দশই মহররম পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর জনাব মকবুল আহমাদ আজ ৯ সেপ্টেম্বর প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “সারা বিশ্বের মুলমানদের কাছে পবিত্র আশুরার দিনটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময়। মহান আল্লাহ এই দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং এই দিনেই পৃথিবী ধ্বংস হবে। আশুরার দিন আল্লাহ পৃথিবীর প্রথম মানব হযরত আদম (আ:)-কে সৃষ্টি করেছেন। এই দিন হযরত নূহ (আ:)-এর আমলের প্লাবন শেষ হয় এবং নূহ (আ:)-এর জাহাজ তুরস্কের ‘জুদি’ নামক পর্বতে গিয়ে থামে। আশুরার দিন হযরত ইব্রাহিম (আ:) জালিম বাদশাহ নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে নিরাপদে মুক্তি পেয়েছিলেন। এই দিন হযরত ইউনুস (আ:) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। আশুরার দিনে হযরত আইয়ুব (আ:) দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। এই দিন আল্লাহ জালিম বাদশা ফিরাউনকে দল-বলসহ পানিতে ডুবিয়ে মেরেছেন এবং মুসা (আ:) ও তাঁর অনুসারীরা ফেরাউনের হাত থেকে নাজাত লাভ করেছেন। আশুরার দিন হযরত সুলাইমান (আ:) তাঁর হারানো রাজত্ব ফিরে পান। এই দিনে হযরত ইয়াকুব (আ:) হারানো ছেলে হযরত ইউসুফ (আ:)-কে ফিরে পেয়েছিলেন। এই দিনে হযরত ঈসা (আ:) জন্মগ্রমণ করেন এবং এই দিনেই তাঁকে দুনিয়া থেকে আকাশে উঠিয়ে নেওয়া হয়।
দশই মহররম কারবালা প্রান্তরে বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হোসাইন (রাঃ)-এর শাহাদাতের ঘটনা মুসলিম জাতির ইতিহাসে একটি অতীব গুরুত্ব স্মরণীয় ঘটনা। এই ঘটনার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। আজও মুসলিম উম্মাহ অত্যন্ত ব্যথিত হৃদয় কারবালার ঘটনা স্মরণ করে চোখের জ্বলে বুক ভাসায়।
হযরত হোসাইন (রাঃ) অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে গিয়ে সেদিন কারবালা প্রান্তরে পরিবার-পরিজন নিয়ে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। রাসূল (সা:) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা এবং তাঁর চার খলিফা কর্তৃক প্রবর্তিত খেলাফতী শাসন ব্যবস্থা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য তিনি শাহাদাত বরণ করেছেন। ইসলামী খেলাফতের ব্যাপারে কোন ধরনের আপোষ না করার কারণেই কারবালার ঘটনা ঘটেছিল। কারবালার ঘটনা আমাদেরকে অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে আপোষহীনভাবে সংগ্রাম করার কথাই শিক্ষা দেয়।
আজকে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই যে, শোষণ, জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন চলছে তা থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়ার জন্য আপোষহীনভাবে সংগ্রাম করার কথাই দশই মহররমের ঘটনা আমাদেরকে শিক্ষা দেয়। কারবালার ঘটনা থেকে শিক্ষা লাভ করে সেই সংগ্রামী চেতনা ধারণ করে আমরা যদি অন্যায়, অসত্য, শোষণ, জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়ন ও অগণতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তুলতে পারি তাহলেই মুহররমের আলোচনা স্বার্থক হবে এবং হযরত হোসাইন (রা:)-এর শাহাদাতের প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করা হবে।”