৯ মে ২০২৩, মঙ্গলবার, ১০:৩৩

শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর অবদানকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ

শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছেন

-অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলেমে দ্বীন, সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর অবদানকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ৯ মে নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, “শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বাংলাদেশের জনগণের নিকট অতি পরিচিত একটি নাম, একজন আলেমে দ্বীন ও ইসলামী চিন্তাবিদ। সততা, যোগ্যতা, উদারতা, বিনয় ও নম্রতা তাঁকে অনন্য মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। নিজের যোগ্যতা বলে বাল্যকাল থেকেই তিনি তাঁর সমসাময়িক প্রতিটি স্তরে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি তাঁর ছাত্র জীবনের শুরু থেকে ইসলামী আদর্শ প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন। ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় তিনি নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। বাংলাদেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায় বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তিনি জোরালো ভূমিকা পালন করেন।

তিনি তাঁর নিজ এলাকা থেকে ১৯৯১ ও ২০০১ সালে বিপুল ভোটে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জাতীয় সংসদে তাঁর গঠনমূলক ভূমিকা জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। বিভিন্ন ইস্যুতে জাতীয় সংসদে তাঁর বক্তব্য ছিল দিক-নির্দেশনামূলক। ইসলামী শিক্ষার প্রসারে তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। কওমী মাদ্রাসার শিক্ষাকে সরকারি স্বীকৃতি দেয়ার জন্য তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।

তিনি সততা, যোগ্যতা, দক্ষতার সাথে কৃষি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় শিল্পখাত একটি লাভজনক খাতে পরিণত হয়।

আন্তর্জাতিক অঙ্গণে তাঁর ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা ছিল। ২০০৬ সালে জর্ডান থেকে প্রকাশিত একটি তালিকায় বিশ্বের প্রভাবশালী ৫০০ জনের মধ্যে মাওলানা নিজামীকে তালিকাভূক্ত করা হয়। ২০০৯ সালে এক জরিপে তিনি বিশ্বের প্রভাবশালী ৫০ জন মুসলমানের অন্যতম বলে বিবেচিত হন।
তিনি অনেকগুলো মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন- যা মানুষের আত্মগঠন, পরিবার ও সমাজ গঠনে আলোর দিশা দিবে। দেশে-বিদেশে অসংখ্য সেমিনার, সভা ও সমাবেশে তাঁর দাওয়াতী বক্তব্য মানুষের চিন্তার জগতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। তাঁকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। ২০১৬ সালের ১০ মে দিবাগত রাত ১২টা ১০ মিনিটে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

আমি গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে সাবেক আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর অবদানকে স্মরণ করছি। মহান আল্লাহ তাআলার নিকট দোয়া করছি মহান রাব্বুল আলামীন তাঁর শাহাদাতকে কবুল করুন এবং তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউসে উচ্চ মর্যাদায় আসীন করুন।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সর্বদাই অন্যায়, অসত্য, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপোষহীন ভূমিকা পালন করে আসছে। মানুষের ন্যায্য ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জামায়াত সূচনালগ্ন থেকে সংগ্রাম করে আসছে। আর সে কারণেই জামায়াত নেতৃবৃন্দকে সরকারি ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়েছে। আমাদের নেতৃবৃন্দ সরকারের চক্রান্তের কাছে মাথা নত করেননি। সেদিন যদি সম্মিলিতভাবে সরকারের এ যড়যন্ত্রের মোকাবেলা করা হতো তাহলে জাতিকে আজকের এ করুন চিত্র দেখতে হতো না।

মানুষের ন্যায্য ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করে শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর অসমাপ্ত কাজ আঞ্জাম দেয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে আসার জন্য আমি দেশবাসীর প্রতি আহবান জানাচ্ছি।”