে ফারাক্কা বাঁধ অভিমুখে ঐতিহাসিক লংমার্চ করেছিলেন। কিন্তু ৪১ দিনের স্থলে ৪১ বছর অতিক্রান্ত হলেও ভারতের ওয়াদাকৃত ৪১ দিনের মেয়াদ এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি! ফারাক্কা বাঁধের বিরুপ প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় এক তৃতীয়াংশ ভূ-খন্ড বর্তমানে মরুভূমিতে পরিণত হতে যাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে ভূ-গর্ভস্থ পানির উচ্চতা নীচে নেমে যায়। টিউবওয়েলে ৪/৫টি পাইপ বসিয়েও পানি পাওয়া যায় না। ফলে পানির অভাবে গাছ-পালা ও জমির ফসল মরে যাচ্ছে। ভূ-গর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা বেড়ে গিয়ে বহু লোক অসুস্থ হয়ে মারা যাচ্ছে, জীব-বৈচিত্র হারিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে ফারাক্কা বাঁধের সকল গেট খুলে দেয়ার কারণে প্রায় গোটা বাংলাদেশ বন্যার পানিতে ডুবে যাচ্ছে। ফলে অসংখ্য মানুষ ঘর-বাড়ী, জমির ফসল হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে যাচ্ছে। বন্যায় গবাদী পশু ও গৃহপালিত হাঁস-মুরগির ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হচ্ছে। নদীর ভাংগনে বহু ঘর-বাড়ী নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বন্যায় বাংলাদেশের হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।
ফারাক্কার বিরুপ প্রভাবে শুধু বাংলাদেশই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না,ভারতের কয়েকটি রাজ্যও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এখন খোদ ভারত থেকেই ফারাক্কা বাঁধ ভেংগে দেয়ার জোরালো দাবী উঠছে। ভারতের কয়েকটি রাজ্যকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ভারত সরকার মাত্র কয়েকদিন পূর্বে ফারাক্কা বাঁধের সব কটি গেট খুলে দেয়ায় বাংলাদেশের পদ্মা নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ইতোমধ্যেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা শুরু হয়েছে।
তাই বাংলাদেশের জনগণ ফারাক্কা বাঁধের সমস্যার একটি ন্যায়সংগত সমাধান চায়। কোন রকমের পক্ষপাতিত্ব, স্বার্থপরতা ও গোঁজামিলের আশ্রয় না নিয়ে উদারভাবে খোলা মন নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারের সাথে একত্রে বসে বাংলাদেশের জনগণের এই জীবন-মরণ সমস্যার আশু ও ন্যায়সংগত সমাধানের পদক্ষেপ নিবে-এটাই বাংলাদেশের জনগণ দেখতে চায়।”